News update
  • UNRWA delivers aid in Gaza; destruction mounts in West Bank     |     
  • Chinese Scientists Develop AI Model for Cyclone Forecasting     |     
  • Trump Pauses Tariffs on Mexico and Canada After Agreements     |     
  • The Road to and from Wuhan: Trump Threat to Global Health?     |     
  • CA asks for a ‘command centre’ to monitor law and order     |     

সংস্কার চাওয়া জামায়াত এখনই নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করছে কেন?

বিবিসি নিউজ বাংলা রাজনীতি 2025-02-04, 10:31pm

fgdtert-bf3706a8ff1c3647153a27f20888648d1738686690.jpg




বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এখনই বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় নিজেদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে শুরু করেছে 'নির্বাচনের আগে সংস্কারকে' অধিকতর গুরুত্ব দেয়া জামায়াতে ইসলামী।

গত বছর অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নির্বাচনের আগে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছিলো দলটি। এমনকি এ নিয়ে তাদের এক সময়ের মিত্র ও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গেও তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দলীয় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তাদের দল যোগ্য প্রার্থী বের করতে একটি বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

"তবে কেন্দ্র থেকে আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করিনি," বলছিলেন তিনি।

পাশাপাশি দেশজুড়ে দলীয় ইউনিটগুলোকে সক্রিয় করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে দেশের বিভিন্ন জেলা সফর করছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এসব সফরে কর্মীসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিচ্ছেন।

জামায়াতের রাজনীতির পর্যবেক্ষক ও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর বলছেন নির্বাচনি এলাকাগুলোয় সম্ভাব্য প্রার্থীর নেতৃত্বে দলীয় অবস্থান সুসংহত করা এবং জনগণের আরও কাছে পৌঁছানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করছে।

"একজনকে সামনে রেখে স্থানীয়ভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। আবার ঘোষিত প্রার্থী নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার প্রমাণ রাখতে পারেন কি-না সেটিও দল যাচাই করতে পারবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের ২২ জন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।

এর আগে ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের অংশ ছিলো বিএনপি। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে ওই জোট তখন ক্ষমতায় গিয়েছিলো।

তবে এককভাবে জামায়াত সবচেয়ে ভালো ফল করেছিলো ১৯৯১ সালের নির্বাচনে। সেই নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়েছিলো দলটি। তখন জামায়াতের সমর্থন নিয়েই সরকার গঠন করেছিলো বিএনপি।

কোথায় কীভাবে প্রার্থী ঘোষণা হলো

বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

তবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে সম্ভাব্য সময়সীমা হিসেবে চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুর কথা উল্লেখ করেছেন।

অথচ সেই 'সম্ভাব্য নির্বাচন'কে সামনে রেখেই দেশের ছয়টি জেলার অন্তত ৩২টি আসনে এখন পর্যন্ত জামায়াতের পক্ষ থেকে 'সম্ভাব্য প্রার্থীদের' নাম ঘোষণার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে টাঙ্গাইলে আটটি, নেত্রকোনার পাঁচটি, ফরিদপুরের চারটি, কিশোরগঞ্জের পাঁচটি এবং ময়মনসিংহের এগারটির মধ্যে ১০টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

তবে জামায়াতের ফরিদপুর জেলা আমির মো. বদরউদ্দিন বলেছেন ফরিদপুরের চার প্রার্থীর নাম কেন্দ্র থেকেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।

"এখানে একটি সিস্টেম আছে আমাদের। কেন্দ্র আমাদেরও মতামত নিয়েছে। এসব কিছুর ভিত্তিতে দলীয় নীতির আলোকে প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে," বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

এছাড়া গত পহেলা ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে দলীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে সেখানকার আটটি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

ওই দিনই বিকেলে কিশোরগঞ্জ শহরের উবাই পার্কে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর এক সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সামিউল হক ফারুকী দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অবশ্য বলছেন জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক প্রার্থী বাছাই হচ্ছে দলীয় নীতিমালা ভিত্তিতে।

"তবে নির্বাচনের জন্য আমরা কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করিনি। নির্বাচন যখন আসবে তখন সেটি হবে। এখন সংসদ নির্বাচন যখনই হোক তার জন্য আমাদের দলীয় প্রস্তুতি চলছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

এখনি কেন প্রার্থী ঘোষণা

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে যখন জেলায় জেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, তখন একইসঙ্গে দলটি ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি নির্বাচনি মঞ্চে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এক সময়ের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধের প্রেক্ষাপটে জামায়াত এ ধরনের একটি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছর অগাস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই তাদের এই ধরনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

নয়া দিগন্তের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর বলছেন, প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াত তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনগণের কাছে যাওয়ার একটি বার্তা দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

"চূড়ান্তভাবে কারা প্রার্থী হবে সেটি সময় এলে হয়তো কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা করবে জামায়াত। তবে বিভিন্ন জায়গায় দলীয় প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুযোগ দেয়ার জন্য হয়তো কোথাও কোথাও নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। তারা হয়তো দলকে প্রস্তুত করবেন স্থানীয়ভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারা প্রার্থী হবেন তা আসলে নির্ভর করবে তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তার মতে জামায়াতের ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের কাছে যাবেন এবং তার মাধ্যমে দল তার অবস্থান সম্পর্কে একটি ধারণা পাবে।

যদিও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই নির্বাচন নিয়েই দূরত্ব তৈরি হয় জামায়াত ও তার সাবেক মিত্র বিএনপির মধ্যে।

বিএনপি শুরু থেকেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি করলেও জামায়াত 'নির্বাচনের আগে সংস্কারের' কথা বলে আসছে।

দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অবশ্য বলছেন প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে তাদের দলীয় অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

"এখন যেটি হচ্ছে সেটি একটি বাছাই প্রক্রিয়া। কেন্দ্র থেকে কোন ঘোষণা দেয়া হচ্ছে না। জেলা কিংবা অঞ্চল ভিত্তিতে হচ্ছে। এটি সাংগঠনিক একটি প্রক্রিয়া মাত্র," বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

সুযোগ কাজে লাগানোই উদ্দেশ্য?

জামায়াতের জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে যেই ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো, প্রার্থী ঘোষণার মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনি এলাকাগুলোয় দলের অবস্থান সুসংহত করা।

বাংলাদেশে কিছু এলাকায় জামায়াতের দল হিসেবে শক্ত অবস্থান থাকলেও বেশিরভাগ এলাকাতেই দলটির সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী নয়। সে কারণেই দলীয় নেতৃত্ব চাইছেন প্রতিটি এলাকাতেই যেন সংগঠন হিসেবে দলটির কার্যক্রমে গতিশীলতা আসে।

অন্যদিকে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিপক্ষ হয়ে পড়া বিএনপির সারাদেশের প্রতিটি নির্বাচনি এলাকাতেই ভালো অবস্থান আছে, বিশেষ করে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের না থাকার সুযোগে বিএনপিই এ মুহূর্তে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল, যার দেশে কর্মী ও সংগঠন আছে।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই জামায়াত নেতৃত্ব মনে করছে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি জায়গাতেই দলের অবস্থান তৈরি করা সহজ হবে।

এজন্য যেসব এলাকায় দলটি দুর্বল কিংবা যেসব এলাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থান এতদিন শক্ত বলে জনমনে ধারণা আছে সেসব এলাকাতেই জামায়াত সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছে, যাতে তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করে দলের একটি অবস্থান তৈরি করতে পারে।

সালাউদ্দিন বাবর বলছেন সাংগঠনিক কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগটি জামায়াতে ইসলামী যথাযথভাবে কাজে লাগাতে চাইছে বলেই মনে করেন তিনি।