News update
  • After rain ‘Moderate’ air quality recorded in Dhaka on Sunday     |     
  • Dealers blamed for artificial fertiliser shortage in Rangpur     |     
  • At Least 50 Dead as Caribbean Recovers from Hurricane Melissa     |     
  • Landslide Kills 21, Dozens Missing in Western Kenya     |     
  • UN Chief Demands Justice for Crimes Against Journalists     |     

অ্যাডিনো ভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে কলকাতা, বাড়ছে শিশুমৃত্যু

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক রোগবালাই 2023-03-07, 7:44pm

1cd43660-bc18-11ed-89f4-f3657d2bfa3b-d2d15364ed6d6fea1f60078898e12ab71678196642.jpg




ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত রাজধানী কলকাতা ও তার আশেপাশে গত মাসদুয়েকের ভেতর অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণে প্রায় একশো শিশু মারা যাওয়ার পর ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই শিশু মৃত্যুর সংখ্যা রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাডিনো ভাইরাসও করোনার মতোই একটি ‘রেসপিরেটরি ভাইরাস’, অর্থাৎ যা শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর উপসর্গগুলোও অনেকটা কোভিডের মতোই – এবং এটিও অত্যন্ত ছোঁয়াচে বা সংক্রামক।

অ্যাডিনো ভাইরাস কোনও নতুন ভাইরাস নয় ঠিকই, কিন্তু এ বছর তার প্রকোপ যে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি – কলকাতায় সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতাও সে কথাই বলছে।

আরও চিন্তার কথা হল, অ্যাডিনো ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন চার থেকে ছয়-সাত বছর বয়সী (প্রাক-স্কুল পর্যায়ের) শিশুরা, যাদের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম।

অনেক বাচ্চাকে হাসপাতালে দিনের পর দিন ভেন্টিলেটরেও রাখতে হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করছে তারা অ্যাডিনো ভাইরাস প্রতিরোধে সব হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে এবং পরিস্থিতি এখনও ততটা উদ্বেগজনক হয়ে ওঠেনি।

তবে কলকাতারই সুপরিচিত বি সি রায় শিশু হাসপাতালে গতকালও (রবিবার) সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সাতটি শিশু মারা যাওয়ার পর অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে ভয় যথারীতি আরও দানা বেঁধেছে।

আজ (সোমবার) ভোররাতে ওই হাসপাতালেই মারা গেছে আরও একটি শিশু।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও আজ রাজ্য বিধানসভাতে জানিয়েছেন, তার পরিবারের একজন সদস্যও অ্যাডিনোতে আক্রান্ত হয়েছেন।

অ্যাডিনো কতটা ভয়ের?

কলকাতার সুপরিচিত শিশু চিকিৎসক দ্বৈপায়ন ঘটক বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, অ্যাডিনো ভাইরাস তাদের কাছে কোনও অচেনা ভাইরাস নয় ঠিকই, কিন্তু এ বছর যে কোনও কারণেই হোক অ্যাডিনোতে সংক্রমণের ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে।

“এর উপসর্গগুলো শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি-জ্বর বা ফ্লু-র মতোই, অর্থাৎ অন্য যে কোনও রেসপিরেটরি ভাইরাসের চেয়ে আলাদা কিছু নয়।”

“তবে অনেক ক্ষেত্রে মাল্টিসিস্টেম ইনভলভমেন্ট হয়ে পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, গায়ে-হাত-পায়ে খুব ব্যথা কিংবা চোখে কনজাংটিভাইটিস হওয়ার মতো ঘটনাও আমরা দেখতে পাচ্ছি”, বলছিলেন ড: ঘটক।

তবে একই গোত্রের ভাইরাস কোভিড-১৯ সাম্প্রতিককালে যেরকম ত্রাহি ত্রাহি রব ফেলে দিয়েছিল, অ্যাডিনো ভাইরাস ততটা প্রাণঘাতী বা বিধ্বংসী হবে না বলেই কলকাতার বেশির ভাগ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ এখনও আশাবাদী।

