News update
  • Guterres Urges Leaders to Act as UNGA Week Begins     |     
  • BNP to go door to door for hearts and votes     |     
  • Chittagong port tariffs increased up to 50 per cent     |     
  • Rising Heat Cost Bangladesh $1.8 Billion in 2024     |     
  • Stocks extend gains; turnover drops in Dhaka, rises in Ctg     |     

বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী, ৭০ ভাগই শিশু

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক হাসপাতাল 2025-01-05, 1:44pm

ertewtwerwe-41ac8e032f2a39baf32d9db086914f421736063078.jpg




টানা কয়েক দিন ধরেই বেড়েছে শীত ও কুয়াশার তীব্রতা। প্রতিবারই শীত মৌসুমে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তবে শীতে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ে বেশি। বছরের অন্যান্য সময় যে ডায়রিয়া বা কলেরা দেখা দেয়, তার থেকে শীতকালীন ডায়রিয়ার কিছুটা পার্থক্য আছে। শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়ার মূল জীবাণু রোটাভাইরাস। এবার শীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই শিশুরা। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বির চিকিৎসক ও গবেষকেরা বলছেন, রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অনেক শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বাড়িতে ভুলভাবে স্যালাইন খাওয়ানোর কারণে অনেক শিশু রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম নিয়ে বা ‘হাইপারনেট্রিমিয়া’র লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আসছে। নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১৫টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে আইসিডিডিআরবি সূত্র জানিয়েছে।

আইসিডিডিআর,বির নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের হাসপাতাল শাখার সহকারী বিজ্ঞানী শোহেব বিন ইসলাম বলেন, হাসপাতালে প্রচুর শিশু আসছে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া নিয়ে। গত বছরের চেয়ে রোগী প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। কিছু শিশু বেশ খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে আসছে।

মহাখালীর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০’র মতো শিশু। এমন অবস্থা যে হাসপাতালের সামনে তাঁবু গেড়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্তদের। প্রধান গেটের পরই বড় করে টানানো হয়েছে তাঁবু। যদিও এখনও সেখানে বেড করার প্রয়োজন পড়েনি। হাসপাতালের প্রধান ভবনের শুরুতেই নার্সরা এন্ট্রি নিচ্ছেন এবং চিকিৎসকরা রোগীদের দেখভাল করছেন। এই দুই বুথে ভিড় লেগেই আছে সারাদিন। এর ভেতরেই ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু ও বয়স্করা। আর আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ওপিডি) এ শিশুদের খাওয়ানো হচ্ছে স্যালাইন।

মহাখালীর হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, ইমার্জেন্সি রুমের বেডে তিন বছরের শিশু মুসাকে নিয়ে শুয়ে আছেন তার বাবা মো. বিপ্লব হোসেন। তারা এসেছেন কেরানিগঞ্জ থেকে। দুই দিন ধরে ছেলের মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) অনেক বেশি বেড়ে যায়, সঙ্গে জ্বরও আসে। এজন্য রাতেই তাকে নিয়ে আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি।

পাশের আরেকটি বেডে ছেলে মো. ইউসুফ আলীকে কোলে নিয়ে বসে আছেন মা শারমিন আক্তার। তারা এসেছেন জামালপুর থেকে। ছেলে ইউসুফ আলীর বয়স ১১ মাস। প্রায় ছয় দিন ধরে পাতলা পায়খানা ইউসুফের। জামালপুরে ডাক্তার দেখানও হলেও লাভ হয়নি। তাই ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাকে স্যালাইন খাওয়াতে।

হাসপাতালে আগত শিশুদের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে নিয়ে গুরুতর না হলে কিছু সময় চিকিৎসা ও স্যালাইন খাইয়ে ও পরামর্শ মোতাবেক ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আইসিডিডিআর,বির দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ১ জানুয়ারি ডায়রিয়া নিয়ে ৮৫০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। কোনো কোনো দিন নয় শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। ২৪ নভেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগী হিসাব করলে দেখা যায়, দৈনিক ৮৫০ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু। এদের বয়স পাঁচ বছরের কম। পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দুই বছর বা তার কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ৭৬ শতাংশের বেশি। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ৬৪৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসেন। শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৬৭ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এর আগে, ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৮৯১ জন, ২৯ ডিসেম্বর ৮২৬ জন, ৩০ ডিসেম্বর ৯১৩ জন, ৩১ ডিসেম্বর ৮৮৪ জন।

আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ কমিউনিকেশন ম্যানেজার এ কে এম তারিফুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিবছর শীত এলেই ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। বিশেষ করে নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই চার মাস রোটাভাইরাসের প্রভাব বেশি থাকে।

তিনি আরও বলেন, আইসিডিডিআর,বিতে ভর্তিপ্রতি ৫০তম রোগীর টয়লেট পরীক্ষা করে দেখা হয়-ডায়রিয়ার কারণ ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়াজনিত। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগীর ডায়রিয়া হচ্ছে রোটাভাইরাসের কারণে। বাকি ৫০ শতাংশ অন্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হচ্ছে।

শিশুস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছেন, রোটাভাইরাসের টিকা আছে। ভারত ও আফগানিস্তানে রোটাভাইরাসের টিকা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

বিশিষ্ট শিশুরোগবিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে (ইপিআই) রোটাভাইরাসের টিকা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানীরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ওআরএসের ব্যাপারে মায়েদের ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুকে ঘরের বাইরের খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি খাওয়াতে হবে। শিশুকে খাওয়ানোর আগে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। শিশুর মল পরিষ্কার করার পরও হাত ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।

আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, অতিরিক্ত বমি করলে, কিছু খাওয়াতে না পারলে, আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিলে, অনেক জ্বর থাকলে, পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। বমিরও একটা বিষয় আছে, ঘণ্টায় যদি তিনবারের বেশি বমি করে, তার মানে সে কিছুই পেটে রাখতে পারছে না। স্যালাইন দিচ্ছেন আর সে বের করে দিচ্ছে, তাহলে হাসপাতালে নিতে হবে। ভাইরাল ডায়রিয়ায় জ্বর থাকে। কিন্তু যদি অতিরিক্ত জ্বর থাকে, তাহলেও হাসপাতালে আনতে হবে। শিশুর মানসিক আচরণে পরিবর্তন হলে। শিশু যে রকম হাসিখুশি থাকে, খেলাধুলা করে, যাদের ডায়রিয়া হয় তাদেরও কিন্তু অ্যাক্টিভিটি স্বাভাবিকই থাকে। যদি দেখা যায় বাচ্চা একেবারে নেতিয়ে পড়েছে, ঘাড় সোজা করে রাখতে পারছে না, শিশুর মুখে খাবার দেওয়া যাচ্ছে না অথবা ভীষণ খিটখিটে হয়ে গেছে, অর্থাৎ কোনোভাবেই তাকে শান্ত করা যাচ্ছে না। এই পরিবর্তনগুলো অ্যালার্মিং সাইন। তাহলে শিশুকে হাসপাতালে আনতে হবে।

বয়স ও ওজন অনুযায়ী স্যালাইন না খাওয়ালে শিশুদের জটিলতা দেখা দিতে পারে স্যালাইন ডায়রিয়ার জন্য অবশ্যই ওষুধ হিসেবেই খাওয়াতে হবে। সঠিক নিয়মেই বানাতে হবে। বাজারে যে ওরস্যালাইন পাওয়া যায় তার পেছনে নির্দেশনা লেখা থাকে, সে অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। বেশিরভাগ স্যালাইনকেই আধা লিটার বোতলে মিশ্রণ করতে হয়। এরপর বয়স অনুযায়ী পরিমাণ মতো খাওয়াতে হয়। যেমন সাধারণত শিশুর বয়স যতো তত চা চামচ স্যালাইন খাওয়ানো বাচ্চার জন্য যথেষ্ট। যতবার তাদের স্টুল পাস বা পাতলা পায়খানা হওয়ার পরে ওজন অনুযায়ী এক চামচ করে (১০ কেজি হলে ১০ চামচ) স্যালাইন খাওয়াতে হবে। আরটিভি