ফেসবুকে লেখালেখির কারণে ১২ জন কর্মকর্তাকে দেওয়া বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আগামীকাল রোববার (২ মার্চ) পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান।
ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, রোববার সারাদেশে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবে ২৫ ক্যাডার। জরুরি সেবা ছাড়া সব সেবা বন্ধ থাকবে এ সময়ে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান না পেলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। আশা করছি, সংশ্লিষ্টরা সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।
রোববার (২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ দপ্তরের সামনে কালো ব্যাজ পরে ব্যানারসহ অবস্থান করবেন বলেও সভায় জানানো হয়।
দাবি আদায়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারিও অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ২৫টি ক্যাডার। কিন্তু সেদিন জাতীয় শহীদ সেনা দিবসের কর্মসূচি থাকায় অর্ধদিবস কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।
এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর উপসচিব পুলে কোটা পদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তার সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে এক ঘণ্টার ‘কলমবিরতি’ পালন করে ২৫টি ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’।
তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়াধীন দপ্তর ও সংস্থায় কর্মরত আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশের কারণে ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই সামান্য অজুহাতে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা মৌলিক অধিকার ও চাকুরিবিধির পরিপন্থি।
২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ও বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার করা না হলে এবং আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসনের কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান না হলে রোববার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়েছিল ২৫ ক্যাডার।
সবশেষ শনিবারের সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে ২৫টি ক্যাডারের পক্ষ থেকেই পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং উপসচিব পদে কোটা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সমাজের বিভিন্ন স্তর হতেও সিভিল সার্ভিসে পেশাদারত্বকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। অথচ জনদাবি উপেক্ষা করে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ক্ষমতাধর একটি গোষ্ঠীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আরও বৃদ্ধির প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে।
তিনি বলেন, এ রিপোর্ট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এবং প্রশাসনিক ফ্যাসিজম আরও শক্তিশালী হবে।
সভায় বলা হয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারবহির্ভূত করার প্রস্তাব থেকে সরে এসে কৌশলে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা রাখা হয়েছে। যেন ধীরে ধীরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে মূলধারা থেকে বের করা যায়। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের বিষয় সংস্কার প্রস্তাবে না রাখা এবং পরিসংখ্যান ক্যাডারকে অযৌক্তিকভাবে সার্ভিসের বহির্ভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে এসব সেক্টরে মেধাবীরা কম আকৃষ্ট হবে এবং এসব সেক্টরসমূহ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।
আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তির মেধা যাচাইয়ের অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে গাণিতিক দক্ষতা। অথচ গণিতকে বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে মুখস্থ করার প্রবণতা উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, যা যথাযথভাবে মেধা মূল্যায়নের অন্তরায়। এছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও জেলা পরিষদকে বিলুপ্ত করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, বাস্তবতা বিবর্জিত প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার প্রস্তাব জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের অন্তরায়।
সভায় পরিষদের পক্ষ থেকে কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় (ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার) বাস্তবায়ন, উপসচিব পদে কোটাপদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, সব ক্যাডারের সমতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ সব ক্যাডারকে একই কমিশনের আওতায় রাখা; পরিবার পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান ক্যাডারকে সার্ভিসে অব্যাহত রাখা, সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে প্রবেশের পর শুধু প্রশাসন ক্যাডারের জন্য পূর্বের সার্ভিসে ফেরার সুবিধার প্রস্তাব বাতিল; জেলা কমিশনারকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব প্রদানের প্রস্তাব বাতিল, ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’-এর পরিবর্তে ‘ভূমি সার্ভিস’ বা ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা সার্ভিস’ নামকরণ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ‘মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়’ অথবা ‘সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়’ হিসেবে নামকরণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এ সময় আরও জানানো হয়, সম্প্রতি ফেসবুকে লেখালেখির মতো তুচ্ছ কারণে ২৫ ক্যাডারের ১২ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ধরনের কাজ প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বৈষম্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসন ক্যাডার ২৫ ক্যাডারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিবিদ মো. আরিফ হোসেন। এ সময় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।আরটিভি