News update
  • 2025: Resilient Economies, Smart Development, and More Jobs      |     
  • Dhaka rejects India's statement on incident at BD HC residence, New Delhi      |     
  • Stocks end lower; trading falls at DSE, improves at CSE     |     
  • No need to be kind to election disruptors: EC to law enforcers     |     
  • No Media Faced Arson Attacks in 53 Years: Mahfuz Anam     |     

যে সাতটি উপায়ে বিভিন্ন দেশ জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলা করছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক জীবাশ্ম 2022-09-09, 7:47am




করোনাভাইরাস মহামারি, খরা, তীব্র দাবদাহ এবং সর্বোপরি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে জ্বালানি সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তেল ও গ্যাসের মূল্য অত্যধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

জ্বালানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য, পরিবহন, পরিষেবা - সবকিছুরই খরচ বেড়েছে। এক কথায় জীবনযাত্রার ব্যয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেসব সামাল দিতে লোকজনকে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

এর ফলে প্রায় সব দেশের সরকারের ওপরেই বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা গ্রহণ করছে জ্বালানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে ব্যয় সঙ্কোচনের অভিনব সব কর্মসূচি।

এখানে সাতটি উপায়ের কথা তুলে ধরা হলো যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকার জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা করছে।

জ্বালানি সঙ্কট সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে ইউরোপে।

ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে রাশিয়া নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইন দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ প্রথমে সীমিত এবং পরে পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে এই মহাদেশে জ্বালানির মূল্য হু হু করে বেড়ে যেতে শুরু করে।

ইটালি, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার গ্যাসের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল।

এর ফলে এসব দেশের সরকার জ্বালানির যাতে অপচয় না ঘটে তার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

হিটার ও এসির ব্যবহার কমানো

এ বছরের শীত মওসুমে গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমানোর এক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।

একই সাথে ১লা নভেম্বরের মধ্যে তাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ যাতে ৮০ শতাংশ পূর্ণ থাকে সেটাও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

জার্মানি, ফ্রান্স এবং স্পেনের সরকার জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়ে নতুন কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এসব নির্দেশনায় সরকারি ভবনগুলোতে হিটিং সীমিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসব আদেশে বলা হয়েছে সরকারি ভবনে শীত মওসুমে তাপমাত্রা যাতে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না ওঠে।

যেসব ভবনে এয়ার কন্ডিশনার বা এসি ব্যবহার করা হয় সেসব ভবনের ভেতরে তাপমাত্রা কত হবেও সেটাও নির্ধারণ করে দিয়েছে ফ্রান্স ও স্পেনের সরকার।

ফ্রান্সে এই তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ২৬ এবং স্পেনে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখতে বলা হয়েছে।

ফ্রান্সে যেসব দোকানপাটে এসি আছে সেগুলোর দরজা সবসময় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ ভঙ্গ করলে ৭৫০ ডলার জরিমানা করা হবে।

ফ্রান্সের সরকার মনে করে তারা যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তার ফলে জ্বালানির ব্যবহার ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর জার্মানি যতটা নির্ভরশীল, প্রতিবেশি ফ্রান্স ততটা নির্ভরশীল নয়।

ফ্রান্সে বিদ্যুতের ৪২ শতাংশ আসে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।

তবে দেশটিতে এবছর যে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ ও খরা দেখা দিয়েছে, তার ফলে বেশ কয়েকটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চুল্লি ঠাণ্ডা রাখার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে এসব কেন্দ্রে বিদ্যুতের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

"ইউরোপের দেশগুলোতে শুধুমাত্র হিটিং কয়েক ডিগ্রি কমিয়ে রাখার মতো সাধারণ কিছু পদক্ষেপ নিলে অনেক জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। এর পরিমাণ নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে শীতকালে সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাসের সমান," বলেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা।

বাংলাদেশেও সরকারি ভবনে এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার সীমিত করা এবং কর্মকর্তাদের স্যুট-টাই না পরে অফিসে আসারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাতি নিভিয়ে রাখা

জার্মানি ঘোষণা করেছে যে তারা রাতের বেলায় সরকারি ভবন ও স্মৃতিসৌধের মতো স্থাপনাগুলোতে আলো জ্বালাবে না। স্পেনের দোকানপাটেও রাত দশটার মধ্যে বাতি নিভিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশেও জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে রাত আটটার পর দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, এর ফলে প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বিবিসিকে বলেছেন, "সন্ধ্যা ছ'টার পর বিদ্যুতের চাহিদা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বেড়ে যায়। এই পরিবর্তন মূলত হয় সন্ধ্যার পর বাতি জ্বালানোর কারণে।"

"সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের এই বাড়তি চাহিদা যে শুধু দোকানপাট চালু থাকার জন্য তৈরি হয় তা নয়, মানুষের ঘরবাড়ির বাতিও এর কারণ। তবে আমাদের হিসেবে, দোকানপাট বন্ধ থাকলে প্রায় অতিরিক্ত চাহিদার ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব," বলেন তিনি।

