দাবানল, বন্যার মতো একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত বিশ্ব। গবেষণার তথ্য বলছে, ২০২৩ সালেই পৃথিবীর গড় উষ্ণতা পৌঁছেছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা পৃথিবী এবং মানুষের জন্য অশনিসংকেত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রয়োজন কার্বন নির্গমনে যথাযথ পদক্ষেপ।
জলবায়ু সংকট এখন আর শুধু পরিবেশবাদীদের নয়, প্রতিটি মানুষের গল্প। প্রতিদিনের জীবন থেকে শুরু করে প্রজন্মের ভবিষ্যৎ, সবই এখন ঝুঁকির মুখে। এক সময় যা ছিল ভবিষ্যদ্বাণী, তা এখন বাস্তব।
নাসা বলছে, আগের তুলনায় গত ২০ বছরে উষ্ণতার গতি বেড়েছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা পৌঁছেছে এমন এক জায়গায়, যেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে ঝুঁকি।
থাইল্যান্ড থেকে ব্রাজিল—বিশ্বজুড়ে চতুর্থবারের মতো শুরু হয়েছে প্রবাল প্রাচীরের সর্ববৃহৎ ব্লিচিং। সমুদ্র উষ্ণ হয়ে পড়ায় শত শত প্রজাতির প্রবাল ধবধবে সাদা হয়ে মৃত প্রায়।
আটলান্টিক মহাসাগরে দুর্বল হয়ে পড়ছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চালন ব্যবস্থা। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৫০ সালের পর এটি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত দুর্বল হয়েছে। এর মানে ইউরোপে তীব্র ঠান্ডা, যুক্তরাষ্ট্রে ঘন ঘন হারিকেন আর আফ্রিকায় খরার প্রবণতা আরও বেড়ে যাওয়া।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘হারিকেন মিল্টন’ একদিনেই রূপ নেয় ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-৩–এ। ফ্লোরিডা, জ্যামাইকা আর নর্থ ক্যারোলাইনার শহরগুলো ভেসে যায় প্রবল বৃষ্টির জলোচ্ছ্বাসে।
তাপদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী-নালা, আর সেই সুযোগে দাবানলে পুড়ছে পৃথিবী। আমাজনে গত বছরের খরার প্রভাবে পানির স্তর নেমে গেছে রেকর্ড সর্বনিম্নে। বিশাল এলাকাজুড়ে আগুন, ধোঁয়া আর মৃতপ্রাণ প্রকৃতি। গবেষণা বলছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে আমাজনের ৪৭ শতাংশ অঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাবে।
নতুন গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালেই পৃথিবীর গড় উষ্ণতা পৌঁছে গেছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দুই হাজার বছরের বরফ স্তর বিশ্লেষণ করে উঠে এসেছে ভয়ংকর এ তথ্য।
বলা হচ্ছে, তিন মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী ছিল মাত্র ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ। তখন যা কয়েক লাখ বছরে ঘটেছে, সেটা আমরা ঘটিয়ে ফেলেছি মাত্র দেড় শতকে।
পৃথিবীর বরফে ঢাকা আর্কটিক অঞ্চল এতদিন কার্বন সংগ্রহ করলেও এখন উত্তাপে গলছে। উল্টো কার্বন ছাড়ছে বাতাসে।
আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠা? সেটিও আবহাওয়ার সঙ্গে জড়িত। বরফ গলার ফলে ভূমির চাপ কমে যাচ্ছে, নিচে তৈরি হচ্ছে অতিরিক্ত লাভা। ফলে বারবার অগ্ন্যুৎপাত দেখা দিচ্ছে, যার ঘনত্ব বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রয়োজন ‘নেট জিরো’ কার্বন নির্গমন। সেটি না হলে, পরিবর্তন নয়, ধ্বংসই হয়তো ভবিষ্যতের নিয়তি। সময়।