News update
  • Six put on remand in metro rail station vandalizing case     |     
  • Ex-Ducsu VP Nur sent to jail in Setu Bhaban vandalising case     |     
  • Mali bus crash kills 16, injures 48     |     
  • UN chief calls for global action on extreme heat     |     

ধর্ম নিয়ে কটূক্তি : শর্ত মানলে কারাভোগ করতে হবে না তিথির

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক আদালত 2024-05-14, 10:57am

dfhdydry-81766eb13fd1399249b8a865f87e81851715662827.jpg




ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।

সোমবার (১৩ মে) সেই মামলায় রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। রায়ে বিচারক জুলফিকার হায়াত জবির সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকারের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে। তবে এরই মধ্যে এ মামলায় আসামি ২১ মাস কারাভোগ করেছেন। রায়ে বিচারক উল্লেখ করেছেন, পাঁচ বছরের সাজা থেকে আসামির ২১ মাসের কারাভোগের সময় বাদ যাবে। অর্থাৎ এই ২১ মাস সময়কে পাঁচ বছরের সাজা আওতায় ধরা হবে।

এদিকে, রায়ের পর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিথিকে সংশোধন হতে এবং তার বয়োবৃদ্ধ বাবার নিয়মিত দেখভাল ও সেবাযত্ন করাসহ আট শর্তে তাকে এক বছরের প্রবেশনে মুক্তি দেন আদালত। এ সময়ে তিনি প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবেন। আদালত জানিয়েছেন, আসামি তিথি প্রবেশনের শর্তসমূহ যথাযথভাবে পূরণ করলে তাকে আর সাজা না-ও খাটতে হতে পারে।

যেসব শর্তে প্রবেশন পেলেন তিথি-

আসামি তিথি সরকারকে অপরাধী প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ (১৯৬০ সালের ৪৫ নম্বর অধ্যাদেশ) এর ৫ ধারা মোতাবেক, আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়কালের জন্য প্রবেশন আদেশের নিম্নোক্ত শর্তাবলিযুক্ত মুচলেকা সই করার শর্তে প্রবেশনে মুক্তি দেওয়ার আদেশ জারি করা হয়েছে। তিনি আট শর্তে মুচলেকায় সই করে মুক্তি পান।

শর্তসমূহ হলো-

(১) আসামি-প্রবেশনার আগামী এক বছর সময়ের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবেন এবং ওই কর্মকর্তার নিদের্শনাসমূহ মেনে চলবেন।

(২) ওই সময়সহ আসামি-প্রবেশনার ভবিষ্যতেও আর কোনো অপরাধে জড়াবেন না, শান্তি বজায় রাখবেন ও সদাচরণ করবেন।

(৩) বয়োবৃদ্ধ বাবার নিয়মিত দেখভাল ও সেবাযত্ন করতে হবে।

(৪) আদালত, প্রবেশন কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তলবমতে আসামি-প্রবেশনার যথাসময়ে হাজির হবেন।

(৫) শহর এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ আইনবহির্ভূতভাবে রাস্তা পারাপার করা যাবে না, সামাজিক নিয়ম-কানুন, প্রথা, রীতিনীতি প্রভৃতি মেনে চলবেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজ করবেন না; প্রবেশন কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত নিজস্ব কর্মস্থল বা বাসস্থান ত্যাগ করবেন না; এবং প্রবেশন কর্মকর্তার যে কোনো সময় আসামির গৃহ পরিদর্শন করতে আসামি-প্রবেশনার বা তার পরিবারের সদস্যদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

(৬) আসামি-প্রবেশনার অযথা রাতের বেলা ঘরের বাইরে অবস্থান করবেন না; মাদকদ্রব্য গ্রহণ, বিশেষত মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সরবরাহ করা হয় এমন স্থানে যাতায়াত করবেন না; ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন; এবং জুয়া, অনলাইন জুয়া, তাস, ক্যাসিনো, বাজি ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন।

(৭) আসামি-প্রবেশনার প্রবেশনকালীন কোনো ধরনের স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না; প্রয়োজন হলে নন-স্মার্ট মোবাইল ফোন বা বাটন ফোন ব্যবহার করবেন। তবে শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের আবশ্যকতা দেখা দিলে আসামি-প্রবেশনার তার মা-বাবা অথবা অন্য কোনো প্রাপ্তবয়স্ক আত্মীয়, অথবা ক্ষেত্রমতে শিক্ষকের উপস্থিতিতে শুধু স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।

(৮) উপর্যুক্ত যে কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামি-প্রবেশনার নিজেকে সংশোধন না করলে আসামির প্রবেশন আদেশ বাতিল হবে এবং প্রমাণিত অপরাধের দায়ে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৮ (২) ধারায় পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হবে।

আইন অনুযায়ী, প্রবেশন হলো অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে এবং কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে শুধরানোর সুযোগ দেওয়া। প্রবেশন আইনে প্রথম ও লঘু অপরাধে দণ্ডিত শিশু-কিশোর বা অন্য কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে কারাগারে না পাঠিয়ে আদালতের নির্দেশে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নিজ বাসায় বা পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন প্রবেশন কর্মকর্তা হিসেবে থাকেন।

মূলত প্রবেশন একটি সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। কোনো অপরাধী যেন ভবিষ্যতে নতুন করে অপরাধকর্মে লিপ্ত না হন এবং আইন মনে চলা ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেন, প্রবেশনের মাধ্যমে আদালত দণ্ডিত ব্যক্তিকে সেই সুযোগ দেন।

তবে প্রবেশনের মেয়াদ শেষে প্রবেশন কর্মকর্তা যদি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির আচরণ সন্তোষজনক মর্মে প্রতিবেদন দেন, তবে আসামির কারাদণ্ড মওকুফ হবে। আর যদি আসামির আচরণ অসন্তোষজনক মর্মে প্রতিবেদন দেন, তবে প্রবেশন বাতিল ও আদালতের দেওয়া দণ্ড আসামিকে ভোগ করতে হবে।

এ বিষয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম জানান, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকারের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তিথির আইনজীবী প্রবেশন চেয়ে আবেদন করলে আদালত এক বছরের জন্য কিছু শর্তে তাকে প্রবেশনে মুক্তির আদেশ দেন। এই এক বছরে তাকে শর্তসমূহ মেনে চলতে হবে। শর্ত মানলে আদালত বিবেচনা করবেন তাকে আর সাজা খাটতে হবে কি না। আর শর্ত না মানলে তাকে সাজা খাটতে হবে।

তিথির আইনজীবী বাবুলুর রহমান জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিথি সরকার নিজের ভুল স্বীকার করে আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য আদালতের কাছে সুযোগ চান। এর আগে তিনি ২১ মাস জেল খেটেছেন। সব কিছু বিবেচনা করে আদালত তাকে সংশোধনের জন্য এক বছরের প্রবেশন দেন। এই এক বছরে যদি তিনি আচরণগত পরিবর্তনসহ শর্তসমূহ মেনে চলেন তাহলে তাকে আর সাজা খাটতে হবে না। আর শর্ত ভঙ্গ হলে পূর্ণ সাজা ভোগ করতে হবে।

ট্রাইব্যুনালের স্টেনোগ্রাফার মোহাম্মদ মামুন সিকদার জানান, প্রবেশনের সময় শেষ হওয়ার পর প্রবেশন কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ওই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে তিথি সরকার পুরো পাঁচ বছর সাজা খাটবেন নাকি মুক্তি পাবেন। রিপোর্ট ভালো হলে সাজা না খাটলেও চলতে পারে। আবার রিপোর্ট সন্তোষজনক না হলে সাজা খাটতে হবে।