বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, নির্বাচনের ডেডলাইন দিতে তাদের মধ্যে এতো দ্বিধা আর সংকোচ কেন? তিনি বলেন, ৫ আগস্টের চেতনাকে ধারণ করতে পারছেন না তারা। তাই সরকারে স্বৈরাচারের লোকদের বসিয়েছেন। তারাতো সরকারকে ব্যর্থ করবেই।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলওয়ে ময়দানে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির ব্ক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন উপদেষ্টা বানানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনারা আবার নতুন কিছু উপদেষ্টা করেছেন। নতুন উপদেষ্টা করার অধিকার আপনার আছে। কিন্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশীজন যারা তাদেরতো একটা অভিমত নেয়া দরকার ছিল। যে মেয়েটি বিতর্কিত শেখ মুজিবের বায়োপিক ছবিতে অভিনয় করেছে, আপনারা তার স্বামীকে উপদেষ্টা বানিয়েছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির সমর্থন রয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘জনগণের সমর্থন নিয়ে আপনারা সরকার হয়েছেন। বিএনপি সমর্থন করেছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে তারা সমর্থন দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সমর্থন দিয়েছে। আমরাতোই আপনাদেরকে সমর্থন করে যাচ্ছি। কিন্তু মাঝেমধ্যে বিতর্ক করতে হয় কেন?’
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আলুর কেজি কেন হবে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেননা কেন। আপনি সিন্ডিকেটবাজদের কেন গ্রেফতার করতে পারছেন না। দুর্বলতা কোথায়, এটা একটু জানতে চাই। এটাতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের কাম্য না। কেন এটা বাড়ছে, মানুষ তো অনেক ধরনের প্রশ্ন করে।’
অন্তর্বর্তী সরকারেক উদ্দেশ করে রিজভী আরও বলেন, ‘আপনারা নির্বাচনের কথা বলেন, কিন্ত নির্বাচনের কোনো ডেডলাইন দেননা। এটা কেন? এটাতো রহস্যজনক। অন্তবর্তীকালীন সরকার কি স্কুলের হেডমাস্টার? আপনারা সংস্কারের পাঠ দিবেন রাজনৈতিক দলগুলোকে। আপনারা এখন স্কুলের হেডমাস্টার বা শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারা মনে করছেন বিএনপির লোক যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছে তারা অশিক্ষিত। আমরা তোমাদেরকে আগে সংস্কার শিখাই তারপর তোমরা নির্বাচনের কথা বলো।’
এক উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, “একজন উপদেষ্টা বলছে, ‘খালি নির্বাচন-নির্বাচন করলে হবে না। উপদেষ্টাকে বলি, আপনি কি শিক্ষক? আপনি আগে শিক্ষা দিবেন তারপর আমরা শিখব, পড়াশুনা করব। আমরা কি জানিনা সংস্কার কি। আপনারা প্রস্তাব দিতে পারেন। সেই প্রস্তাবটা দেবেন নির্বাচিত সরকারের কাছে। এজন্য নির্বাচন দিন।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে বলেই হাসিনার মত এত নির্মম, নিষ্ঠুর, এত রক্ত নিংড়ানো একটি স্বৈরাচারকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মনে করেছে তার বাপের জমিদারি। আর এই জমিদারি রক্ষার্থে সে দেশের জনগণকে জনগণ মনে করতো না। চাকর-বাকর মনে করতো।’
বেগমগঞ্জ উপজেলা, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন করে। সমাবেশের উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট আব্দুর রহীম, অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য শামীমা বরকত লাকী, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাস।
এ সময় বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.মাহফুজুল হক আবেদ, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.মহসিন আলম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আন্দোলন সংগ্রামে নিহত ও আহত নেতাকর্মীদের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। সময় সংবাদ।