দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে আছে আন্তর্জাতিক চক্র। তাতে এখন চলছে অন্যরকম রাজনীতি। অতীতের মতো বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে।
অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়নি। তাই বাংলাদেশে এখন পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, উন্নয়নের মহাসড়কে আছে বাংলাদেশ। সেই উন্নয়নকে আমরা বাধাগ্রস্ত করতে পারি না বলে জানিয়েছেন দেশের শিক্ষকরা।
শনিবার (১১ নভেম্বর) ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির’ প্রতিবাদে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানান তারা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউিটে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এডুকেশেন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)।
ইআরডিএফবির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশি তৎপরতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। তারা মানবাধিকার, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অর্থনীতি নিয়ে কথা বলে। সে সব কথা নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদরা নানারকম বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তাদের বক্তব্য অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে না। এর কারণে আমাদের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত এই ফোরামের মাধ্যমে তথ্য তুলে ধরি, তখন এই আলোচনা সাধারণ মানুষের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়।’
তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার নিয়ে যখন বাংলাদেশে বিভিন্ন সংগঠন কথা বলেছে, তখনও আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচনকে লক্ষ্য করে একটি বিশেষ ভিসানীতি তৈরি হয়েছে। এটির যে কোনও আইনি ভিত্তি নেই সেটাও আমরা আমাদের ফোরাম থেকে তুলে ধরেছি।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে কোনও নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। এটি আমরা এই দেশে আর দেখতে চাই না। যখনই নির্বাচন সংবিধানের বাইরে যাবে, তখনই বাংলাদেশ বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবুন্নেসা বলেন, ‘শিশু রাসেলকে যারা হত্যা করেছে তারাই গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ হত্যা করে। আমরা চাই না নারায়ে তাকবির বলে কেউ হলে হামলা করে শিক্ষার্থীদের বের করে দিক। বঙ্গবন্ধু সন্ত্রাসের বিপক্ষে ছিলেন, তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কবি ছিলেন। তাকে বলা হতো রাজনীতির কবি।’
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন। তাহলে ছয় বছরের পূর্ণিমা নির্যাতিত হলো কেন? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল বাংলাদেশে অপরাজনীতির চিত্র। তাহলে কি আমরা ওখানে ফিরে যাবো? আমরা কি হাওয়া ভবনে, খাম্বার রাজনীতিতে ফিরে যাবো? শুধু বিএনপির জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির জন্য এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের অবশ্যই খুঁজতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জ্বালাও পোড়াও করে যারা মানুষ হত্যা করছে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশে এই ধরনের অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদের কোনও ঠাঁই নাই।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে আছে বাংলাদেশ। সেই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারি না আমরা। পেছনে ফিরে যেতে পারি না। এই উন্নয়নের মহাসড়ককে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পাশে আমাদের দাঁড়ানো দরকার। সন্ত্রাস কখনও কোনও জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। এটি অভিশাপ, এই অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি চাই।’
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য প্রকৌশল শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, যাতে দেশ স্বাধীন না হয়। তারা এই স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারে নাই। তারা বিভিন্ন আবহ-ইঙ্গিতে বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছে। তারা আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে প্রথমে সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশ করার কথা বললো, কিন্তু তারা বিশৃঙ্খলা করছে। এখন তারা এটার বিরোধিতা করে না। সুতরাং যারা এ দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নাই, তারা কোনও সময়ই এ দেশে সুস্থ রাজনীতির ধারা মেনে নিতে পারে না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা জানি, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ইতিহাস অন্যদিকে গিয়েছে, কারণ ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জয় বাংলার পরিবর্তে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ হয়েছিল। বর্তমানে আমাদের ১৫ বছর বয়সী ছেলেটি সে কথা জানে না। সে জানে না ওই সময় বিদ্যুৎ কখন আসবে, এই চিন্তা ছিল মানুষের মাথায়। আর এখন বিদ্যুৎ যায় না। এগুলো বর্তমানে ১৫ বছরের ছেলেদের জানানো দরকার। আগামী দিনে এই নির্বাচন কেন দরকার? বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, নেতা নির্বাচিত হতে হলে নির্বাচন দরকার। একজন শিক্ষক শুধু শিক্ষার আলোই ছড়ান না, তারা যে কথা বলবে, সেটি একজন রাজনীতিবিদের কথার চেয়েও বিশ্বাসযোগ্য। এই জায়গায় আমাদের শক্তি অনেক বেশি। আমরা একজন ১০০ জনকে মোটিভেট করতে পারবো।’
ফোরামের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০-এর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগণ ভোট দিয়েছিল, তাকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি। এখন কেন মানবাধিকারের কথা বলা হচ্ছে? গাঁজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, সেদিকে কারও নজর নেই। আমাদের দেশে একটি অগণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। দেশে গোলমাল, সন্ত্রাস থাকলে তাদের লাভ হয়। তারা অস্ত্রের রাজনীতি করে। সুতরাং আমরা শিক্ষকরা আর ভুল করতে চাই না।’
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ও ইআরডিএফবি’র সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, চাঁদুপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোকাদ্দেম হোসেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শামীম আরা হাসান প্রমুখ। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।