News update
  • Investment Summit Touts Bangladesh’s FDI Promise     |     
  • World Bank Cuts South Asia Growth Forecast     |     
  • ‘Sleeping Prince’ Turns 36 After 19 Years in Coma     |     
  • Child-Friendly TB Drug Flavours Identified     |     
  • Search for thousands buried under rubble in Gaza halts      |     

ভোটার হতে সাত দেশ থেকে ৪৩,৭০৭ প্রবাসীর আবেদন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2025-04-23, 7:53am

34r435345-85c77d91ccf5310fb351b51f523d7eab1745373217.jpg




অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনও (ইসি) চায় প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে। এ লক্ষ্যে ৪০ দেশকে টার্গেট করে কাজ করছে ইসি। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ সাতটি দেশে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ক্রার্যক্রম চালাচ্ছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) পর্যন্ত এ সাতটি দেশ থেকে ৪৩ হাজার ৭০৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার হতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৪২৭ জনের ব্যাপারে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ভোটার হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর তদন্ত শেষে ৩ হাজার ৪৬৫ জন প্রবাসীর আবেদন বাতিল করেছে ইসি।

প্রবাসীদের ভোটার করা বা না করা নিয়ে ইদানীং বেশ আলোচনা হচ্ছে। তবে, নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। অনেক প্রবাসী অবৈধভাবে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাদের কাছে যথাযথ কাগজপত্র নেই। আবার অনলাইনে ভোটার অবেদন করা গেলেও সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে। অনেক প্রবাসী কাজের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দেশের রাজধানীর বাইরে থাকেন। ফলে দূতাবাসে গিয়ে তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করা বেশ জটিল। তাই অনেকের আগ্রহ থাকলেও ভোটার হওয়া তাদের জন্য কঠিন। আবার একটি বড় অংশের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। কারণ, যারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বিদেশে গেছেন, তাদের ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে পার্সপোর্ট করতে হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও মালয়েশিয়া— এই সাতটি দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসি। অনলাইনে আবেদন করার পর বায়োমেট্রিকসহ দূতাবাসে গিয়ে ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হচ্ছে তাদের। এ সাতটি দেশের বাইরে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরে কার্যক্রমটি সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে ইসি। সেজন্য এ তিনটি দেশে ইসির একটি দল অবস্থান করছে। তারা এসব দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছেন।

অনুবিভাগ বলছে, সাতটি দেশ থেকে মোট আবেদন পড়েছে ৪৩ হাজার ৭০৭টি। যাদের মধ্যে দূতাবাস থেকে বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৯৩৬ জনের। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছে তিন হাজার ৪৬৫টি আবেদন। আর দেশের উপজেলা নির্বাচন অফিস তদন্ত করছে ২১ হাজার ৩৪৭টি আবেদনের। এসব আবেদনের মধ্যে অনুমোদন করা হয়েছে ১৮ হাজার ৪২৭ জনের আবেদন। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৪৬৮ জনের আবেদন।

এসব দেশের মধ্যে ১৮ হাজার ৮১৪টি আবেদন পড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, যা সর্বোচ্চ। আর সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে মালয়েশিয়া থেকে। সেখান থেকে আবেদন পড়েছে ৯২৪ জন। ২০২৪ সালের মে থেকে এ আবেদনগুলো জমা পড়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি। এ ৪০টি দেশকে মাথায় রেখে প্রবাসী ভোটার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

দেশগুলো হলো— যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছে। সবচেয়ে রয়েছে বেশি প্রবাসী রয়েছে সৌদি আরবে, ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ৫শ জন।

সাতটি দেশে এ কার্যক্রম পুরোপুরি চলছে। আরও তিনটি দেশে গিয়েছেন নির্বাচন কসিশনের কর্মকর্তারা। পরে আরও বাকি থাকা দেশগুলোতে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ৪০ দেশে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে আরও অনেক সময় লাগবে। যা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে। কারণ, এসব দেশের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আগে কথা বলতে হবে। তাদের অনুমতি পাওয়া গেলেই কেবল এ প্রক্রিয়ায় আগাতে পারবে ইসি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে পাসপোর্ট। বৈধ পাসপোর্টধারী ছাড়া কেউ এ আবেদন করতে পারবে না। বিদেশে থাকা একটি অংশের বৈধ কাজগপত্র নেই। ফলে যথাযথ কাগজ ছাড়া তারাও আবেদন করতে পারবে না। আবার দূতাবাসে গিয়ে সবার জন্য আবেদন করা এবং তা নিষ্পত্তি করা বেশ কঠিন। এতে তাদের সময় ও অর্থ ব্যয় হবে। ফলে ভোটার হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অনেক প্রবাসী হবেন না। সব মিলিয়ে ধীরে কাজ এগোচ্ছে। ইসি যেভাবে চাচ্ছে, এভাবে সব করতে হলে আরও অন্তত বছর দুয়েক সময় লাগার কথা।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশে আমাদের কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমাদের সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, আইনের বাইরে কোনোভাবে এ কাজ সম্পন্ন করা যাবে না। তারা একটা নির্দিষ্ট ফি নিয়ে ভোটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারা অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণসহ তথ্য ইনপুট দিচ্ছেন। ছবি তোলা ও চোখের আইরিশ নেওয়ার কাজ করছেন। এরপর সেই ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানায় এ তথ্যের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তদন্তে সত্যতা মিললে তাকে ভোটার হওয়ার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এরপর প্রবাসীর এনআইডি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে। আর আমাদের অনেক প্রবাসীর ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। যারা ভোটার হননি, আমরা কেবল তাদের ভোটার করার চেষ্টা করছি।

গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে প্রবাসীদের ভোটদান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো ভালো পদ্ধতি পায়নি কমিশন। প্রবাসীদের ভোটাধিকার যদি নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগ হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান নাসির কমিশন। এনটিভি