News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের ভাগ্যে কী আছে, টাকা ফেরত পাবে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2024-06-02, 10:50am

fdgsdgsdg-c78722a5cb5770625f4b5fb962192e8d1717303840.jpg




কেউ জমি জমা সব বিক্রি করেছেন, কেউ বন্ধক রেখেছেন সোনা দানা, গবাদি পশু, কেউ ঋণ করে টাকা জোগাড় করেছিলেন মালয়েশিয়ায় যেতে। অনুমোদন ও ভিসা হওয়ার পরও কয়েক হাজার বাংলাদেশি কর্মীর সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে।

কেননা, কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার। শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেও না পেয়ে তাদের অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরেছেন বাড়িতে। অন্যদিকে যারাও গিয়েছেন তাদেরও গুনতে হয়েছে তিন থেকে চারগুণ বাড়তি বিমান ভাড়া।

মালয়েশিয়া সরকার সময় সীমা বেধে দিয়ে আগে থেকে ঘোষণা দেয়ার পরও কেন এমন সংকট তৈরি হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মধ্যে সমন্বয়নহীনতা এবং সিন্ডিকেট করে লোক পাঠানোকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।

সিন্ডিকেট করে লোক পাঠানোর প্রতিযোগিতার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংস্থা রামরু।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর এক ধরনের 'অসম আদান-প্রদানের' কারণেই এটা তৈরি হয়েছে।

এ কারণে যাদের টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারেনি সংস্থাগুলো তাদেরকে টাকা ফেরত দিতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান তিনি।

শনিবার সিলেটে গণমাধ্যমের কাছে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির বা বায়রার গাফেলতির কারণেই শ্রমিকরা মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।

"আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখছি। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে," বলেন প্রতিমন্ত্রী।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি বা বায়রা বলছে, একেবারে শেষ পর্যায়ে বেশ কিছু ই-ভিসা ইস্যু হওয়ার কারণে ও ফ্লাইটের স্বল্পতার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। সেজন্য শেষ পর্যন্ত সবাইকে মালয়েশিয়া পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে দাবি করছে বায়রা।

সংগঠনটির সদ্য সাবেক মহাসচিব, শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় মিশনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার অথরিটিকে অনুরোধ করেছিলাম সময়টা বাড়ানো জন্য। কিন্তু তারা সময় বাড়ায়নি”।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাবার জন্য কর্মীরা বিমান টিকিট ক্রয় করতে ট্রাভেল এজেন্টদের ওপর নির্ভর করে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ আটাব বলছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি, ও বায়রার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।

আটাব-এর প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম আরেফ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সব পক্ষের একটা গা ছাড়া ভাব ছিলো। যখন মালয়েশিয়া সরকার একটা ডেডলাইন দিয়েছে তখন কিন্তু বায়রা ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের একটা সমন্বয় করার দরকার ছিল”।

কী আছে বঞ্চিত কর্মীদের ভাগ্যে?

করোনা মহামারি শেষে ২০২২ সালে ফের শ্রমবাজার চালুর ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, গত ২১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রায় পাঁচ লাখ ২৪ হাজার কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়।

এসব কর্মীদের মালয়েশিয়া যাবার শেষ সময় বেঁধে দেয়া হয় গত ৩১ মে পর্যন্ত। বিষয়টি মালয়েশিয়ার তরফ থেকে বাংলাদেশকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে যায় চার লাখ ৯২ হাজার কর্মী। বাকি প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিকের মধ্যে গত শুক্রবার মোট ১০টি ফ্লাইটে দেড় হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পান।

কিন্তু বাদ পড়া সাড়ে ৩১ হাজার শ্রমিকের অনেকেই এদিন বিমানবন্দরে আসেন মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।

প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মি. চৌধুরী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা যেন ক্ষতিপূরণ পায়।

এই সংকটের দায় কার?

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার উন্মুক্ত হয় দু'বছর আগে। তখন বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ঘোষণার ঘোষণা দেয় দেশটি।

এই ঘোষণার পর থেকেই সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রামরুর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মিজ. সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “পুরো সংকট তৈরি হয়েছে কিছু এজেন্সির সিন্ডিকেট করে লোক পাঠানোর উদ্যোগের কারণে। এমনসব প্রতিষ্ঠানে লোক দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে প্রতিষ্ঠান আছে কী না সেটিও যাচাই করা হয়নি”।

এমন সংকট তৈরি হবে সেটি জানার পরও লোক পাঠানো কেন হয়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তবে এই অভিযোগে বায়রার বক্তব্য হচ্ছে, সিন্ডিকেট নয় কলিং ভিসা হওয়ার পরও ই-ভিসা না হওয়া এবং ফ্লাইট সংকটের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

