News update
  • Fire at UN climate talks in Brazil leaves 13 with smoke inhalation     |     
  • 5mmcfd gas to be added to national grid from Kailashtila gas field     |     
  • ArmArmed Forces Day: Tarique's message draws on historic closeness     |     
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     

শরীরে কোন বিষয়গুলো ঘটলে মানুষ হঠাৎ করে মারা যায়?

বিবিসি বাংলা রোগবালাই 2025-03-22, 5:00pm

werwerw2131-f11341626518556f3c9e64d6c94565011742641215.jpg




জীবনে চলার পথে আমরা অনেক সময় মানুষকে বলতে শুনি, ‘ইশ! লোকটা হঠাৎ করে মরে গেল!’ অনেক সময় আমরা শুনি যে কেউ হয়তো ঘুমের মাঝেই ‘হঠাৎ করে’ মারা গেছেন।

কোনও প্রকার পূর্বসংকেত না থাকায় এগুলোকে আমাদের কাছে ‘হঠাৎ করে মারা যাওয়া’ তথা অপ্রত্যাশিত মৃত্যু মনে হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী এর সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে।

মানুষ এভাবে মারা যায় মূলত কিছু শারীরবৃত্তীয় ব্যর্থতার কারণে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক আর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাগুলো হঠাৎ মৃত্যুর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।

এই প্রতিবেদনে এমন কিছু বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে, যা হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মেডিকেল জার্নালের তথ্য বিশ্লেষণ করে এর প্রতিকার নিয়েও বলা হয়েছে।

হৃদরোগ

মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অঙ্গ হৃৎপিণ্ড। হৃদপিণ্ডের চেয়ে হার্ট শব্দটিই আমাদের কাছে চেনা এখন। হার্ট বা হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ দরকার হয়।

হার্টে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালী যদি বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে যদি রক্ত হার্টে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে হার্টের মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। আর তখনই হয় হার্ট অ্যাটাক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মে‌ডি‌সিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “হয় কার্ডিয়াক ফেইলিউরে, অথবা রেস্পিরেটরি ফেইলিউরে মারা যাবে।”

অর্থাৎ, হঠাৎ মৃত্যুর পিছনে ওই দু’টোর যে কোনও একটি কারণ থাকবেই।

ডা. আজাদ বলছিলেন, হার্টের পেশীগুলো অকার্যকর হয়ে গেলে হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে। অথবা, হৃদস্পন্দন কমে গেলে কিংবা ধমনী ব্লক হয়ে গেলেও মানুষ তৎক্ষণাৎ মারা যেতে পারে।

তিনি জানান, হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার কয়েক মিনিটের মাঝে যদি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া না হয়, তাহলে তা নিশ্চিত মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, হার্ট অ্যাটাকের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সিপিআর বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন দিলে রোগীর বেঁচে যাওয়ার কিছুটা হলেও সম্ভাবনা থাকে।

সিপিআর বিশ্ব জুড়ে বহুল প্রচলিত এক জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি। কেউ অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারালে, তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে বা শ্বাস প্রশ্বাস চালু না থাকলে, সেই ব্যক্তিকে সিপিআর দিতে হয়।

তবে হার্ট অ্যাটাকের কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এসব লক্ষণগুলো হচ্ছে– বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা, বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট, এবং বমি বমি ভাব ও বমি।

রেস্পিরেটরি ফেইলিউর

হঠাৎ মৃত্যুর আরেকটি খুব সাধারণ কারণ হলো রেস্পিরেটরি ফেইলিউর বা শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা।

আমাদের শ্বাসযন্ত্র যখন পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় অথবা, শরীর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড যথাযথভাবে বের করতে পারে না, তখন এই জটিলতা তৈরি হয়।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, এটি চিহ্নিত করার কিছু পূর্ব লক্ষণ আছে। যেমন– শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস নেওয়া, ঠোঁট বা আঙুলের ডগা নীল হয়ে যাওয়া, ক্লান্তি, বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হয়ে পড়া, অতিরিক্ত ঘাম, অস্থির বোধ করা, মাথা ব্যথা, দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি।

ডা. আজাদ বলেন, এ ক্ষেত্রে “প্রতিটা মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভালো হয়, রোগীকে ছয় মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে এনে ব্যবস্থা নিতে পারলে। কিন্তু সেটি তো সম্ভব না।”

প্রথমত, এত অল্প সময়ের মাঝে রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। আর আনলেও প্রাথমিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে সমস্যা চিহ্নিত করতেও অনেকটা সময় চলে যায়।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক বলছে, যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। যারা এই সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের প্রতি তিন জনের মাঝে একজন মৃত্যুবরণ করে।

উদাহরণ হিসাবে ডা. আজাদ বলেন, “অনেক সময় দেখবেন যে কেউ নামাজে সিজদা করতে গিয়ে পড়ে গেছেন এবং মারা গেছেন। এরকম অবস্থাকে বলে পালমোনারি এম্বোলিজম।”

