বিদা মেহরানিয়া তার স্বামীর জীবন রক্ষার চেষ্টা করছেন। ইরানে তাকেমে মাসের ২১ তারিখ অর্থাৎ নয় দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা রয়েছে।
ইরানের কাছে ৫০ বছর বয়সী আহমাদ রেজা জালালি হচ্ছেনইসরাইলের গুপ্তচর। তার সহকর্মীদের কাছে তিনি একজন সম্মানিত চিকিৎসক যিনি ডিজাস্টার মেডিসিন শাস্ত্রেরচিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসায় এটা সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ক্ষেত্র। মেহরানিয়ার তার স্বামীকে অত্যন্ত ভালবাসেন।
মেহরানিয়ার স্টকহোম থেকে দ্যঅ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন “এটা একটি দুঃস্বপ্ন।” তিনি সেখানে তার ১০ বছরের ছেলে এবং ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়েথাকেন। তাদের বাবা গ্রেফতারহবার পর ছয় বছর তারা তাদের বাবাকে দেখেনি। “তারা আমার স্বামীকে হত্যা করতে চায়।”
মেহরানিয়া জালালির মুক্তির জন্য তাঁর সুইডিশ নাগরিকত্ব এবং স্টকহোমকে চাপ দেওয়ার প্রচেষ্টার উপরে যে আশা করেছিলেন তা যেন ম্লান হতে শুরু করছে। চেষ্টা কতদূর পর্যন্ত করা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয় তবে গত সপ্তাহে সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন এবং সেই সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও। মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন এবং জালালিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেছিলেন।
তবে মনে হচ্ছে, সুইডেনের সঙ্গে জালালির সম্পর্কের কারণেইইরান তাকে কারাবন্দী করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তেহরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তেহরানেরউত্তেজনা এই দুটি কারণে ইরানে কিছু বিদেশী পণবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে পশ্চিমাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ছক ক্রমাগতই দেখা যাচ্ছে।
বুধবার ইরান বলেছে, প্রায় ভেঙ্গেপড়া পারমাণবিক চুক্তিকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টায় রাজধানীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর ইরানঅজ্ঞাত পরিচয় দুই ইউরোপীয়ব্যক্তিকে আটক করেছে।
ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমপক্ষে এক ডজন দ্বৈত নাগরিকত্ব ধারণ করে এমন ব্যক্তিদের কারারুদ্ধ করেছে। তাদের বেশিরভাগই ব্যাপকভাবে বিতর্কিত গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক রয়েছে।
এটা কিভাবে শুরু হয়েছিল?
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে জালালি জন্মগ্রহণ করেন। ইতালি এবং সুইডেনে তিনিতাঁর কর্মজীবন সফলভাবে গড়ে তুলেছিলেন। মহাদেশটি জুড়েমেডিকেল জার্নালে জালালি ৪০টিরও বেশি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন এবং শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ইরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি কর্মশালায় যোগ দেওয়ার জন্য তার কাছে আমন্ত্রণ আসে। তিনি সেখানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে দু’বার ভাবেননি।
তারপর তিনি আর কখনোই তার পরিবারকে দেখেননি।
নিরাপত্তা বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ আনা হয় এবং মনে করা হচ্ছে যে মোসসাদরা ঐ বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে। তাকে ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে নিয়ে যায় যেখানে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তথ্য সূত্র: ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।