News update
  • From DUCSU to JUCSU, Shibir Extends Its Winning Streak     |     
  • Dhaka's air quality in 'moderate' range on Saturday morning     |     
  • Deadly Floods Displace Over 100,000 in South Sudan     |     
  • Nepal has first woman Prime Minister as March elections set     |     
  • 50 Killed as Israel Intensifies Strikes on Gaza City     |     

ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ: বাংলাদেশে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের?

বিবিসি নিউজ বাংলা খবর 2025-03-01, 6:41pm

4t4t54353525-a8840738f8b80cba216704ba3d79968d1740832867.jpg




অভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে হত্যা, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এতে দেখা যাচ্ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ধর্ষণের ঘটনাও বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুদ্ধ কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন।

ডাকাতি, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধ এমন সময় ঘটছে, যখন যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে সারা দেশে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' নামে একটি বিশেষ অভিযান চলছে।

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস ডাকাতির মতো বেশ কয়েকটি ঘটনা আলোচনায় এসেছে। সমসাময়িক বেশকিছু হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্থানীয় মানুষ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

এর মধ্যে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা, গণপিটুনিতে হত্যা, বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করারও ঘটনা রয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমের কোনো কোনো জেলায় আবার বেড়েছে চরমপন্থিদের তৎপরতা।

ঝিনাইদহে তিনজনকে হত্যা করে একটি চরমপন্থি গোষ্ঠীর নামে দায় স্বীকার করার ঘটনায়ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ এলাকা ঘুরে স্থানীয় মানুষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সাংবাদিক।

কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া, ডাকাতি, খুন ও চাঁদাবাজির কারণে অস্থিরতা এবং আতঙ্কের একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেই সাধারণ মানুষ মত দিয়েছে।

কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় অবস্থানকালে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া এবং দলবল নিয়ে হামলা-ভাঙচুরের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছে বিবিসি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কের বাবার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মঙ্গলবার বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীরা।

বাড়ি ভাঙচুর করে কয়েকশ মানুষ অস্ত্র, রামদা লাঠি-সোটা নিয়ে বেরিয়ে গেলেও নিরব দর্শক ছিল পুলিশ। হামলাকারীদের হাতে রামদা, হাসিয়া, আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। এসময় পুলিশের অসহায়ত্ব অনেকটাই দৃশ্যমান ছিল।

"কয়েকজন পুলিশ সদস্যের পক্ষে এরকম হামলা এবং মব ঠেকানো অসম্ভব" বলেও উল্লেখ করেন কুষ্টিয়ার জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে বাড়ি ভাঙচুর এবং তছনছ করার সময় এবং অস্ত্র হাতে বেরিয়ে যাবার সময় কোনো ছবি তুলতে এবং ভিডিও ধারণ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি কয়েকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় মিছিলে থাকা অস্ত্রধারীরা।

নিজ বাড়িতে ওই হামলার নেপথ্যে জামায়াত ও বিএনপির একটি অংশকে দায়ী করেছেন সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান আলী।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, "আমরা সমন্বয়ককে বার বার বলেছি যে তোমার বাবাকে থাামাও। এটা সাধারণ জনগণ করেছে। সাধারণ জনগণ তার ওপরে অতীষ্ট।"

তবে ঘটনার আগে জামায়াত নেতার বাড়িতে বৈঠক এবং সেখানে কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। হামলা ভাঙচুরের পর বিকেলে সমন্বয়ক এবং তার বাবার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেন জামায়াত নেতা মি. হোসাইন।

কেউ অপরাধ করলেও আইনের মাধ্যমে তদন্ত বা বিচার না করে বাড়ি ঘরে হামলা করাটা এবং আইন নিজের হাতে তুলে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন তুলেছেন আক্রান্ত সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান আলী।

সশস্ত্র ডাকাতি ও চরমপন্থী আতঙ্ক

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে কুষ্টিয়া এলাকায় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আনাগোনাও বেড়েছে বলে নজরে এসেছে স্থানীয়দের। ফেব্রুয়ারি মাসে গভীর রাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর তীরে অন্তত তিনটি ডাকাতি ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

সবশেষ গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি রাতে একদল অস্ত্রধারী বালুর ঘাটে হামলা চালিয়ে ক্যাশ কাউন্টারের দুই লাখ টাকা লুট করে নিয়েছে। ওই ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হন। তবে এসব ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ কিংবা কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

একজন ব্যবসায়ী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এগুলো নিয়ে কেউ অভিযোগ করবে না। তার দাবি এদের ম্যানেজ করেই এখন চলতে হচ্ছে। পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

