একদিকে ইন্টারনেট বন্ধ, অন্যদিকে কারফিউ; সব মিলিয়ে ছাত্র আন্দোলনের সময় উত্তাল জুলাইয়ে জুনের তুলনায় ব্যাংক খাতে লেনদেন কমেছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এদিকে আগস্ট থেকে শুরু হওয়া তীব্র তারল্য সংকট এখনো বিরাজমান। আমানতের টাকা তুলতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা।
ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় জুলাই মাসে সৃষ্ট ব্যাংক খাতের অচলাবস্থা এবং চলমান তারল্য সংকটে কমেছে লেনদেন। সর্বশেষ জুলাই মাসের হিসাব থেকে দেখা যায়, একমাসে ব্যাংকিং মাধ্যমে লেনদেন কমে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের লেনদেন জুন মাসের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ কম ছিল। বিশেষ করে চেকের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এসময় চেকে লেনদেন কমেছে ৫২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।
ছাত্র আন্দোলন দমাতে হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্তে টানা ১০ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে ডিজিটাল লেনদেনেও। একমাসের ব্যবধানে এমএফএফ লেনদেন ও ইন্টারেনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে যথাক্রমে ৩২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ও ২১ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা।
এছাড়া ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও কমেছে লেনদেন। জুলাইতে জুনের তুলনায় ডেবিট কার্ডে লেনদেন কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ বা ১০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা এবং ক্রেডিট কার্ডে প্রায় ১৫ শতাংশ বা ৩৯৮ কোটি টাকা।
এদিকে আগস্ট থেকে শুরু হওয়া তারল্য সংকট এসে ঠেকেছে অক্টোবরে। এখনো বেশিরভাগ দুর্বল ব্যাংকগুলোতে লেনদেন চলছে ঢিমেতালে। কোনো কোনো ব্যাংকে ১০ হাজার টাকা তুলতেও পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। গ্রাহকদের রোষানল থেকে বাঁচতে গেট লাগিয়ে চালাতে হচ্ছে ব্যাংকিং কার্যক্রম।
গ্রাহকরা বলছেন, ব্যাংকে গেলে প্রয়োজনীয় টাকা ওঠানো যাচ্ছে না। এতে প্রয়োজনের সময় পড়তে হচ্ছে বিপাকে। আর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী আনোয়ারুল আজম বলেন, গ্রাহকদের অর্থ দিতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও যতটুকু অর্থ দেয়া যায়, তা দেয়া হচ্ছে।
ব্যাংক খাতে লেনদেন স্বাভাবিক করতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়ার ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দ্রুত তারল্য সহায়তা দেয়া না হলে ব্যাংক খাতে লেনদেনে গ্রাহকদের আস্থা কমবে বলে শঙ্কা ব্যাংকারদের।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল মান্নান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকখাতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। সারা বিশ্বে এটি নজিরবিহীন। গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে দ্রুত ব্যাকগুলোতে তারল্য বাড়াতে হবে।
তবে এতসব শঙ্কার মধ্যেও রয়েছে সম্ভাবনার হাতছানি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঠামোগত সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যাংক খাতে দৃশ্যমান সুফল আসবে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সময় সংবাদ