
দেশের চার জেলায় বেশ কিছু এলাকাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সেই সঙ্গে এসব এলাকার জন্য ১১টি নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে, যা প্রতিপালন করা বাধ্যতামূলক।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত সরকারি গেজেট ২৮ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ২৫টি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়ন অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন, ৪০টি ইউনিয়ন উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এবং ৬৬টি ইউনিয়ন মধ্যম মাত্রার পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার পটিয়া পৌরসভার পাঁচটি মৌজা অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এবং তিনটি মৌজা উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সাতটি মৌজা অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন, নয়টি ইউনিয়নের ২৭টি মৌজা উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা এবং আটটি ইউনিয়নের ৩০টি মৌজা মধ্যম পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি আইন, ২০২৩’-এর ধারা ১৭ অনুযায়ী পানি সংকটাপন্ন এলাকার সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে জলাধার বা পানি ধারক স্তরের সুরক্ষার জন্য যথাযথ অনুসন্ধান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে ২৮ অক্টোবর সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু এলাকা পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
পানি সংকটাপন্ন এলাকায় পালনীয় নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-
১. পানি সংকটাপন্ন এলাকায় ‘বাংলাদেশ পানি আইন, ২০২৩’ এর ধারা ৩ ও ১৮ অনুযায়ী পানি সম্পদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ব্যবহার যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
২. খাবার পানি ছাড়া অন্য কোনো কারণে নতুন করে নলকূপ স্থাপন ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ থাকবে এবং খাবার পানি সরবরাহ ছাড়া অন্য কোনো কারণে বিদ্যমান নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ থাকবে।
৩. ভূগর্ভস্থ পানি নির্ভর শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না।
৪. খাল, বিল, পুকুর, নদী তথা কোনো জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না এবং জলাশয়গুলো জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
৫. জনগণের ব্যবহারযোগ্য খাস জলাশয় ও জলমহালগুলো ইজারা দেওয়া নিরুৎসাহিত করতে হবে।
৬. জল রাতের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত করা যাবে না।
৭. কোনো জলাধারের সমগ্র পানি আহরণ করে নিঃশেষ করা যাবে না।
৮. ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন কাজ করা যাবে না।
৯. নদী-জলাশয়-লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তরল ও কঠিন অপরিশোধিত বর্জ্য নির্গমন ও দূষণ করা যাবে না।
১০. অধিক পানি নির্ভর ফসল উৎপাদন নিরুৎসাহিত বা সীমিত করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে পানি সাশ্রয়ী ফসলের আবাদ বৃষ্টি করতে হবে।
১১. জনসাধারণের সুপেয় পানি ও গৃহস্থালি কাজে পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য নির্দেশনা প্রদান করা যাবে।
এসব নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে তা বাংলাদেশ পানি আইনের ২৯ ধারা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ধারা অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।