News update
  • Khaleda now not fit for travelling: Medical Board     |     
  • Panchagarh records lowest temperature 10.5°C so far this year      |     
  • Christmas returns to Bethlehem after two years of Gaza war     |     
  • কলাপাড়া মুক্ত দিবসে এবার সাড়া নেই কার     |     
  • One killed, two injured in attack at Ctg meeting over marriage     |     

১৩ নভেম্বর ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রাজধানী

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2025-11-13, 8:34am

img_20251113_083411-80d15506f15dd70b51a84431f1cf6a271763001293.jpg




চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার তারিখ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) নির্ধারিত হতে পারে। এরইমধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া নস্যাতে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও এবং আগুন সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। লন্ডন থেকে পেইড অ্যাক্টিভিস্টরা জ্বালাও-পোড়াও বাড়াতে উসকানি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষে থেকে ওইদিন দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

তবে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ১৩ নভেম্বর নাশকতার সব ধরনের অপচেষ্টা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে.জে. (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনা মোতায়েনের জন্য সেনা সদরে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

জানা যায়, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এক পর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের করা আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি।

গত ২৩ অক্টোবর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনিও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি চান।

অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের জবাব দেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস প্রার্থনা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় কবে দেয়া হবে, তা আগামী ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান।

মামলার যত অভিযোগ

প্রথম অভিযোগ: গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।

দ্বিতীয় অভিযোগ: হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে দেয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের কাছেও এই নির্দেশ চলে যায়। এর আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে তাদের (হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন) বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়।

চতুর্থ অভিযোগ: রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

পঞ্চম অভিযোগ: আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে হত্যার আগুনে পোড়ানোর ঘটনায়ও অভিযুক্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন।

লকডাউন ঘোষণা ও জ্বালাও-পোড়াও

রায়ের তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন কর্মসূচি’ ঘিরে রাজধানীতে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ-বাসে অগ্নিসংযোগ চলছে। সর্বশেষ রাজধানীতে ১৩টির মতো বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া আতঙ্ক ছড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা। পুলিশ বলছে, ঢাকার বাইরে থেকে এসে এসব নাশকতা করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে এসব কাজে ভাড়ায় লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঢাকায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে, ডিএমপির ৫০টি থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যের পাশাপাশি বুধবার ভোর থেকে হাইকোর্ট এলাকা, বাংলা একাডেমি, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনায় বিজিবি সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে, তবে রাজধানীতে শঙ্কার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েনের চিঠি

লকডাউন এবং জ্বালাও-পোড়ােয়ের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েনের চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে সেনা মোতায়েন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনালের অফিস থেকে সেনা সদর দফতরে আজ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

নাশকতা ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, চলছে তল্লাশি। ছবি ভিডিও থেকে নেয়া

এদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘রায়ের দিন নির্ধারণের এখতিয়ার পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আগামীকাল রায়ের ডেট আমরা পাবো।’

রায়ের তারিখ ঘিরে সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি থ্রেট টু জাস্টিস মনে করছি না। তারা এ বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে এগুলো করছে।’

জ্বালাও-পোড়াও প্রতিহতেমাঠে থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো

আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি নিয়ে বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী রেসে নেই, তাদের নেত্রীও নেই সুতরাং তাদের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কনসার্নে থাকার মতোই বিষয়। বাহিনীগুলো কঠোর অবস্থানে থাকবে এটাই প্রত্যাশা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়াও যে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শক্ত অবস্থান নিতে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। এনসিপির নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘যেখানেই আওয়ামী লীগ দেখবেন, আওয়ামী লীগের আগুন–সন্ত্রাস দেখবেন বা জনগণের ক্ষতি করার পরিকল্পনা দেখবেন, তাদের ধরে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।’

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নাশকতা প্রতিরোধে আট দল সরকারের পাশে থাকতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াত কর্মীরা ১৩ নভেম্বর মাঠে থাকবে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের যেকোনো নাশকতা রুখে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

আর বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনে পরাজিত শক্তির কোনো ঠাঁই হবে না জানিয়ে তাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলার কথা বলেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি আরও বলেন, লাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদল ৭২ এর বাকশালপন্থি, অন্য দল ২৪ এর জুলাইপন্থি। ২৪ এর পরাজিত শক্তিরা ১৩ নভেম্বর যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বাকশালপন্থিদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে জুলাইপন্থিরা।

এছাড়া জুলাই আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে।