News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

তীব্র শীত: হাসপাতালে রোগীর চাপ, বাড়ছে শিশুমৃত্যুও

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক রোগবালাই 2024-01-15, 11:48am

lfjdsfk-8d376e574c6f92e1ab73880a5bb676881705297722.jpg




প্রকৃতিতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঠাণ্ডায় ঠকঠক কাঁপছে সারাদেশ। ঘন কুয়াশার চাদরে ছেয়ে আছে উত্তরাঞ্চল; সূর্যের দেখা মেলেনি সপ্তাহখানেক। টানা তিনদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাক্ষী দিনাজপুর। গত কয়েকদিনে শীতের প্রকোপ বেশ ভালোই টের পেয়েছে এমনকি রাজধানীবাসীও। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, যাতে আক্রান্তদের বেশিরভাগই ৫ বছরের কম বয়স্ক শিশু। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে শিশুমৃত্যুর হারও।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঠাণ্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ার প্রকোপই এখন বেশি। আর এতে নবজাতক ও শিশুদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধরাও।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সারা দেশে তিন হাজার ১০১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হয় ৮৯০ জন। ভাইরাল ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি হয় দুই হাজার ২১১ জন। এই সময়ে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছিল।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শনিবার শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়। আর ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি রোগী বেশি ছিল কক্সবাজার, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী ও কুষ্টিয়া জেলায়। ভর্তি রোগীদের ৮০ শতাংশই শিশু ও বৃদ্ধ।

ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর চাপ লক্ষ্য করা গেছে রাজধানীতেও। ঢাকা শিশু হাসপাতাল সূত্র বলছে, অক্টোবর থেকে ঠাণ্ডাজনিত কারণে রোগী আসছে। গত কয়েক দিন শীত বাড়ায় শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন।

শিশু মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, আমাদের এখানে অন্যান্য সময় যত শিশু রোগী আসত, শীতের প্রকোপে জানুয়ারির শুরু থেকে তার দ্বিগুণের বেশি আসছে। প্রতিদিন যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ শিশু রোগী আসতো, সেখানে গত কয়েকদিনে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসছে।

রংপুরে ৮ দিনের শৈত্যপ্রবাহে ১৮ শিশুর মৃত্যু

চলমান শৈত্য প্রবাহে সবচেয়ে বেশি কাঁপছে উত্তরের বিভাগ রংপুর। রংপুর মহানগরীসহ বিভাগের আট জেলায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। ঘন কুয়াশায় গত ৮ দিন দেখা মেলেনি সূর্যের। ফলে দিন ও রাতে একই রকম শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে এ বিভাগে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক চেয়ে দুই-তিনগুণ বেড়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। গত ৮ দিনে এই হাসপাতালে ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

রোববার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের দুইটি ওয়ার্ডের সূত্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৮০ শয্যার বিপরীতে রোববার সকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিল তিন শতাধিক শিশু। কোনো কোনো বেডে তিন-চারজন শিশু রোগীকে রাখা হয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে অনেক শিশুকে। এছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও ধারণক্ষমতার চারগুণ রোগী ভর্তি আছে বর্তমানে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ইউনুস আলী বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৬০ শিশু ও বয়স্ক রোগী ভর্তি হচ্ছে। এতে রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। বারান্দায়ও আর জায়গা নেই।

ময়মনসিংহ মেডিকেলে গড়ে ৪০০ শিশু রোগী, ৭ দিনে ১৫ শিশুর মৃত্যু

গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি। হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. বিশ্বজিত চৌধুরী বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। শিশু বিভাগের তিনটি ইউনিটে গড়ে প্রায় চার শ রোগী ভর্তি আছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে এ হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোগী বাড়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।

ডা. বিশ্বজিৎ চৌধুরী আরও জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে এক সপ্তাহ ধরে নবজাতকসহ শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় প্রতিদিনই শিশু মারা যাচ্ছে। ঠাণ্ডায় বেশি অসুস্থ হওয়ার পর অভিভাবকরা সন্তানদের হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। সে কারণে চেষ্টা করেও তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ডের পাশাপাশি মেডিসিন ওয়ার্ডেও ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমনকি হৃদরোগ ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তির জায়গা নেই।

হবিগঞ্জে ৭ দিনে মারা গেছে ১৫ নবজাতক

শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুমৃত্যু বেড়েছে হবিগঞ্জেও। গত এক সপ্তাহে ১৫ নবজাতক ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাস।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শুক্রবার একদিনে হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটে (স্ক্যানু) পাঁচ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এক সপ্তাহে এখানে মারা গেছে ১৫ নবজাতক। এছাড়াও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বুধবার মারা গেছে এক শিশু। বর্তমানে শিশুরোগীর চাপে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ

গত কয়েকদিনের শীতে লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এদের মধ্যে কেউ জ্বর-ঠান্ডা, আবার কেউ সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

এদিকে, আগের তুলনায় হাসপাতালে হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শারমিন আক্তার জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিশু ওয়ার্ডে প্রতিটি বেডে দুজন করে রোগী। অটটি বেডের বিপরীতে মেঝেতেসহ মোট ২৪ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, এই তীব্র শীতে বয়স্ক ও শিশুরা নানা রকম ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এরমধ্যে শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে।

ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়াতে শিশুদের গরম কাপড় পরানো, ঘনঘন মায়ের দুধ সেবন করাসহ বাড়তি নজর রাখা এবং সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বরিশালে শয্যার ৭ গুণ রোগী

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৩৬ শয্যার বিপরীতে গতকাল ভর্তি ছিল প্রায় ২৫০ শিশু। তাদের বেশির ভাগই শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত। পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করে আরো ৭১ শয্যা যুক্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। ছয়জন চিকিৎসক ও ১৫ জন নার্স দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এদিকে সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাবে ওষুধ প্রয়োগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বলছেন, রোগের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের চিকিৎসাপত্র ছাড়া কোনো অবস্থায় প্রয়োগ করা যাবে না অ্যান্টিবায়োটিক। অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগের ফলে বেড়ে যেতে পারে মৃত্যুঝুঁকি। তবে ঠাণ্ডার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকায় নবজাতক থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব তিন বছর পর্যন্ত বছর শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। তাই কনকনে শীতে সর্দি-জ্বর ও নিউমোনিয়া থেকে শিশু ও বয়স্কদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে দৈনিক গোসল করা থেকে বিরত রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, যদি কোনো শিশুর ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে সর্দি বা কাশি হয়, তাহলে তার নাক পরিষ্কার করে দেওয়া এবং কুসুম গরম পানি খাওয়ানো জরুরি। এ সময় অযথা অ্যান্টি-হিসটামিন বা অ্যান্টি-বায়োটিক জাতীয় ওষুধ সেবন করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।

রাজধানী ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রুহিনা তাসমিন বলেন, দুই থেকে তিন বছরের শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। এ বছর অস্বাভাবিক শীত; তাই আরেকটু বড় বাচ্চাদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য গোসল করা থেকে বিরত রাখাই শ্রেয়। আবার যদি গোসল করানো হয়, অবশ্যই শিশুকে ভালোভাবে মুছিয়ে শুকাতে হবে। বলেন, শূন্য থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশু সুরক্ষায় মায়েদের উচিত বুকের দুধ খাওয়ানো, এটা বড় ধরনের প্রতিষেধক এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। আর যেসব শিশু বুকের দুধ পান করানো হয়, তাদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি অনেক কম। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।