News update
  • Tk 500cr Drive to Turn Haor Fallow Land Into Farmland     |     
  • Tarique Rahman returns home amid rapturous reception     |     
  • Home After 17 Years: Tarique Returns to Gulshan Residence     |     
  • Tarique Calls for United Effort to Build a Safe Bangladesh     |     
  • Tarique leaves for 300 feet area from airport     |     

অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে কী বলছেন সেখানকার মুসলমানরা?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক মিডিয়া 2024-01-22, 10:45am

sdsdhhfdh-c3942f7fc7a14d60e1a97e744258c11e1705898744.jpg




ফুলজাঁহা যেখানে থাকেন, কাটরা নামের সেই পাড়াটা নতুন রাম মন্দিরের ঠিক পিছনেই। কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা এখানেই থাকেন। ফুলজাঁহা যখন নয় বছরের, তখনই, সাতই ডিসেম্বর, ১৯৯২ উত্তেজিত জনতা তাদের বাড়িতে হামলা করে, মেরে ফেলে ওর বাবা ফতেহ মুহম্মদকে।

তবে সেই দিনের কথা ভাবতে বসলে হাতের কাজ যে পড়ে থাকবে!

রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে তার এখন দম ফেলারও সময় নেই। পরিবারের চার সদস্যই দ্রুত হাতে মিষ্টির বাক্স বানাচ্ছেন। ওই বাক্সে ভরেই মিষ্টি যে রাম মন্দিরের প্রসাদ হিসাবে দেবে সবাই।

কাজ করতে করতেই তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "এখন তো অযোধ্যায় শান্তিই রয়েছে, কোনও সমস্যা নেই। এত কঠিন পথ যখন আমরা পেরিয়ে এসেছি, তো আগামী দিনেই কী হবে দেখা যাবে। একটা আশঙ্কা যদিও থেকেই যায় যে কখন কিছু ঘটে না যায়, তবে অযোধ্যায় এখন শান্তিই আছে।

ফুলজাহাঁর বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরেই হাফিজ-উর-রহমান থাকেন। ৩১ বছর আগের সেই দাঙ্গার দিনে, যে দাঙ্গায় ফুলজাহাঁর বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছিল, তিনি একটা হিন্দু পরিবারের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।

তবে সেই দাঙ্গায় নিজের জ্যাঠা আর বড়ভাইকে হারিয়েছিলেন হাফিজ-উর-রহমান।

তিনি বলছিলেন, "ওই দাঙ্গার পর থেকে তো এখানে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় আছে। কিন্তু এখনও অযোধ্যায় বড় কোনও আয়োজন হলে, লাখ লাখ মানুষ জড়ো হলে কিছুটা ভয়ে থাকি আমরা। এবারও সেরকমই একটা চাপা ভয় আছে। আশা করি শান্তিতেই মিটবে সব কিছু।"

দীর্ঘ আইনি লড়াই

ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয় ১৯৯২-র ছয়ই ডিসেম্বর।

তার পরে অযোধ্যা-সহ গোটা দেশে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ায়, তাতে অন্তত দুই হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন।

এরপরে হিন্দু আর মুসলমান - দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট, তারপরে সুপ্রিম কোর্টে লম্বা আইনি লড়াই চলে।

হিন্দু সংগঠনগুলির বক্তব্য ছিল বাবরি মসজিদ আসলে রাম জন্মভূমি আর তা বানানো হয়েছিল একটি মন্দির ধ্বংস করেই।

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ২০১৯ সালে এক ঐতিহাসিক রায়ে জানায় যে "বাবরি মসজিদ অন্যায় ভাবে ভাঙ্গা হয়েছিল।" তবে শীর্ষ আদালত এটাও নির্দেশ দিয়েছিল যে অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে মন্দির তৈরি হবে।

আদালতের নির্দেশেই অযোধ্যা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুরে একটা নতুন মসজিদ বানানোর জন্য জায়গা দেওয়া হয়।

কী বলছেন অযোধ্যার মুসলমানরা?

ঘটনাচক্রে রাম মন্দির পরিসরের আশেপাশের এলাকাতে প্রায় একডজন মসজিদ, মাদ্রাসা আর মাজার রয়েছে। মন্দিরগুলিতে যখন পুজো পাঠ হয়, ওই মসজিদ, মাদ্রাসা আর মাজারেও পাশাপাশি চলতে থাকে আজান আর নামাজ আদায় করা।

প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের অযোধ্যা জেলায় পাঁচ লক্ষ মুসলমানও থাকেন। এঁদের মধ্যে হাজার পাঁচেক মানুষ তো নতুন রাম মন্দিরের আশে পাশেই থাকেন।

অযোধ্যা লাগোয়া শহর ফৈজাবাদে মুহম্মদ খালিক খানের ষ্টেশনারি দোকান আছে। তারা কয়েক প্রজন্ম এখানেই বসবাস করেন।

