নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। দেশটির টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক অর্থনীতি, বাণিজ্যিক ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
শান্ত, নিবিড় হিমালয়কন্যা নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন টালমাটাল। ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে ভারত ও চীনে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, এরইমধ্যে প্রতিবেশী দেশটির অর্থনীতি, সীমান্ত বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সীমান্তে পণ্য প্রবাহে বড় ধরনের বিঘ্ন দেখা দিতে পারে। এতে সরবরাহ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দুই দেশের বাণিজ্য।
এখন নেপালের বিনিয়োগ পরিবেশও অনুকূলে নেই। দেশটিতে দেড় শতাধিক ভারতীয় কোম্পানির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নেপালে বিদেশি বিনিয়োগের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ভারতের। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নতুন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন অনেকে।
ঝুঁকিতে ভারতের উচ্চাভিলাষী জ্বালানি পরিকল্পনাও। আগামী এক দশকে নেপাল থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে থাকা প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ডোদোঢারা–বেরেলি ও ইনরুয়া–পুর্নিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নির্মাণও বিলম্বিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
নেপালের অস্থিতিশীলতায় দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব আরও বাড়ার শঙ্কা করছে ভারত। এতে অঞ্চলটিতে ভারতের কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার নীতি চাপে পড়তে পারে। সীমান্তপথে চলাচল সীমিত হওয়ায় ভারত, বাংলাদেশ ও ভুটানের সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বাধা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রকল্পগুলোও এখন হুমকির মুখে। নেপাল ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের এই প্রকল্পে যোগ দেয়, যার উদ্দেশ্যই ছিল অবকাঠামো উন্নয়ন, রেল ও সড়ক সংযোগ, আর্থিক সহায়তা এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যে নতুন সুযোগ তৈরি করা।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তারের যে কৌশল, সেটিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক অর্থনীতি, বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য গভীর উদ্বেগের।