News update
  • Eid Tourism outside Dhaka turning increasingly monotonous      |     
  • China visit a ‘major success’ for interim government: Fakhrul     |     
  • NYT paints troubling, one-sided view of Bangladesh     |     
  • Two brothers killed in Narsingdi over extortion refusal     |     
  • Death toll from Myanmar earthquake surpasses 1,700     |     

সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে যা বলা হয়েছে

বিবিসি বাংলা খবর 2025-03-29, 7:45pm

5trt4534-f211d4d894e541cf19fa0591c04862d11743255910.jpg

ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিক্ষোভ (ফাইল ফটো)



ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমাগত হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, এমনটাই বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থা কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে যে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং তাদের মন্দিরের ওপর হামলা বেড়েছে বলে তাদের সংগঠনগুলো দাবি করেছে।

যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি নিয়ে যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তা একেবারেই সত্য নয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, এর পক্ষে শক্ত কোনও প্রমাণ নেই।

তবে মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়েছে।

যদিও মার্কিন ওই প্রতিবেদনে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের জন্য 'বিশেষভাবে উদ্বেগের' অথবা 'নজরদারিতে রাখা' দেশগুলোর যে তালিকা করা হয়েছে, যেসব দেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি, ভিসা কড়াকড়ি বা সহায়তা বন্ধের মতো পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশ পড়েনি।

বিশেষ উদ্বেগের তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত, পাকিস্তান,মিয়ানমার, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, সৌদি আরব, রাশিয়া, কিউবা,,ইরিত্রিয়া, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর কোরিয়া তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও ইরান।

অন্যদিকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কারণে বিশেষভাবে যেসব দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজর রাখা উচিত বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার মধ্যে আছে আলজেরিয়া, আজারবাইজান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কাজাগিস্তান, কিরগিজস্তান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, উজবেকিস্তান ও তুরস্ক।

মার্কিন প্রতিবেদনে ভারত, পাকিস্তান বা বার্মার মতো উদ্বেগের মূল তালিকায় থাকা দেশগুলোয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি, ভিসা কড়াকড়ি আরোপ, সহায়তা বন্ধের মতো জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনে উৎসাহ দেয়া, সহায়তার মতো অভিযোগে গুপ্তচর সংস্থা 'র' এবং বিকাশ ইয়াদবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পরামর্শও দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও একই রকম পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা মার্কিন সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদন ও সরকারের দাবি

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে, অর্থাৎ অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে।

এবার নতুন করে চলতি মাসে প্রকাশিত ওই মার্কিন প্রতিবেদনেও বিষয়টি এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক সহিংস প্রতিবাদে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর হিন্দু সম্প্রদায় থেকে দাবি করা হচ্ছে যে তাদের সম্প্রদায়ের ওপর এবং মন্দিরগুলোতে আক্রমণ বেড়েছে।

এসব আক্রমণের মাঝে ভাঙচুর ও মব ভায়োলেন্স (গণ সহিংসতা) রয়েছে।

ওই সময়ে ট্র্যাডিশনাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহিংসতার বিভিন্ন মিথ্যা বা অপ্রমাণিত দাবিও ছড়িয়ে পড়েছিলো, যার মূল উদ্দেশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি।

গত অগাস্টে বিবিসি'র তথ্য যাচাই বিভাগ 'বিবিসি ভেরিফাই' এবং 'গ্লোবাল ডিসইনফরমেশন টিম' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনেক মর্মান্তিক ভিডিও যাচাই করতে গিয়ে দেখেছে যে, সেগুলোর অনেকগুলোই আসলে ভুয়া খবর।

ছড়িয়ে পড়া ওই ভুয়া ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছিলো যে বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর সহিংসতা হচ্ছে, বাড়ি-ঘর পুড়ছে এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে নারীরা সাহায্যের আবেদন করছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে "হিন্দু গণহত্যা" চলছে দাবি করে অনেকে তখন সেই ভিডিওগুলো শেয়ারও করছেন, যাদের সম্মুখ সারিতে রয়েছেন উগ্র ডানপন্থিরা।

এদিকে, সদ্য প্রকাশিত এই মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর 'হিন্দু সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ' নিহত হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ওইসব হত্যাকাণ্ড ধর্মীয় কারণে হয়নি। বরং, ওগুলো রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে।"

শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ও শারীরিক আক্রমণ ও সম্পত্তি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উপরেরগুলো সহ অন্যান্য ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঠিক-ই।

কিন্তু "প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর সংখ্যালঘুদের অবস্থা আরও শোচনীয় হতে থাকে।"

এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর বক্তব্য, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে না এবং শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর শত শত হিন্দুর মৃত্যুর দাবী একেবারেই মিথ্যা।

