News update
  • US to Deport Undocumented Bangladeshi Immigrants     |     
  • UN: Cooling La Nina to be 'Short-lived'     |     
  • Island Nation Sells Citizenship to Fund Climate Action     |     
  • Elections Possible Between Dec 2025 and Mar 2026: CA     |     
  • BRI’s corridor impacts strategic concern for BD: Moyeen Khan     |     

মস্তিষ্কের ছোট্ট 'নীল বিন্দু' যা ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে

বিবিসি নিউজ স্বাস্থ্য 2025-03-05, 11:35am

rwewq-9a86e53d874913297c30977d6a28af6f1741152944.jpg




মনোযোগ এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ন্ত্রণকারী লোকাস সেরুলিয়াস ক্রমশ গবেষণার আগ্রহের বিষয়বস্তু হয়ে উঠছে।

এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে ঘুম আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অনিদ্রায় আক্রান্ত যে কোনও ব্যক্তিই জানেন, ঘুম না আসা কীভাবে ধৈর্যচ্যুতি এবং বিরক্তি বয়ে আনতে পারে। মাথার ভিতরে যেন একটা অদৃশ্য আলো জ্বলতে থাকে। নিজের ভিতরেই ক্রমাগত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে একটা কণ্ঠস্বর। এই দু'টোকে নিয়ন্ত্রণ করার যে নিঃশব্দ চেষ্টা, তার সঙ্গেও অনিদ্রার সঙ্গে যোঝা ব্যক্তিরা পরিচিত বৈকি।

তারা প্রতি নিয়ত মস্তিষ্কের সেই 'বোতাম' বা 'সুইচ' খুঁজে চলেন যেটা টিপলেই মস্তিষ্কের সমস্ত ক্রিয়াকলাপকে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া যায়।

মস্তিষ্কের এমন এক 'সুইচ' বাস্তবে কল্পনা বলে মনে হলেও তেমনটা কিন্তু নয়। বেশিরভাগ স্নায়ুবিজ্ঞানীই এখন এই বিষয়ে একমত যে মস্তিষ্কের সজাগ থাকার মধ্যে এক ধরনের ধারাবাহিকতা রয়েছে। এই সমন্বয় স্থাপন হয় মস্তিষ্কের জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, যার কেন্দ্রস্থলে নিউরোনের একটা ক্ষুদ্র বান্ডিল রয়েছে। তার নাম- লোকাস সেরুলিয়াস। এই ল্যাটিন শব্দের অর্থ 'নীল বিন্দু'।

লোকাস সেরুলিয়াসস্থিত নিউরোনগুলোর ওই রঙের কারণ নোরপাইনফ্রাইন নামে একটা নির্দিষ্ট নিউরোট্রান্সমিটার।

এই নীল বিন্ধুর আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতার রয়েছে- নোরপাইনফ্রাইন আমাদের শারীরবৃত্তীয় এবং মানসিক উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

দীর্ঘকাল ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে ঘুমের সময় লোকাস সেরুলিয়াস শান্ত বা সুপ্ত থাকে। তবে এখন এই বিষয়টা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে এটা কখনওই পুরোপুরি শান্ত হয় না। এই নীল বিন্দুর বিরতিহীন ক্রিয়াকলাপ চলতেই থাকে। কখনও কখনও নিম্ন স্তরের ক্রিয়াকলাপের মাঝেই আমাদের ঘুমের গভীরতাকে নিয়ন্ত্রণ করে লোকাস সেরুলিয়াস।

এই প্রক্রিয়া আরও ভালভাবে বোঝা গেলে উদ্বেগজনিত পরিস্থিতির সঙ্গে ঘুমের (ঘুম না আসার) যে সম্পর্ক রয়েছে, তার চিকিৎসায় সাহায্য মিলতে পারে।

মস্তিষ্কের গিয়ার সিস্টেম

ঘাড়ের ঠিক উপরে, মস্তিষ্কের স্টেমে অবস্থিত লোকাস সেরুলিয়াস। এতে ৫০ হাজার কোষ রয়েছে যা গড় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে থাকা ৮৬০০ কোটি নিউরোনের একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।

মারি অ্যান্টোয়নেটের চিকিৎসক ফিলিক্স ভিক দিয়াজর ১৮'শ শতাব্দীর শেষের দিকে এর অস্তিত্বের কথা প্রথম উল্লেখ করেছিলেন। তবে তারপর এই বিষয়টা দীর্ঘকাল ধরে সেভাবে কারও মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

বিংশ শতাব্দীতে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে লোকাস সেরুলিয়াস মস্তিষ্কের সংকেত পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