তিনি বলছিলেন, "এই দিন দশেক আগে টাটশাহ মসজিদে অযোধ্যা থেকে কয়েকজন এসেছিলেন। তারা বলছিলেন যে প্রচুর মানুষ অযোধ্যায় আসবেন, তাই তারা আপাতত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।"

"তবে উলেমারা তাদের বোঝান যে আপনারা ঘরবাড়ি ছেড়ে কেন যাবেন, আমরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি। এরপরে পুলিশের পক্ষ থেকেও তাদের বোঝানো হয়, তারাই রক্ষা করবেন সবার।"

আবার এই খবরও পাওয়া যাচ্ছে যে অযোধ্যার কিছু মুসলমান পরিবার মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার কয়েকদিন আগে সাময়িক ভাবে অন্য কোথাও চলে গেছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্য সরকার অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন যে অনুষ্ঠানের আগে-পরে নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে, কারও ঘাবড়ানোর কিছু নেই।

বিজেপি সংসদ সদস্যর আশ্বাস

অযোধ্যা থেকে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন বিজেপির সংসদ সদস্য লাল্লু সিং বিবিসিকে বলছিলেন, "সবার নিরাপত্তা দেওয়া হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কারও আশঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।"

তার কথায়, "যেভাবে অযোধ্যার অন্য বাসিন্দারা থাকছেন, সংখ্যালঘুরাও সেভাবেই থাকেন। নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখি আমরা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো যা কাজ করছেন, সবার উন্নতির জন্যই করছেন।"

"সেখানে কেউ এটা বলতে পারবে না যে এই ধর্মের মানুষের জন্য বাড়তি কিছু করা হয়েছে বা অন্য ধর্মের জন্য কম করা হয়েছে। আমাদের সংগঠন কখনই আমাদের বলে নি যে কারও থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চল, কারণ ভারতের নাগরিক তো সবাই", বলছিলেন এমপি লাল্লু সিং।

তবে বেশ কিছুদিন আগে আমি রাম মন্দির পরিসরের শ'খানেক মিটারের মধ্যে অবস্থিত একটা বড় মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম, যেখানে হাজি হাফিজ সৈয়দ ইখলাকের সঙ্গে কথা হয়েছিল।

তিনি বলেছিলেন, "এই পরিসরের কাছাকাছি সংখ্যালঘুদের বেশ কিছু জমি জায়গা আছে। তাদের কেউ কেউ দ্বিধায় রয়েছেন যে কতদিন এখানে থাকা যাবে।"

এবার অযোধ্যায় গিয়ে আমি আবারও তার কাছে গিয়েছিলাম। এবার অবশ্য তিনি আমার সঙ্গে আর কথা বললেন না। এক কর্মচারী তার কাছ থেকে ফিরে এসে আমাকে জানালেন, "হাজি সাহেব সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না।"

গঙ্গা-যমুনা সম্প্রীতি

তবে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ্ বোর্ডের প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ আজম কাদরির সঙ্গে এবার দেখা হল অযোধ্যায়।

তিনি বলছিলেন, "সংখ্যালঘুদের এটা মনে হচ্ছে যে তাদের মতামত কম নেওয়া হচ্ছে। আমার ধর্মীয় স্থানের যদি পুনর্জীবন ঘটানো হত তাহলে তো আমারও ভাল লাগত আর যে গঙ্গা-যমুনা সম্প্রীতির কথা আমরা বলি, সেটাও জোর পেত যে হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী সব সম্প্রদায়ের জন্য, কোনও এক বিশেষ ধর্মের জন্য নন তিনি।"

"এখানে সমাজ কোনও রাজনীতির মধ্যে জড়াতে চায় না, আবার রাজনীতির অংশও হয়ে উঠতে চায় না। যেখানে যা আছে, সেরকমই থাকুক, শুধু এটুকুই চায় সবাই", বলছিলেন মি. কাদরি।

আবার অযোধ্যা শিয়া ওয়াকফ্ কমিটির প্রেসিডেন্ট হামিদ জাফর বলছিলেন, "যখন সুপ্রিম কোর্টের রায় এসে গেছে, তার ওপরে আর কোনও তর্ক বিতর্ক চলে না।"

"কিন্তু ২২শে জানুয়ারির আগে এখানে যত সংবাদ মাধ্যম আসছে, তাদের একটা অংশ বারে বারে মুসলমানদের কাছে জানতে চাইছে যে আমরা ২২ তারিখ কী করব। এটা অনুচিত। আরে ভাই, ২২ তারিখে তারা সেটাই করবেন, যেটা ২১ তারিখ করেছেন!", বলছিলেন মি. জাফর।

ফুলজাঁহারা যেরকম রামচন্দ্রের প্রসাদী মিষ্টির বাক্স বানাচ্ছিলেন কদিন আগে, সেটাই করবেন ২২ তারিখেও।

রাম মন্দিরে পুজোর আরও নানাবিধ আয়োজনকে কেন্দ্র করে যে 'মন্দির অর্থনীতি' চলে, সেখানে যে হিন্দু-মুসলমান কোনও ভাগ নেই। বিবিসি নিউজ হিন্দি