News update
  • Fire at UN climate talks in Brazil leaves 13 with smoke inhalation     |     
  • 5mmcfd gas to be added to national grid from Kailashtila gas field     |     
  • ArmArmed Forces Day: Tarique's message draws on historic closeness     |     
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     

রাজনীতির সেই পুরনো পথেই কি হাঁটছে জাতীয় নাগরিক পার্টি?

বিবিসি বাংলা রাজনীতি 2025-04-23, 7:57am

er324234-48d785b8ec14fdd9ff1caefb115c7e791745373446.jpg




রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এমন অবস্থায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এরই মধ্যে দলের একজন যুগ্ম সদস্য সচিবকে দল থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে।

গত বছর পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে দুর্নীতি-অনিয়ম এবং জেলা প্রশাসক নিয়োগে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপের অভিযোগে সোমবার রাতে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়।

গত মার্চে দলটির শীর্ষ নেতা সারজিস আলম নিজ এলাকায় বিশাল গাড়িবহর নিয়ে শোডাউন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হয়।

চলতি মাসেই হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম দুদক চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা যায়।

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের আসছে।

এ নিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদান আমাদের ভেতরও আসার চেষ্টা করছে। আমরা সেটাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনছি"।

এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিলাসী জীবনযাপন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কিংবা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলীয় নেতারা।

সেখানে সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন নেতাদের নাম উল্লেখ না করলেও তাদের অভিযোগগুলো নিয়ে কথা বলেন কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ কেউ।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে নতুন দল হিসেবে যাত্রা শুরুর পরও কেন এসব অভিযোগ আসছে দলটির বিরুদ্ধে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, রাজনীতি করতে গেলে যে কৌশল ও পরিপক্বতা দরকার তা অনেক নেতার মধ্যেই নেই। যে কারণে শুরুতেই নতুন দলটিকে ঘিরে নানা বিতর্ক দেখা যাচ্ছে।

সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাতের বক্তব্যে কি চাপে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি?

২৩ মার্চ ২০২৫ জাতীয় নাগরিক পার্টি: সাবেক শিবির, বাম ও অন্য দলের কর্মী নিয়ে কীভাবে ঐক্য ধরে রাখবে? ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় নাগরিক পার্টিকে 'কিংস পার্টি' বলা হচ্ছে কেন? ৯ মার্চ ২০২৫ ঢাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান ছবির ক্যাপশান,ঢাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান

আলোচনায় শীর্ষ দুই নেতা

জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই শীর্ষ নেতা উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠন সারজিস আলম ও দক্ষিণের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

জুলাই অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রথম সারির সমন্বয়ক ছিলেন তারা দু'জনই। আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের দু'জনই বেশ পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।

প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ পদ ও পরে এনসিপিরও গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তারা দুইজনই।

গত মার্চে ঈদের আগে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে নিজ এলাকা পঞ্চগড়ে শোডাউন দেন সারজিস আলম। তার এই গাড়িবহরের বিশাল শোডাউন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা তৈরি হয়।

তখন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা তাসনিম জারা বিষয়টির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও করেন।

গত নয়ই এপ্রিল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম দুর্নীতি দমন কমিশনে যান। এই বিষয়টি নিয়ে তখন নানা ধরনের আলোচনা দেখা যায়।

যদিও ওইদিন তারা দুইজন ওইদিনই গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তারা ব্যক্তিগত কাজেই গিয়েছিলেন দুদকে।

এর আগেও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে এই দুইজন নেতা ফেসবুকে দুটি স্টাটাস দিলে তা নিয়ে বেশ বির্তক তৈরি হয় দল ও দলের বাইরে।

গত শুক্রবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এই দুই নেতার নাম উল্লেখ না করলেও তাদের এসব সমালোচিত বিষয়গুলো নিয়ে তাদের উপস্থিতিতেই প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা।

দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব ভুল করলে বা সমালোচনা করলে আমাদের একজন কেন্দ্রীয় নেতা তাকে প্রশ্ন করতে পারছেন। সেই প্রশ্নের জবাবও প্রকাশ্যে দিচ্ছে"।

গত কয়েক মাস ধরেই এই দুই নেতার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকের মধ্যে এ নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত দুইজন নেতা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন।

শীর্ষ কমিটির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা যে পরিবর্তনের রাজনীতির কথা বলে মানুষের কাছে যেতে চাচ্ছি, কখনো কখনো কোনো কোনো নেতার এসব কর্মকাণ্ডে তা হোঁচট খাচ্ছে"।

যুগ্ম সদস্যসচিবকে অব্যাহতি

পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তখন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়।

গত মার্চ মাসে জেলা প্রশাসক নিয়োগে অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে মি. তানভীরের বিরুদ্ধে।

দল গঠনের শুরুতেই একজন নেতার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে এনসিপিকে ঘিরে নানা ধরনের সমালোচনাও তৈরি হয়।

তবে মি. তানভীর আগেই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন করে অস্বীকার করেন।

গত শুক্রবার দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় এসব অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "কারো বিরুদ্ধে যখন কোন অভিযোগ ওঠে তখন তার স্বপক্ষে প্রমাণ থাকতে হয়। মি. তানভীরের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কোনো উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় এতদিন ব্যবস্থা নেয়া যায় নি"।

শুক্রবারের এনসিপির সাধারণ সভায় এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার পর গত রোববার রাতেই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে শৃঙ্খলা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সোমবার রাতে এসব অভিযোগের কথা উল্লেখ করে যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি ও কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয়।

একই সাথে সাত দিনের মধ্যে এসব অভিযোগের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়।

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমাদের কারো বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম, চাঁদাবাজি বা দুর্নীতির বিষয়ে প্রমাণ পেলে যেন আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। আমরা এ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো"।

শুরুতেই এত বিতর্ক কেন?

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন কিংবা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ঘোষণা দিয়ে গত ফেব্রুয়ারির শেষে আত্মপ্রকাশ ঘটে তারুণ্য নির্ভর রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির।

কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে ও পরে দলটির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য কিংবা চাঁদাবাজির মতো অভিযোগ ওঠে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাসে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সোমবার তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে মোয়াজ্জেম হোসেন দাবি করেছেন, তাকে অপসারণ করা হয়নি, বরং তিনি নিজেই পদত্যাগ করেছেন।

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মেডিকেল দলের সদস্য বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবীকে নিয়েও মন্ত্রণালয়ে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য কিংবা চাঁদাবাজির মতো অভিযোগও উঠছে এনসিপির কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশে গত তিন দশকে বেশ কিছু নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন এই দলটিকে ঘিরে নানা প্রত্যাশা ছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক নানা বিতর্কিত ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে শুরু থেকেই দলটির বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এই ছাত্রনেতাদের বয়স কম কিন্তু তাদের ম্যাচিউরিটিরও দরকার আছে। তাদের পরিণত আচরণ করা উচিত। তা না হলে তাদের এসব ভুলের সুযোগ নিবে প্রতিপক্ষরা"।

যদিও এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে, পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলে নতুন রাজনৈতিক ধারা চালু করতে চান তারা।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, "আমরা হয়তো নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা ও ভুলত্রুটির মধ্য দিয়েই যাচ্ছি। এটা আমরা অস্বীকার করি না। তবে যারা আমাদের সমালোচনা করছে তারাও চায় আমরা ভালো করি"।