News update
  • অতিথি পাখির বিচরণ আর দুষ্টুমিতে নান্দনিক হয়ে উঠেছে কুয়াকাটার চর বিজয়      |     
  • Remittance inflow exceeds $632 million in first six days of Dec     |     
  • 18 migrants die as inflatable boat sinks south of Greek island of Crete     |     
  • TIB for polls manifesto vows to curb misuse of powers and religion     |     
  • Khaleda now not fit for travelling: Medical Board     |     

দেশসেরা বিসর্জন কক্সবাজারে, সন্ধ্যার সৈকতে সনাতনীদের ঢল

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2025-10-02, 9:18pm

ec46b619709b6d4c61855d1d51affd98ab9d36cae336c60a-01331fcdf0c90e4c82dfbf83703894461759418293.jpg




বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে দেশের সবচেয়ে বেশি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বন্দনায় যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হলো বিজয়া দশমীতে।

বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও বিসর্জন দেখতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের পাশাপাশি লাখো মানুষের ঢল নামে।

এর আগে রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে তেল, সিঁদুর আর পান-চিনি ও অশ্রুতে বিদায় জানায় ভক্তরা। সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় সিঁদুর খেলা। পর্যটন নগরীতে প্রতিবছরের মতো এবারও বিসর্জনের প্রধান স্থান কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্টে দেওয়া হয়েছে বিসর্জন। ঢাকঢোল বাজিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা।

আর বিজয়া দশমীতে প্রতিমার বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত যেন পরিণত হয় সনাতনীদের পাশাপাশি নানা ধর্ম-বর্ণের লাখো মানুষের সম্প্রীতির মিলন মেলায়। এতে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে পূজারী ও পর্যটকে মুখর হয়ে ওঠেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত।

এদিকে বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিরাপত্তার তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল অনুষ্ঠানস্থলসহ আশপাশের এলাকা।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দুপুর গড়াতেই শহরসহ জেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ভিড় বাড়তে থাকে। আর বেলা গড়াতেই লোকারণ্যে পরিণত হয় সৈকতের লাবণী পয়েন্ট। একে একে মণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয় সমুদ্রতটের বালিয়াড়িতে। একদিকে বিসর্জন অনুষ্ঠান মঞ্চে উদযাপন কমিটি এবং আগত অতিথিদের সম্প্রীতির শুভেচ্ছা বাণী ভাষণ, অন্যদিকে দুর্গা প্রতিমা ঘিরে ভক্ত-পূজারীদের ঢাক-ঢোল আর শঙ্খধ্বনি সহকারে সিঁদুর লেপনের আরতিতে মুখরিত চারপাশ। যেখানে বৈরী আবহাওয়া বাঁধ সাধতে পারেনি ভক্ত-পূজারীদের কাছে।

এসময় দুর্গাদেবীকে বিদায়ের আরাধনায় ভক্ত-পূজারীরা প্রার্থনা করেছেন অশুভ শক্তির পরাজয় আর শুভশক্তির বিজয়ের।

প্রতিমা বিসর্জনে আসা প্রতিভা শর্মা বলেন, ‘পবিবেশটা অনেক ভালো। বিজয়া দশমীতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এসে অনেক মজা করছি।’

রিপন শর্মা বলেন, ‘পূজা আসবে বলতে বলতে পূজা শেষ হয়ে গেল। এটি যেমন দুঃখজনক ঠিক তেমনি আনন্দেরও।’

সমীর দাশ বলেন, ‘প্রত্যাশার চেয়ে এবারের দুর্গা পূজা অনেক ভালো হয়েছে। কারণ সেনা বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে অবস্থান এটা চোখে পড়ার মতো ছিল। যার কারণে অনেক ভাল পরিবেশে মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে পারলাম। প্রশাসনকে অনেক বেশি ধন্যবাদ জানাই।’

বিসর্জন অনুষ্ঠানে শুধু ভক্তদের অশ্রুসিক্ত বিদায়ই নয়, পূজার টানা ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় সমুদ্রসৈকত জুড়ে। তারা বলছেন, ছুটিতে ঘুরতে বিসর্জন অনুষ্ঠান উপভোগ করে তারা বাড়তি আনন্দ পেয়েছেন।

এদিকে চলতি বছর জেলায় ১৫২টি প্রতিমা আর ১৬৫টি ঘট পূজা মিলে মোট ৩১৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সৈকতে আনা হয়েছে বলে জানান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বিসর্জন অনুষ্ঠান সম্পাদন করতে পারায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

এদিকে সৈকতে বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে লাখো ভক্ত-পূজারীদের পাশাপাশি আগত পর্যটক দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দিতে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক। তাদের কঠোর নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় বিসর্জন অনুষ্ঠান।

কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সড়ক থেকে শুরু সমুদ্রসৈকত এলাকায় সবার সমন্বয়ে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়। প্রতিটি সড়কে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। এছাড়াও সৈকতে স্থাপন করা হয় ওয়াচ টাওয়ার। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোন অবস্থানে ছিল। যার কারণে খুবই সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা সার্বক্ষনিক টহল কার্যক্রম ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আনন্দ-বিষাদের মিশেলে সমুদ্রসৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, দেবী দুর্গা বিদায় নিলেও রেখে গেলেন আশীর্বাদের বারতা। এতে মানব জাতিসহ সকল প্রাণীকূলের জন্য বিশ্ব শান্তিময় হয়ে উঠবে এমনটা প্রত্যাশা ভক্ত-পূজারীদের।