কোনও নিউরোন বৈদ্যুতিক প্রবাহের মতো উত্তেজনার 'স্পাইক' বা তীব্রতা সৃষ্টি করবে কি না তার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে নোরপাইনফ্রাইন। এটা নরড্রেনালাইন নামেও পরিচিত।

সক্রিয় হয়ে উঠলে লোকাস সেরুলিয়াসের কোষগুলো এই মস্তিষ্কের অন্যান্য প্রান্তে সংকেত পাঠিয়ে সেই অঞ্চলে থাকা নিউরনগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে তোলে।

এই প্রক্রিয়ার সূক্ষ্মতা রয়েছে। 'রিসেপ্টর'-এর উপর নির্ভর করে কিছু নিউরোন অল্প পরিমাণে নোরপাইনফ্রিনের প্রতি বেশ সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। আবার এমন অনেক নিউরোন রয়েছে যারা শুধুমাত্র উচ্চতর মাত্রায় সাড়া দেয়।

এর অর্থ হলো ক্রিয়াকলাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকাস সেরুলিয়া মস্তিষ্কের কিছু অঞ্চলকে অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে বেশি প্রভাবিত করতে শুরু করবে। মানুষের মধ্যে এর একটা নাটকীয় প্রভাব দেখা যায় যেমন কোনও বিষয়ে মনোনিবেশ করা, একাগ্রতা এবং সৃজনশীলতা।

স্নায়ুবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক এবং লেখিকা মিথু স্টোরোনি তার বই 'হাইপারএফিসিয়েন্ট: অপ্টিমাইজ ইওর ব্রেন টু ট্রান্সফর্ম দ্য ওয়ে ইউ ওয়ার্ক'-এই নিয়ে বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন।

লোকাস সেরুলিয়াস এবং নোরপাইনফ্রাইন সিগন্যালিংয়ে তার (লোকাস সেরুলিয়াসের) নিয়ন্ত্রণকে মস্তিষ্কের 'গিয়ারবক্স' হিসাবে বর্ণনা করেছেন তিনি। তার মতে ওই 'গিয়ারবক্সের' বিভিন্ন মোড রয়েছে যা নির্দিষ্ট ধরণের ক্রিয়াকলাপের জন্য উপযুক্ত।

গিয়ার ১: এক্ষেত্রে নীল বিন্দুতে খুবই মৃদু কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে নোরপাইনফ্রাইন নিম্ন স্তরের। এর অর্থ হলো এই সময়ে আমাদের মনোযোগ এদিক ওদিক হয় এবং চিন্তাও এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে ঘোরাফেরা করে।

গিয়ার ২: নীল বিন্দুতে মাঝারি ধরনের উদ্দীপনার (অনেকটা স্ফুলিঙ্গের মতো) সঞ্চার হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে মাঝে মাঝে উদ্দেপনায় 'স্পাইক' বা তীব্রতা দেখা যায়।

নোরপাইনফ্রিনের এই পরিমাণ ঘনত্বের প্রতি সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ হলো প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স। এটা মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবের পূর্ববর্তী অংশের ধূসর পদার্থ যা স্ব-নিয়ন্ত্রণ এবং বিমূর্ত চিন্তাভাবনার সাথে সম্পর্কিত। এই অবস্থায় যে সমস্ত কাজের জন্য বুদ্ধির প্রয়োজন সেই সমস্ত কাজে মনোনিবেশ করা সহজ বলে মনে করা হয়।

গিয়ার ৩: এই ক্ষেত্রে লোকাস সেরুলিয়াসে ক্রমাগত 'উচ্চ উদ্দীপনা' বা 'হাই ফায়ারিং' দেখা যায়। এর ফলে উচ্চ স্তরের নোরপাইনফ্রাইন ক্ষরণ হয়।

এই অবস্থায় মস্তিষ্কের সেই অঞ্চল সক্রিয় হয়ে ওঠে যে অংশের সঙ্গে 'ফাইট অর বা ফ্লাইট রেসপন্সের' (বিপদের মুখোমুখি হওয়ার মতো অত্যন্ত উত্তেজক পরিস্থিতিতে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়) সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এই সময় প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স বন্ধ হতে শুরু করে।

কিন্তু নিউরোনের মধ্যে বর্ধিত যোগাযোগের কারণে আপনি আপনার আশপাশের পরিবেশের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারেন। তবে গোলযোগের পরিস্থিতি থেকে এই সংকেতকে পৃথক করা শক্ত কাজ হতে পারে। এক্ষেত্রে মনোনিবেশ করা আরও শক্ত হয়ে যায় এবং আপনি অভিভূত বোধ করতে পারেন।