ওই সময়ে প্রায় কোনও হিন্দু বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউই এ ধরনের সহিংসতার শিকার হননি জানিয়ে ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

তাদের মতে, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

এতে দেখা গেছে যে অধিকাংশ ঘটনাই ধর্মীয় সহিংসতার কারণে ঘটেনি। বরং, এগুলো ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে হয়েছিলো — দাবি প্রেস উইং-এর।

প্রতিবেদনে আরও যা যা বলা হয়েছে

সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে ছাড়াও ওই মার্কিন প্রতিবেদনে আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন, জুলাই আন্দোলনের আগে বাংলাদেশ হাই কোর্টের দুই বিচারপতি 'ব্লাসফেমি' বা ধর্ম অবমাননার অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তিকে সমর্থন জানান, যার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডও অন্তর্ভুক্ত ছিল— এই প্রসঙ্গে এখানে বলা হয়েছে।

ওইসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিতর্কিত বক্তব্যও প্রদান করেন, যেখানে তিনি বলেন যে বাংলাদেশের খ্রিস্টানরা বাংলাদেশকে একটি "খ্রিস্টান রাষ্ট্র" হিসাবে গঠনের ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ জুড়ে হবে সেই রাষ্ট্র। সেই বক্তব্য উঠে এসেছে মার্কিন প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তখন এই খবরটি এসেছিলো।

২০২৪ সালের ২৩শে মে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, "আমার যুদ্ধ ঘরে-বাইরে সব জায়গায়। ওই অবস্থায় আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে ছেড়ে দিলাম। চক্রান্ত এখনও আছে।"

"পূর্ব তিমুরের মতো বাংলাদেশের একটি অংশ নিয়ে... তারপরে চট্টগ্রাম, মিয়ানমার এখানে একটা খ্রিষ্টান দেশ বানাবে, বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাঁটি করবে। তার কারণ বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। এ জায়গাটার ওপর অনেকেরই নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না। এটাও আমার একটা অপরাধ," যোগ করেছিলেন তিনি।

গত বছরের নভেম্বরে পুলিশ বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করার প্রসঙ্গও এখানে আসে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, "তিনি হিন্দুদের রক্ষার জন্য একটি প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা করেছেন।"

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর তার সমর্থকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে এবং তখন একজন মুসলিম আইনজীবী নিহত হন।

"ওই একই মাসেই হিন্দু ধর্মের আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষ সরকারের কাছে তাদের ওপর আক্রমণ ও হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়ার দাবি জানিয়ে সমাবেশ করেন।"

প্রতিবেদনে এও বলা হয় যে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা 'মুসলিম' রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও বছর জুড়ে হুমকির সম্মুখীন ঝয়েছে, যার মধ্যে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত সহিংসতা এবং ধর্ম অবমাননাও অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, তবে মিয়ানমারে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা ফের বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। যদিও গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রোহিঙ্গাদেরকে দ্রুত পুনর্বাসনের জন্য এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায়, যাতে অভ্যন্তরীণভাবেই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা সেখানে আশ্রয় পেতে পারে।

রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ে সহায়তা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান ও জীবনধারনের জন্য সহায়তা বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনের ব্যাপারে সরকারের ভাষ্য

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আগেই বক্তব্য দেওয়ার পরও আজ শনিবার এ বিষয়ে সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সাথেও কথা বলে বিবিসি বাংলা।

এই প্রতিবেদন শুধু গত পাঁচই অগাস্টের পরের ঘটনাপ্রবাহের ওপর আলোকপাত করা হয়নি। বরং, পাঁচই অগাস্টের আগে 'ধর্ম অবমাননা করলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, খ্রিস্টান রাষ্ট্র করা হবে'— এসব প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার ভাষ্য, "দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট আছে যা সাম্প্রতিক পূজাগুলোতে স্পষ্ট প্রমাণিত।"

"স্বৈরাচার সরকারের পতনের পরে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক সংঘর্ষকে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বলে যে রটনা চালানো হয়েছে তার প্রেক্ষিতে তদন্ত করে দেখা গিয়েছে যে ওইসব ঘটনার প্রায় সবই ছিল রাজনৈতিক কারণে। মার্কিন এই রিপোর্টেও কিন্তু রটনা আর অসত্য প্রচারণার কথা এসেছে।"

"আমরা সকলকে আহ্বান জানাই সরেজমিনে এসে পরিস্থিতি দেখতে। সরকার সকল ধর্মের নাগরিকদের একই মর্যাদায় দেখে। সকল প্ররোচনার বিরুদ্ধে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রয়োজনীয় সকল সুরক্ষা দিতে সরকার সবসময় তৎপর," যোগ করেন তিনি।