“এটা ঠিক যে বাচ্চাদের অনেকের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকারই হচ্ছে না। কিন্তু যাদের হচ্ছে, তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে এটা বেশ খারাপ মোড় নিচ্ছে। অনেকেই আবার খুব লম্বা সময় ধরে আক্রান্ত থাকছে”, বলছিলেন দ্বৈপায়ন ঘটক।

“পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলোতে এখন পরীক্ষার মরশুম চলছে। এই সময় বাচ্চার জ্বর হলেও বাবা-মা’রা চান না তাদের স্কুল মিস হোক, অনেক সময় প্যারাসিটামল দিয়েও তারা জোর করে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে দেন।”

“এতে করেই অ্যাডিনো ভাইরাসের বিস্তার হুট করে আরও বেড়ে গেছে বলে আমাদের পর্যবেক্ষণ”, জানাচ্ছেন তিনি।

তবে অ্যাডিনো ভাইরাসে শুধু বাচ্চারাই আক্রান্ত হচ্ছেন, বিষয়টা তেমন নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনও বয়সীরাই অ্যাডিনো ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন – কিন্তু ঠিক কোভিডের মতোই এখানেও শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

এই ভাইরাসের মোকাবিলার ক্ষেত্রে আর একটি উদ্বেগের বিষয় হল, বাজারে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রতিরোধের জন্য কোনও টিকা চালু নেই।

দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক সংস্থা ভারত বায়োটেক ২০১৮তে অ্যাডিনো ভাইরাসের টিকা তৈরির কাজ শুরু করেছিল – কিন্তু এর মধ্যে তারা কোভিড মোকাবিলায় ‘কোভ্যাক্সিন’ উৎপাদনে হাত দেওয়ায় সে প্রক্রিয়া থমকে যায়।

সরকার কী করছে?

চলতি বছরের শুরু থেকেই কলকাতা ও তার আশেপাশে অ্যাডিনো ভাইরাস আঘাত হানতে শুরু করে। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে গত মাসদুয়েকের ভেতর কম পক্ষে ৯৬টি শিশু অ্যাডিনোতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পটভূমিতে নড়েচড়ে বসতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও। গত ২রা মার্চ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অ্যাডিনো ভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি বৈঠকও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

এর পরই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলোতে অ্যাডিনো ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানান, জেলা ও মফসসল শহরের হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন অ্যাডিনো আক্রান্ত কেসগুলো কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ না-করে (পাঠিয়ে না দিয়ে) সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

দরকারে ‘টেলিমেডিসিন’ পদ্ধতিতে জেলার হাসপাতালগুলিও যাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পেতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

রাজ্য সরকার আরও আশা করছে, আগামী দেড়-দু’সপ্তাহের মধ্যে ভাল মতো গরম পড়ে গেলে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ এমনিতেই কমে আসবে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জারি করা প্রেস বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, “বর্তমান সংক্রমণটি আদতে মরসুমি অসুখই।”

“গত দু'বছর এই সময়ে দেদার দাপিয়েছিল করোনা। এ বছর তাকে সরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস-সহ কিছু ভাইরাস।”

“তবে মহামারি পরিস্থিতি আদৌ তৈরি হয়নি। বরং আশার কথা, ভাইরাসের দাপট কমে আসছে” বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ বিধানসভাতে এক আলোচনায় জানিয়েছেন, “আমার পরিবারের একজন সদস্যও অ্যাডিনোতে আক্রান্ত হয়েছেন। আমি উদ্বিগ্ন।”

পরিবারের ঠিক কে আক্রান্ত হয়েছেন বা তার বয়স কত, মুখ্যমন্ত্রী তা না-ভাঙলেও রাজ্যের লক্ষ লক্ষ বাচ্চার বাবা-মায়েরাও কিন্তু অ্যাডিনো আতঙ্কে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।