এছাড়াও জুলাই মাস থেকেই জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমিত করেছে বাংলাদেশের সরকার। ফলে বহু বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় রেশনিং আকারে লোডশেডিং চালু করা হয়েছে।

কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো

চীনের জ্বালানি সঙ্কট ভিন্ন ধরনের।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চীনে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ তেমন একটা বিঘ্নিত হয়নি, তবে দেশটি এবছর ভয়াবহ রকমের তাপপ্রবাহ ও খরায় আক্রান্ত হয়েছে।

এর ফলে দেশটির নদী নালা শুকিয়ে গেছে যার প্রভাব পড়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ওপর।

উদাহরণ হিসেবে চীনের সিচুয়ান প্রদেশের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এই শহরে যতো বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়, তার ৮০ শতাংশই আসে জলবিদ্যুতের বাঁধ থেকে।

কিন্তু নদীর পানি কমে যাওয়ার কারণে সেখানকার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সিচুয়ান কর্তৃপক্ষ সব কলকারখানা ছ'দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়।

একই সাথে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর জন্য সিচুয়ান প্রদেশের সব অফিস এবং দোকানপাটকে বাতি না জ্বালানোর পাশাপাশি এসি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রতিবেশী চংকিং রাজ্যেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীনের কৃষি মন্ত্রণালয় কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি নামানোর এক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।

এই প্রক্রিয়ায় আকাশে মেঘের ভেতরে কিছু রাসায়নিক পদার্থ পাঠানো হয় যা বৃষ্টিপাত ঘটায়।

তবে কবে এটা করা হবে এবং কোথায় করা হবে এসব বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।

কম কাজ করা

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে পাকিস্তানের সরকারি অফিসে কাজের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জুন মাসে তারা ঘোষণা করে যে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখন থেকে সপ্তাহে ছ'দিনের পরিবর্তে পাঁচদিন কাজ করবেন।

কিন্তু এর মাত্র কয়েক মাস আগে দেশটির নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তাদের কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এর কয়েক সপ্তাহ পরেই পাকিস্তানে এতো গরম পড়ে যে এক পর্যায়ে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছায়। এর ফলে দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহের জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়।

একই সময়ে সারা বিশ্বে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে।

এর ফলে দেশটিতে এখন শুক্রবারে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাড়ি থেকে কাজ করার এক পরিকল্পনাও বিবেচনা করা হচ্ছে।

জ্বালানী সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশেও অফিসের সময়সূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুসারে এখন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস সকাল আটটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত খোলা থাকছে।

ব্যাংক খোলা থাকবে সকাল নয়টা থেকে চারটা পর্যন্ত।

স্কুল ছুটি

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের কর্ম-ঘণ্টা কমানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সব স্কুল কলেজের সাপ্তাহিক ছুটিও একদিন বাড়ানো হয়েছে।

এতদিন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু শুক্রবারে বন্ধ থাকতো। কিন্তু এখন শনিবারেও বন্ধ রাখা হয়েছে।

দেশের সব সরকারি স্কুল ও কলেজসহ অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সপ্তাহে এক দিন ছুটির নিয়ম মেনে চলে। তবে কিছু কিছু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তাহে দু'দিন ছুটি দিয়ে থাকে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দু'দিন করার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এখন থেকেই তা কার্যকর করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজির ওপর নির্ভরশীল।

জ্বালানির বিভিন্ন ধরনের মধ্যে এলএনজি অনেক বেশি ব্যয়বহুল।

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি সরকার ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল বা কেরোসিনের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি করেছে।

পরমাণু বিদ্যুৎ

জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় ফিরে গেছে।

জার্মানিতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পুনরায় চালু করা হয়েছে।

অথচ জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকানোর লক্ষ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে উন্নত দেশগুলো কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছিল।

এবছরের জুন মাসে ভারত থেকে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ কয়লা রপ্তানি করা হয়েছে তা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

কিন্তু এর আগে ভারত সরকার কয়লা রপ্তানি কমিয়ে আনার কথা বলেছিল।

এর বিকল্প চিন্তাভাবনাও আছে কোনো কোনো দেশের। তাদের একটি জাপান।

প্রায় ১১ বছর বিরতির পর দেশটি নতুন নতুন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।

ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার জের ধরে জাপানে এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

জাপানে কর্তৃপক্ষ এখন এসব কেন্দ্র পুনরায় চালু করার কথা বিবেচনা করছে।

সূর্যের আলো

বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন বর্তমান এই সঙ্কটের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।

ইতোমধ্যে ফ্রান্স বায়ু-শক্তি থেকে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর এক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা এবং চীনের মত দেশ সৌরশক্তির উপর জোর দিচ্ছে। তারা তাদের নাগরিকদের উৎসাহিত করছে বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর জন্য।

বাড়ির ছাদে উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের জন্য বিক্রি করার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশে এখন নীতিমালাও তৈরি করা হচ্ছে। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।