এর অর্থ, “ফুসফুসের রক্তনালী ব্লক হয়ে গেছে।” ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, দ্রুত চিকিৎসা না করালে পালমোনারি এম্বোলিজমের কারণে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ফলে মৃত্যুও হতে পারে। এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, প্রায় ৩৩ শতাংশ পালমোনারি এম্বোলিজমে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা শুরু করার আগেই মারা যায়।

বিশ্বব্যাপী হার্ট ও রক্তনালীর যেসব সাধারণ রোগ আছে, এটি সেগুলোর অন্যতম। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পরেই হলো পালমোনারি এম্বোলিজমের স্থান।

শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বছরে নয় লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।

এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন– হঠাৎ করে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস চলা, প্রচুর ঘাম হওয়া, চিন্তিত বোধ করা, অজ্ঞান হওয়া ইত্যাদি।

পাশাপাশি কারও কারও বুক, বাহু, পিঠ, কাঁধ, গলা অথবা চোয়ালে তীব্র ব্যথা হতে পারে। ব্যথার তীব্রতা এত বেশি যে প্রতিবার শ্বাস নেওয়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে।

যারা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বা অন্যান্য হার্টের ব্যাধিতে আক্রান্ত কিংবা যাদের পরিবারে রক্ত জমাট বাঁধাসহ এসব রোগের ইতিহাস আছে, তারা পালমোনারি এম্বোলিজমে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকে।

এছাড়া, বয়স যদি ৬০ বছরের বেশি হয় বা কারও ওজন যদি অতিরিক্ত হয়, তাহলে তারাও ঝুঁকিতে থাকে।

স্ট্রোক

স্ট্রোকের সাথে অনেকে হার্ট অ্যাটাককে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু দু’টি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা।

স্ট্রোক মূলত মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত হানে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কের কোনও অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে গেলে স্ট্রোক হয়।

এই স্ট্রোক বিশেষত হেমোরেজিক স্ট্রোক, হঠাৎ মৃত্যুর আরেকটি প্রধান কারণ।

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কারণ এই রক্তের মাধ্যমেই শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছায়। কোনও কারণে মস্তিষ্কের কোষে যদি রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায় তখনই স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।

দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগীর পঙ্গুত্বের পাশাপাশি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

স্ট্রোকের লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। অনেকে স্ট্রোক হওয়ার কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে যান। এ কারণে আর চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম এর আগে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, কারও মধ্যে স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

স্ট্রোকের লক্ষণগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো– আচমকা শরীরের কোনও একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা/ অন্ধকার দেখা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া, হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাজ পড়ার মতো তীব্র মাথাব্যথা, জিহ্বা অসাড় হয়ে মুখ বেঁকে যাওয়া, শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়া/জ্ঞান হারানো, বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি, ইত্যাদি।

এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে কাত করে শুইয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে, দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী যত অসংক্রামক ব্যাধি আছে, সেগুলোর মধ্যে মৃত্যুর দিক থেকে হৃদরোগের পরেই স্ট্রোকের অবস্থান। উন্নত বিশ্বের তুলনায় নিম্ন আয়ের দেশে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি বলে মত সংস্থাটির।

প্রতিরোধের উপায় কী?

হঠাৎ মৃত্যু অনেক কারণে হতে পারে এবং একেক কারণের জন্য সমাধানও একেক রকম।

তবে সামগ্রিকভাবে বললে এর একমাত্র সমাধান সুশৃঙ্খল জীবন, বলছিলেন ডা. আজাদ।

তিনি বলেন, “যেগুলোর কথা বলা হলো, এই অবস্থাগুলো একবার হলে বার বার হয়। তাই, ধরা পড়ার সাথে সাথে সতর্কতা নেওয়া যেতে পারে। তবে অনেক সময় সতর্ক থাকলেও মারা যেতে পারে।”

ডাক্তাররা এই হঠাৎ মৃত্যু’র বিষয়গুলো নিয়ে খুব ভয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কারণ এসবের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর আর্টিফিশিয়াল লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়।”

কিন্তু বেশিরভাগ রোগীই সেই সুবিধাটা পায় না। ফলে, অপ্রত্যাশিত মৃত্যু নেমে আসে।

তবে এই পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেজন্য তিনি সুশৃঙ্খল জীবনাচরণের প্রতি জোর দিয়েছেন।

“নিয়ম সবার জন্য সমান। যার ডায়াবেটিস আছে, তার জন্যও যা নিয়ম, হার্টের রোগীর জন্যও একই নিয়ম। তা হলো– ডিসিপ্লিনড লাইফস্টাইল, ব্যালেন্সড ডায়েট, এক্সারসাইজ।”

সেইসাথে, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে তিনি। তিনি আরও বলেছেন যে শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক রাখতে হবে। অর্থাৎ, “ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”

তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোগী শেষ মুহূর্তে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কিন্তু এর পরিবর্তে সমস্যা বড় হওয়ার আগেই, অর্থাৎ শুরুতেই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা দরকার।