স্বশস্ত্র হামলাকারীরা চরমপন্থি গ্রুপের সদস্য বলেও কেউ কেউ উল্লেখ করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চান নি।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় একজন বলেন, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ এলাকায় সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি মানুষ খুন এবং সশস্ত্র হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে।

"আমরা গ্রামের মানুষ অনেক আতঙ্কিত। দেখা যাচ্ছে , গ্রামের বাজার ঘাট সন্ধ্যার পরেই বন্ধের একটা আভাস দিচ্ছে। এ জিনিসটা আসলে ভালো দিক নয়," বলছিলেন তিনি।

মামুনুর রশীদ নামের একজনের পর্যবেক্ষণ হলো ৫ই অগাস্টের পর থানার হামলা ও অস্ত্র লুটের পর পুলিশ প্রশাসন খুব একটা শক্ত অবস্থানে নেই।

তার কথায়, "থানা ধ্বংস করা হইছে। মনে করেন, কিছু অস্ত্রপাতি অবশ্যই বাইরে গেছে। ওইগুলো তো এখনও সেভাবে উদ্ধার করতে পারেনি। এই জন্যই তো সমস্যাটা এত বেশি।"

কুষ্টিয়ার বালু ঘাটের সবশেষ ডাকাতির ঘটনার তিন দিন পর পাশের জেলা ঝিনাইদহে একসাথে খুন হয় তিনজন।

ঝিনাইদহের ট্রিপল মার্ডার নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এই হত্যার দায় স্বীকার করে বার্তা দিয়েছে একটি গ্রুপ। আর হত্যাকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে হানিফ আলী অতীতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন।

যদিও তার পরিবারের দাবি, গত নয় বছরে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এবং তিনি অতীতে সম্পৃক্ত থাকলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনো 'আন্ডারগ্রাউন্ড বাহিনীর' সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

দক্ষিণাঞ্চলে চরমপন্থী সংগঠনগুলো দীর্ঘ সময় নিস্ক্রিয় ছিল।

৫ই অগাস্ট থানা থেকে অস্ত্র লুট এবং জেল থেকে অপরাধী ও সন্ত্রাসীরা অনেকে বেরিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নাজুক হলে কেউ কেউ সুযোগ নিচ্ছে বলেও ধারাণ করা হচ্ছে।

এই অঞ্চলে আবারো চরমপন্থী গ্রুপগুলো নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা তৎপরতা এবং কার্যক্রম করছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানান কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

"ঝিনাইদহে যেটা ঘটলো এবং আরও কিছু যে পারিপার্শ্বিক ঘটনা ঘটতেছে, সেগুলো আমরা দেখতেছি। যেহেতু বেশিরভাগ অফিসারই নতুন, তাদেরকে জানতে একটু সময় লাগতেছে। আসলে যে ঘটনাগুলো ঘটতেছে, কারণটা কী- আমরা গভীরভাবে জানার চেষ্টা করতেছি।"

ধর্ষণ নিয়ে উদ্বেগ

সারা দেশে হত্যা, খুন, ছিনতাই, ডাকাতির পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অন্তত ৩৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১০টি ঘটনায় কোনো মামলাই হয়নি।

চলতি মাসেও বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে।

ধর্ষণ মামলা এবং নারীদের আইনি সহায়তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী। তিনি বলেন, "ভুক্তভোগীকে কেন্দ্র করে যে সাপোর্ট প্রয়োজন, সেটা কিন্তু এখন থানাগুলোতে নেই এবং বেশিরভাগ কেইস কিন্তু থানা পর্যন্ত আসছে না। এই জন্য কিন্ত আপনি অনেক খবর পাবেন না। তৃণমূলের যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো কিন্তু ভয়াবহ অবস্থা। "

সালমা আলীর পর্যবেক্ষণে দেশে ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের পরিস্থিতি মারাত্মক উদ্বেগের।

"এখন কিন্তু দুই রকম অপরাধী আছে। একটা হলো স্যাডিস্ট-রেপিস্ট, তারা একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর অনেক অপরাধী জেল থেকে বের হয়ে গেছে, এরকম কিন্তু অনেক আছে এবং তারা কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট অপরাধ গোষ্ঠী তৈরি করছে।"

"আমি মনে করি পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। এর জবাবদিহি সরকারকে দিতে হবে। আমরা সাহায্য করতে চাই, সহযোগিতা করতে চাই। "

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা তাদের রয়েছে। এর অংশ হিসেবে 'ডেভিল হান্ট অপরেশন' নামের বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

কিন্তু এই অভিযান কতটা কার্যকর প্রভাব ফেলছে, সে প্রশ্নও রয়েছে।