বিভিন্ন গিয়ারে থাকার ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করে একাধিক বিষয়। যেমন আমরা দিনের কোন সময়ে রয়েছি। এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে লোকাস সেরুলিয়াসের সক্রিয়তা কমে বা বাড়ে।

যেমন আমরা যখন প্রথমে ঘুম থেকে উঠি তখন এর সক্রিয়তা কম থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয়তা বাড়ে এবং সন্ধ্যায় আবার তা কমতে শুরু করে।

রাতের নজরদারি

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে রাতে ঘুমানোর সময় এই ছোট্ট নীল বিন্দু সবচেয়ে শান্ত অবস্থায় থাকবে। কিন্তু লোকাস সেরুলিয়াস যে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়, তা নয়। বিক্ষিপ্তভাবে উদ্দীপনার স্ফুলিঙ্গ চলতেই থাকে।

সুইজারল্যান্ডের লুসান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিতা লুথির সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, লোকাস সেরুলিয়াসের এই সক্রিয়তা আমাদের ঘুমের গুণমান নির্ধারণ করতে পারে।

সারা রাত জুড়ে, ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাই। এর মধ্যে রয়েছে 'র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ'(যে সময় চোখের তারার ঘোরাফেরা লক্ষ্য করা যায়) বা আরইএম স্লিপ।

এই পর্যায়ের সঙ্গে স্বপ্ন দেখার সম্পর্ক রয়েছে এবং স্মৃতির প্রক্রিয়াকরণ এবং একত্রিত করার ক্ষেত্রে এর বেশ গুরুত্ব রয়েছে।

আমাদের বিশ্রামের বেশিরভাগ অংশই অবশ্য নন-আরইএম (এনআরইএম) ঘুমে ব্যয় হয়। এই সময়ে মস্তিষ্ক থেকে সেলুলার বর্জ্য পরিষ্কার করার কাজ চলে। এই বর্জ্য জমা হতে থাকলে তা নিউরোনের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

ঘুমন্ত ইঁদুরের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করে, অনিতা লুথি দেখেছেন যে এনআরইএম পর্যায়ের ঘুমের প্রতি ৫০ সেকেন্ডে লোকাস সেরুলিয়াস অস্থায়ী ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

এই অবস্থা থ্যালামিকে গ্যালভানাইজ করে বলে মনে হয়েছিল। এটা একজোড়া ডিম্বাকৃতি অঞ্চল যা মস্তিষ্কের মাঝখানে থাকে। এই অঞ্চল সংবেদনশীল প্রক্রিয়াজাতকরণে সঙ্গে যুক্ত।

এর ফলে কোনও প্রাণী বাইরের উদ্দীপনার প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে কিন্তু পুরোপুরি জেগে ওঠে না।

অনিতা লুথির কথায়, "এটা বর্ধিত সতর্কতার এই অবস্থা তৈরি করে। এ থেকে এই ধারণা পাওয়া যায় যে মস্তিষ্কে জাগ্রত অবস্থার ক্রমবিভাজন করা যেতে পারে।"

তিনি মনে করেন বনে লড়াই করে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণীর মধ্যে এই বর্ধিত সতর্কতা থাকা অপরিহার্য। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, "মৌলিকভাবে ঘুম ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই প্রক্রিয়া এমন অবস্থার পরিপূরক যা কিছুটা হলেও জাগ্রত থাকার অনুমতিও দেয়। কারণ, পরিবেশের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল থাকতে হবে।"

আরইএম ঘুমের সূচনা কিন্তু সব সময়ই লোকাস সেরুলিয়াসের নিম্ন পর্যায়ের ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখান থেকে জানা যায় যে ঘুমের স্বপ্নময় অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রেও এটা প্রধান ভূমিকা পালন করে।

অনিতা লুথির কথায়, "আরইএম ঘুমে রূপান্তর খুব ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ আরইএম ঘুমের মধ্যে আমাদের অ্যাটোনিয়া দেখা যায়।"

অ্যাটোনিয়া আমাদের দেহের অস্থায়ী পক্ষাঘাত হওয়ার মতো অবস্থা যে সময়ে আমরা স্বপ্ন দেখলেও শারীরিকভাবে তার প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে দেহ বাধা দেয়।

তিনি বলেছেন, "এই সময় আমরা পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।"

অনিতা লুথি জানিয়েছেন তিনি ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছিলেন। তাই নিশ্চিত হওয়া দরকার যে এই নীল বিন্দু মানুষের ঘুমের ক্ষেত্রেও একই ভূমিকা পালন করে কি না। যদি তা হয়, তবে তার অনুমান লুকাস সেরুলিয়াসের কার্যকলাপ এবং তার সর্বক্ষণ সজাগ থাকা ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ হতে পারে।

এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে তিনি পরীক্ষাগারে থাকা ইঁদুরগুলোর মধ্যে 'স্ট্রেসের' সঞ্চার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ তাদের খাঁচায় আঘাত করেছেন তিনি। এর ফলে ওই নীল বিন্দুর সক্রিয়তা বেড়েছে এবং ওই ইঁদুরগুলো গোটা রাত প্রায় সজাগ ছিল। এর ফলে তাদের বিচ্ছিন্ন ঘুম হয়েছে।

মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া

গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে চেয়েছেন যে মস্তিষ্কের ভিন্ন ধরনের উদ্দীপনা ওই নীল বিন্দুকে 'শান্ত' করতে পারে কি না যাতে ভাল ঘুম হয়।

যেমন, দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক সম্প্রতি একটা পরীক্ষা করেছেন। তারা একটা হেডসেটের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কপালের একটা স্নায়ুর (লোকাস সেলুরিয়াসের সঙ্গে যুক্ত) উপর দিয়ে মৃদু বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালিয়ে দেখতে চেয়েছে নীল বিন্দুর সক্রিয়তাকে কিছুটা কমানো যায় কি না। যদিও এটা অনিদ্রা হ্রাস করতে পারে কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গবেষকদের মতে সন্ধ্যায় আমাদের আচরণ সম্পর্কে আরও কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার যাতে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে অতিরিক্ত উদ্দীপনা এড়ানো যায়।

"যদি ক্লান্ত হওয়ার পরেও আপনি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে বাধ্য করেন তাহলে আপনার মস্তিষ্ক তার জন্য সমস্ত সরঞ্জামকে সবচেয়ে বেশি অশ্বশক্তির ক্ষমতা প্রদান করতে চাইবে। এর ফলে এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে একসময় আটকে যাবে," -একথা মিথু স্টোরোনি উল্লেখ করেছেন 'হাইপারএফিসিয়েন্ট'-এ।

নিজেদের টিভি, ফোন বা ট্যাবলেট থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন এবং ঘুমের স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে মনকে শান্ত করা দরকার।

লোকাস সেরুলিয়াস এবং শরীরের মধ্যে দ্বিমুখী ট্র্যাফিক রয়েছে যার সুবিধা আমরা পেতে পারি।

নীল বিন্দু হল স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের অংশ, যা অচেতন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া যেমন শ্বাস, হার্ট রেট এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। একে দুইভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে- সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্র যা স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া 'ট্রিগার' বা সঞ্চার করার জন্য দায়ী এবং প্যারাসিপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র। এটা শরীরকে শিথিল করতে এবং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তৈরি করে।

আমরা বেছে বেছে এই দু'টো ভাগকেই সক্রিয় করে তুলতে পারি এবং সেটা সম্ভব হতে পারে বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে।

মাঝারি থেকে তীব্র ব্যায়াম যেমন, হাঁটাচলা, দৌড়ানো, রোয়িং, সাইকেল চালানো বা বক্সিং সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে। এটা নীল বিন্দুর কার্যকলাপকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি মানসিক উত্তেজনাও বাড়াবে।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিজেকে সক্রিয় করে তোলার জন্য এটা উপযোগী। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমের পর আপনি নিজের মনকে যখন শান্ত করার চেষ্টা করছেন, তখন এটা উপযোগী নয়।

আপনি ভাবতেই পারেন যে শারীরিক পরিশ্রম আপনাকে ক্লান্ত করে তুলবে এবং ঘুম পাবে। কিন্তু আপনার যদি ইতিমধ্যে ঘুমের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে বেশি রাতের দিকে জিমে গিয়ে কসরত করা কোনও সুবিধাজনক উপায় হতে পারে না।

অন্যদিকে শরীরের মৃদু প্রসারণ দেহকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় হতে পারে যা আমাদে চিন্তা ভাবনা ও অনুভূতিকে শান্ত করে। নিয়ন্ত্রিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, যেমন প্রাণায়ামও এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। কারণ এতে সামগ্রিক উত্তেজনা হ্রাস পায়।

সামগ্রিক ঘুমের গুণমান উন্নত করতে এবং অনিদ্রার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য মেডিটেশন বা মনঃসংযোগ উপযোগী হতে পারে বলে একাধিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে।

আমাদের শরীরে এমন কোনও 'সুইচ' নেই যা আমাদের মানসিক ক্রিয়াকলাপকে ইচ্ছামতো বন্ধ করে দিতে পারে। তবে আমাদের প্রতিদিনের রুটিন সঠিকভাবে পরিচালনা এবং মন ও দেহের সংযোগের মাধ্যমে আমরা আমদের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পাওয়ার সুযোগ করে নিতেই পারি।