News update
  • UN Warns Nearly 900 m Poor Face Climate Peril     |     
  • Global Finance Leaders Eye Gaza’s $70b Reconstruction Plan     |     
  • Over 1 million tickets sold for 2026 World Cup in North America: FIFA     |     
  • Daily struggles persist in Gaza even as ceasefire offers some respite     |     

বাংলাদেশের মংলা বন্দরকে যেভাবে ব্যবহার করবে ভারত

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বানিজ্য 2022-08-09, 8:11am




বাংলাদেশের দুটি বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হওয়ার তিন বছর পর এই প্রথমবারের মতো একটি ভারতীয় জাহাজ মংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানিয়েছেন, এম ভি রিশাদ রায়হান নামের জাহাজটি থেকে ইতোমধ্যেই মালামাল নামানো হয়েছে।

জাহাজটিতে দুটি কন্টেইনার রয়েছে, যার একটি স্থলপথে বাংলাদেশের সিলেট হয়ে ভারতের মেঘালয় যাবে। অন্যটি যাবে কুমিল্লা হয়ে আসাম।

বাংলাদেশের দুটি স্থলবন্দরও সেক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে এই পণ্য ভারতে নিতে। দুটি কন্টেইনারের একটিতে রয়েছে ১৬ টনের মতো লোহার পাইপ। আর অন্যটিতে রয়েছে আট টনের মতো প্লাস্টিক বানানোর উপকরণ। মি. মুসা জানিয়েছেন, জাহাজটি কোলকাতা বন্দর থেকে রওয়ানা দেবার পর ছয়দিন লেগেছে বাংলাদেশের মংলা বন্দর পর্যন্ত পৌছাতে। 

মংলা বন্দর যেভাবে ব্যাবহার করবে ভারত

রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানিয়েছেন, "এই জাহাজটি একটি পরীক্ষার অংশ। ভারতের বন্দর থেকে মংলা পর্যন্ত জাহাজে পণ্য পরিবহনের অভিজ্ঞতা যাচাই করার অংশ হিসেবে এটি এসেছে। আসতে কত সময় লাগে, পণ্য পরিবহনে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, বন্দরের ব্যবস্থাপনা কেমন - এসব বিষয় দেখা হবে।"

"এরকম আরও তিনটি ট্রায়াল জাহাজ আসবে মংলা বন্দরে। যার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রেগুলার পণ্য পরিবহনের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।"

গত অর্থবছরে মংলা বন্দরে ৮৮৬টি এবং তার আগের বছর ৯৭০ টি বিদেশি জাহাজ এসেছে।

মি. মুসা জানিয়েছেন, মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়া করা হলে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের সরকার নির্ধারিত নানা ধরনের ফি দেবে ভারত। "যেমন জাহাজ বন্দরে কয়দিন থাকলো সেটির ফি, জাহাজ থেকে মালামাল বন্দর পর্যন্ত নিয়ে আসা, সেজন্য যেসব যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে তার ভাড়া, জাহাজটিতে কত টন পণ্য এসেছে - তার উপরে নির্ভর করবে এসব ফি কেমন হবে। এরকম নানা রকম অর্থ বন্দর কর্তৃপক্ষকে ভারত পরিশোধ করবে। বাংলাদেশের ভেতরে পরিবহন ব্যবহারের খরচও বহন করবে", বলছিলেন তিনি।

চুক্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। সব মিলিয়ে কন্টেইনার প্রতি মাশুলের পরিমাণ সেসময় ধরা হয়েছিল ৪৮ ডলারের মতো।

ভারতের পণ্য মংলা বন্দরের কাস্টমস পার হয়ে যাবে। পণ্য পরিবহনে যেভাবে প্রয়োজন সেই অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশের নদীপথ ও স্থল বন্দর ব্যাবহার করবে।

বাংলাদেশ-ভারতের চুক্তির আর্টিকেল ফাইভের পোর্ট অ্যান্ড আদার ফ্যাসিটিলিজ অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য আমদানি রপ্তানির তুলনায় ভারতীয় পণ্যকে কম সুযোগ-সুবিধা দেয়া যাবে না।

বাংলাদেশের কি লাভ হবে?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০১৫ সালের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেতর হয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে ভারতের পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি সমঝোতাপত্র সই হয়৷

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দুই দেশের ভেতরে নদীপথ ও বন্দর ব্যাবহার বিষয়ক 'প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড' তৈরি হয়েছে।  এরপর ২০১৯ সালে এই দুটি বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে একটি চুক্তি হয় দু'দেশের মধ্যে। তারই অংশ হিসেবে প্রথম কোন জাহাজ বাংলাদেশে এলো।

বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহন ভারতের জন্য অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হবে৷

বাংলাদেশকেও কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশের সরকারের তরফ থেকে সবসময় বলা হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে এতগুলো রাজ্যে পণ্য পরিবহন করলে দেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রাজস্ব বিভাগ বাড়তি অর্থ আয় করতে পারবে।

প্রটোকলে একে অপরের নদীপথ ও বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের কথা বলা হলেও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে বাংলাদেশ হয়ে পণ্য পরিবহনের বিষয়টিই সবসময় সামনে এসেছে বেশি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু ট্রানজিটের পথ হয়েই থাকবে কি না - সেই প্রশ্নও উঠেছে।

ভারত যখন সেই ১৯৯০এর দশকে প্রথম বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট প্রসঙ্গটি তুলেছিল - তখন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।

তিনি বলছেন, "মংলা বন্দর থেকে ভারত যদি ট্রানজিট সুবিধা নেয়, বাংলাদেশকেও বাংলাবান্ধা দিয়ে নেপালে বা অন্য কোন জায়গা দিয়ে ভুটানে যাওয়ার ট্রানজিট সুবিধা ভারতকে দিতে হবে। এটা নিয়ে বাংলাদেশের বার্গেইন করা উচিৎ। যাতে এটা মাল্টিল্যাটারাল (বহুপাক্ষিক) হয়। সেই সুযোগ বাংলাদেশের আছে। এমন না হলে দুটো সার্বভৌম দেশের মধ্যে একটা সমতার সম্পর্ক হল না।"

বাংলাদেশের সাথে নেপালের সরাসরি সীমান্ত না থাকায় বাংলাদেশ বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে ভারতের জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি হয়ে স্থলপথে নেপালের কাঁকরভিটা যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ যথেষ্ট দরকষাকষি করেনি বলে মনে করেন তিনি। বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে এই পথে স্থলপথে নেপালের কাঁকরভিটা যেতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

এসব কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার এ চুক্তিকে 'অসম' বলে মনে করেন অধ্যাপক আকাশ। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।