বায়রা নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল আমিন স্বপন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “খুব বেশি শ্রমিক বাদ নেই। তারপরও মালয়েশিয়ান অথরিটির সাথে আমাদের সরকার যোগাযোগ করে যাচ্ছে”।

বায়রার মি. নোমান বলেন, “আমরা অপেক্ষায় আছি যাদের ভ্যালিড ভিসা আছে তাদের ব্যাপারে কি পদেক্ষপ নেয় সেটা দেখার জন্য।

গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মি. চৌধুরী বলেন, “আমরা শুরু থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে তাগিদ দিয়েছি। তারা শুরু থেকেই নানা অযুহাত দেখিয়েছি। এই ঘটনায় যারা দায়ী তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে”।

বিমানবন্দরে আহাজারি

শুক্রবার ছুটির দিনে কয়েক হাজার শ্রমিক ভিড় করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এসব শ্রমিকদের সবার কাছে মালয়েশিয়ার ভিসা ছিল। কিন্তু তারা বিমানের টিকেট পান নি বলে অভিযোগ করেন।

তাদের সবাই অভিযোগ করেন রিক্রুয়েটিং এজেন্সিগুলোর সাথে চুক্তির চেয়েও বেশি টাকা দিয়েও অনেকে প্রতারিত হয়েছেন।

তাদের একজন পটুয়াখালীর মো. কাওসার হোসেন। তিনিও তিনদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

শনিবার বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, তিনি ও চার চাচা মোহাম্মদ আবু সাঈদ একটি এজেন্সিকে মালয়েশিয়া যেতে টাকা পাঁচ লাখ ৪০ হাজার করে মোট ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন।

মি কাওসার বলনে, “আজ না কাল, কাল না পরশু করতে করে ঘুরায়ে আমাদের আর কোন টিকেট দেয় নি। তিনদিন বিমানবন্দরে ঘুরে এখন ফেরত আসছে। মানুষের কাছে ধার করে এই টাকা দিছি। এখন এই টাকা আমি কিভাবে ফেরত দিবো”?

শুক্রবার পর্যন্ত এমন আরো যারা অপেক্ষায় ছিলেন তাদের আহাজারি ছিল বিমানবন্দর জুরে।

নারায়ণগঞ্জের একটি এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলেন এমন ২০ জনের মতো শুক্রবার বিমানবন্দরে এসেছিলেন।

তারা জানান, এজেন্সির সাথে তাদের চুক্তি ছিল ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে নিবে। কিন্তু শেষ সময় তাদের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা করে নিয়েছে। শুক্রবার তাদের বিমানবন্দরে আসতে বললেও তাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ করেনি।

বিকেলে ঐ এজেন্সির পক্ষ থেকে একজন এসে জানায় যে বিমানের টিকেট না পাওয়ায় তাদের কিছু করার নেই।

বাড়তি দামেও মেলেনি টিকেট

মালয়েশিয়ায় ওয়ার্কার ভিসা (কর্মী ভিসা) যারা পেয়েছেন তাদের ৩১ মের মধ্যে প্রবেশের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আগে থেকেই জানা ছিল সবার।

গত ১৬ মে পত্রিকায় জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি সবাইকে জানায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অনেক প্রবাসী এ কথা জানতেন না। ২০ মে এর পর বিষয়টি জানাজানি হলে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার হিড়িক পড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ৩১ মে সময়সীমার কারণে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো আসন সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, সাধারণত ঢাকা মালয়েশিয়া রুটে অনওয়ে টিকেটের দাম ৩০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকারে ডেড লাইনের কারণে শেষ সময় যখন টিকেটের চাহিদা বেড়েছে তখন টিকিটের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়েছে।

এজেন্সিগুলো বলছে, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে এই টিকেটের দাম ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। এতে সংকট আর বাড়তে মূল্য দুটোই বেড়েছে।

শুক্রবার বিমানবন্দরে যারা এসেছিলেন তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন চুক্তির চেয়ে ৪০ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিকে। বাড়তি বিমান ভাড়ার কারণেই এটি দিতে হয়েছে বলে জানান তারা।

বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেকে যেতে পারলেও, অনেকেই টিকেট না পেয়ে ফিরে এসেছেন বিমানবন্দর থেকে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ আটাব বলছে, এজেন্সিগুলো ভেবেছিল শেষ মুহূর্তে হয়তো সময় সীমা বাড়াতে পারে মালয়েশিয়া সরকার। কিন্তু তা না বাড়ানোয় শেষ মুহূর্তে টিকেটের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়।

আটাব প্রেসিডেন্ট মি. আরেফ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আগে যেখানে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা ভাড়া ছিল, গত মাসে সেই টিকেট ১ লাখ ৩০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে”।

তিনি বলেন, “সুযোগ পেয়ে অ-নৈতিকভাবে ভাড়া বাড়িয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। যে কারণে যারা যেতে পেরেছেন তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন”। বিবিসি বাংলা