রমজানজুড়ে স্বস্তি দিলেও ঈদের আগ মুহূর্তে এসে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শাক-সবজির দাম। পাশাপাশি দাম বেড়েছে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের। দাম বেড়েছে সরু চালেরও। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) কেরানীগঞ্জের আগানগর, জিনজিরা এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
আর কদিন বাদেই ঈদ। এরমধ্যেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা। তবে ক্রেতা কমের বাজারে শাক-সবজির চড়া দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করায় পণ্য কম আসছে। এতে সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে কোনো কোনো সবজির দাম। মূলত সবজি কম আসায় সরবরাহ কমে গেছে বাজারে। এতে বাড়ছে দাম।
বাজারে প্রতি কেজি করলা ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, আলু ২০ টাকা, মিষ্টি আলু ৪০ টাকা, লতি ৬০-৮০ টাকা ও পটোল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৪০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা, কহি ৫০ টাকা, শিম ২৫ টাকা ও ধনেপাতা ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রমজানজুড়ে ভোগানো বেগুন ও শসাও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। প্রতি কেজি বেগুন ৮০-১২০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। তবে দাম কিছুটা কমে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়।
আর বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি ২০-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, ব্রকলি ৪০-৫০ টাকা, চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে দাম ওঠানামা করছে লেবু, শসা ও বেগুনের। যে সপ্তাহে সরবরাহ একটু বেশি হয়, তখন দাম কমে আসে। আবার সরবরাহ কমলে, দাম বেড়ে যাচ্ছে।
সবজির বাজারের যখন এই হাল তখন ভোক্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে মাছের দামও। কেননা সপ্তাহ ব্যবধানে আরও অস্থির হয়েছে ইলিশের বাজার। কেজিপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছের দাম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. শুকুর আলী বলেন, বাজারে ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। দিন দিন ইলিশের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে কমছে বেচাবিক্রিও। তাছাড়া ঈদের কারণে মাছ কম আসায় বেড়েছে অন্যান্য মাছের দাম।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩৫০০ টাকা, ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩০০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৯০০-২০০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৪০০-১৬০০ টাকা পর্যন্ত।
দাম বেড়েছে অন্যান্য মাছের। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা ও শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভাতে-মাছে বাঙালির স্বস্তি নেই চালের বাজারেও। সপ্তাহ ব্যবধানে আরও বেড়েছে সরু চালের দাম। গত দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে এ চালের দাম বেড়েছে ৫-৮ টাকা পর্যন্ত। চালের এই চড়া দামে নাজেহাল ক্রেতারা।
তারা জানান, রোজার সময় চালের চাহিদা কম থাকে। এ সময় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এটি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের অংশ। আফিফ নামে এক ক্রেতা বলেন, রমজানেও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার লুট করছে। আর পকেট কাটছে ভোক্তার।
চালের বাজারের এই অস্থিরতা অকপটে স্বীকার করেন খুচরা ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, মিনিকেট চালের মজুত শেষের দিকে হওয়ায় ফের দাম বাড়ছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মাঝারি ও মোটা চালের দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, মিনিকেট চালের দাম অনেক বেড়েছে। কেজিতে অন্তত ৫-৮ টাকা। সেইসঙ্গে নাজিরশাইলের দামও কেজিতে এক–দুই টাকা বাড়তি।
আর রাজধানীর কারওয়ানবাজারের বরিশাল রাইছ এজেন্সির বিক্রেতা জানান, বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮৬-৯০ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৬-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।
এ বিষয়ে সম্প্রতি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া সময় সংবাদকে বলেন, এই মুহূর্তে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। দাম বাড়াচ্ছেন মিল মালিকরা। সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছে ঠিকই তবে চালের বাজারে ও মিলগুলোতে পর্যাপ্ত মনিটরিং করছে না। মনিটরিং না বাড়ালে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
এদিকে বাজারে সামান্য বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি রসুন ৮০ টাকা ও আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে। সময়