গার্মেন্টস খাতের রপ্তানির ৩০ হাজার চালানের বিপরীতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা দেশে আসেনি। এর সঙ্গে একটি অসাধু চক্র, শিপিং লাইন্স, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এবং গার্মেন্টস মালিকও জড়িত রয়েছে।
গার্মেন্টস মালিক সূত্রে জানা যায়, যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানির জন্য অনুমতি নেওয়া হয় সেই পরিমাণ পণ্য বায়ারের নিকট পাঠানো হয় না। যে কারণে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংকে জমা হয় না। অনেক সময় বায়ারের অর্ডার অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি করতে না পারায় বায়ার শিপমেন্ট পর্যায়ে তার আর্থিক অনটনের কথা জানিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ডকুমেন্ট না পাঠিয়ে সরাসরি তার নিকট ডকুমেন্ট পাঠানোর অনুরোধ করে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এবং গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এ এম মাহবুব চৌধুরী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট গত সপ্তাহে দেওয়া এক পত্রে রপ্তানির বিপরীতে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত না আসার বিষয়ে উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কাস্টমস, বিজিএমইএ, চেম্বার এবং জেলা প্রশাসনের করণীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করেন। তিনি পত্রে ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার রপ্তানি চালানের বিপরীতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা দেশে আসেনি বলে উল্লেখ করেন। জানা গেছে, তার নিজের একটি রপ্তানি চালানের বিপরীতে টাকা না পেয়ে চট্টগ্রামে স্থানীয় আদালতে মামলা করে গত ১২-১৩ বছর ধরে কোনো সিদ্ধান্ত পাননি।
সরকারের রপ্তানি গাইড লাইন অনুযায়ী, পণ্য রপ্তানির ছয় মাসের মধ্যে রপ্তানি মূল্য দেশে ফেরত আসার কথা। ওই সময়ের মধ্যে পণ্য মূল্য ফেরত না আসলে এবং কম আসলে ব্যাংকে ওভার ডিউজ হিসেবে পরিগণিত হবে। আবার অনেক সময় রপ্তানি মূল্যের ডিসকাউন্ট করা হলে কম মূল্য ফেরত আসে। সেক্ষেত্রে বায়ারকে দেওয়া ডিসকাউন্ট বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কমিটিকে অবহিত করে অনুমোদন নিতে হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিপিং লাইন্স ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স কর্তৃক আমেরিকা কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যাংকের ডকুমেন্ট ছাড়াই বায়ারকে পণ্য ডেলিভারি দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বায়ার বাংলাদেশের রপ্তানিকারক কর্তৃক তার ব্যাংকে পাঠানো ডকুমেন্ট ছাড় না করে স্থানীয় ফরোয়ার্ডার্স ও শিপিং লাইনের সঙ্গে যোগসাজশ করে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে নেয়। কারণ ব্যাংক থেকে ডকুমেন্ট ছাড় করতে পণ্যের সকল মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এতে করে বিদেশি ব্যংক বাংলাদেশের ব্যাংকে পণ্যের মূল্য আসে না। বিদেশি ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে বায়ার ডকুমেন্ট ক্লিয়ার না করলে তা ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত গার্মেন্টস মালিকদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি চালানের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত না আসলে সরাসরি ভূমিকা রাখলে এবং বিদেশি বায়ারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিদেশে দূতাবাস সমূহ ব্যবহার করা এবং ক্ষেত্র বিশেষে মামলা করলে অসাধু বায়ার কিংবা রপ্তানিকারক শিপিং লাইন ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অবৈধ কাজ করার ক্ষেত্রে নিরুত্সাহিত হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের মেলো ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪ কোটি টাকার পণ্য আমেরিকার বায়ার ব্যাংক ডকুমেন্ট দাঁড় না করেই শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স কর্তৃক ব্যাংক ডকুমেন্ট ছাড়াই বায়ারকে পণ্য সরবরাহ করে। এদিকে মেলো ফ্যাশন স্থানীয় আদালতে শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন তদন্ত শেষে শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সকে দায়ী করে যোগসাজশে পণ্য খালাস নেয়।
মেলো ফ্যাশনের পক্ষ থেকে কাস্টমসে শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সের নামে অভিযোগ দেয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স আমেরিকায় তার প্রিন্সিপাল তদন্ত প্রতিবেদন দেন।
মেলো ফ্যাশনের পরিচালক সাইফুল্লাহ মনসুর জানান, দেশের টাকা এভাবে বিদেশি প্রতারকরা লুটে নিয়ে বিপুল সংখ্যক গার্মেন্টস মালিককে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিজিএমইএ, কাস্টমস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। আরটিভি।