ছয় বছর পর জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয়বারের মতো কুমিল্লায় উদযাপিত হচ্ছে মহাবিদ্রোহের অগ্নিগিরি বাঙালির জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। এর আগে ১৯৯৩ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০১৫ সালে কুমিল্লায় জাতীয় পর্যায়ে কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের কবিতা, গল্প, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস আমাদের বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। বিৃটিশবিরোধী আন্দোলনে নজরুলের গান কবিতা এ উপমহাদেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক। নজরুলের অগ্নিঝরা কবিতা গান মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যুগিয়েছিল। আজও যখন সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলে, মানুষের জীবন বিপন্নের ষড়যন্ত্র চলে তখন আমরা সাহস সঞ্চয় করি সাম্য, মানবতা ও বিদ্রোহী কবি নজরুলের কবিতার ছন্দ থেকে। কুমিল্লার সাথে কবির আত্মিক সম্পর্কের দিক থেকেই জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য কুমিল্লাকে নির্বাচিত করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কুমিল্লা। নজরুলের রাজনীতি, প্রেম, বিয়ে, ব্যক্তিজীবন, সঙ্গীত ও সাহিত্যের বর্ণিল অধ্যায় জুড়ে রয়েছে কুমিল্লা। ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে মোট পাঁচবারের আগমন আর ১১ মাসের অবস্থান ঘিরে কবি নজরুলের জীবনের মোড় ঘুরার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছিল এই কুমিল্লাতেই। কবি নজরুলের কুমিল্লায় অবস্থানের পুরো সময়টা ছিল বৈচিত্র্যময়।
কবির জীবনে কুমিল্লার মুরাদনগরের খাঁ বাড়ির নার্গিস আর শহরের পশ্চিম কান্দিরপাড়ের আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলা নামের দুই নারী এসেছিলেন জীবনসঙ্গিনী হয়ে। নার্গিস ও প্রমীলা কবির জীবনে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ সময়ে তিনি কুমিল্লায় বসে অজ¯্র কবিতা ও গান রচনা করেছেন। নজরুলকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ১৯৪৫ সালের মাঝামাঝিতেই শুরু হয়। দেশ বিভাগের পর কুমিল্লায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় নজরুল চর্চা।
আবারো কুমিল্লায় জাতীয়পর্যায়ে কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদযাপন ঘিরে কবি প্রেমিসহ সব শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। নজরুল কুমিল্লার, কুমিল্লা নজরুলের। এই বোধ ও বিশ্বাসের জায়গাটি আরো সমৃদ্ধ ও আলোকিত হয়ে উঠবে কুমিল্লায় জাতীয়পর্যায়ে তৃতীয়বারের মতো কবি নজরুলের অনুষ্ঠান ঘিরে। এজন্য কুমিল্লার আপামর মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তরের গভীর থেকে অভিবাদন জানিয়েছেন এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতাবোধ।
বর্ণময় আয়োজনের মধ্যদিয়ে এক হাতে বিষের বাঁশি, আর এক হাতে অগ্নিবীণা বাজিয়ে সাম্যের গান গেয়ে যিনি বৃটিশ রাজশক্তির চরম নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন সেই প্রাণের কবি গানের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীর তিনদিনের অনুষ্ঠানমালা কুমিল্লা টাউনহল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বাসসকে বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকীর তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন, কবি নজরুল ইসলামের পৌত্রী খিলখিল কাজী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি ও বেগম সিমিন হোসেন রিমি এমপি। স্বাগত বক্তব্য দিবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর মহোদয়, স্মারক বক্তব্য দিবেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তথ্য সূত্র বাসস।