যখন শরীরের থাইরয়েড গ্লান্ড যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু হরমোন তৈরি করতে পারে না সেই বিষয়টিকেই হাইপো-থাইরয়েডিজম বলে। ঠিক এই সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে রোগী যদি রক্তের টিএসএইচ (থাইরোয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন) পরীক্ষা করে, আর এতে যদি টিএসএইচ উচ্চ মাত্রায় থাকে তাহলে হাইপোথাইরয়েডের সমস্যা ধরা পড়ে।
সাধারণত হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় চিকিৎসকরা হরমোন রিপলেসমেন্ট থ্যারাপি ব্যবহার করে টি-থ্রি(ট্রিডোথাইরোনিন) এবং টি-ফোর(থাইরক্সিন) বৃদ্ধির মাধ্যমে চিকিৎসা করেন।
তবে প্রাকৃতিকভাবে হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় রোগী অনেকখানি সুস্থ অনুভব করেন। এছাড়া চিকিৎসকরা আরও বলেন, হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে ডায়েট অনেকখানি ভূমিকা রাখে।
লক্ষণ: সাধারণত রক্তের টিএসএইচ পরীক্ষা করলেই হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা বোঝা সম্ভব। তবে শারীরিকভাবে কিছু লক্ষণ দেখেও বিষয়টি ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো ব্যক্তির হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকলে সে মুটিয়ে যেতে পারে কোনো কোনো সময় নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয় এবং শরীরের চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়।
হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক চিকিৎসা-
হাইপোথাইরয়েডের রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া উপাদান ব্যবহার করেও ভালো থাকতে পারেন। অবশ্য চিকিৎসকরা হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে কোনো প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার করেন না। তাই ওষুধের পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণের ক্ষেত্রে রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে পারেন।
১. আয়োডিন: পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে আয়োডিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, আয়োডিন টি-থ্রি এবং টি-ফোর হরমোনের সঙ্গে আয়োডিন গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রয়েছে। লবনযুক্ত খাবার, সামুদ্রিক মাছ, ডেইরি পণ্যতে আয়োডিন রয়েছে। তবে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে অত্যধিক মাত্রায় আয়োডিন গ্রহণ থাইরয়েড সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট নেয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২. সেলেনিয়াম: দুইটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেলেনিয়াম অটো-ইমিউন থাইরডিটিস সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক মাত্রায় সেলেনিয়াম গ্রহণে যে কোনো থাইরয়েডের সমস্যা প্রতিরোধ সম্ভব। সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলো হল ব্রাজিল নাটস, তৈলাক্ত মাছ, সামুদ্রিক খাবার, টার্কির মাংস, এবং বাদামি চাল। তবে সেলেনিয়াম সাপ্লিমেন্ট নেয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩. জিংক: বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব খাবারে জিংক রয়েছে তা গ্রহণে হাইপোথাইরয়েডের সমস্যার সমাধান হতে পারে। জিংক সুস্থ থাইরয়েড ফাংশন অব্যাহত রাখে। আরও একটি গবেষণায় দেখা যায়, হাইপো-থাইরয়েডিজমের কারণে চামড়ার সমস্যা এবং চুল পড়ার সমস্যার সমাধান দিতে পারে জিংক সমৃদ্ধ খাবার। জিংক সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো সামুদ্রিক খাবার, কেশুনাট, ওটমিল এবং ডেইরি পণ্য।
৪. অর্শগন্ধা-হলুদ এবং অ্যালোভেরা: এই তিনটি প্রাকৃতিক উপাদান হাইপো থাইরয়েডিজম সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ সমাধান দিতে পারে। অর্শগন্ধা নিয়ে ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, যাদের হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা আছে, তারা ৬০০ মিলিগ্রাম অর্শগন্ধা চূর্ণ নিলে থাইরয়েডের সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, হলুদের গুঁড়া ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই গ্রহণে হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকে সমাধান পাওয়া সম্ভব। এছাড়া হলুদের গুড়ায় যে উপাদান রয়েছে তা থাইরয়েড গ্লান্ড বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গে থাইরয়েড হরমোন লেভেল স্বাভাবিক করে।
এছাড়া অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, হাইপোথাইরয়েডের রোগী প্রতিদিন যদি কেউ ৫০ এম এল অ্যালোভেরার রস গ্রহণ করে তাহলে তার টি-থ্রি এবং টি-ফোর লেভেল স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে এই প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।