প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডারকে তার পদে বহালের মাত্র তিন মাসের মধ্যে সরিয়ে দিয়েছেন।
মিঃ পুতিন যাকে "বিশেষ সামরিক অভিযান" বলে অভিহিত করেছেন, এখন সেটার নেতৃত্ব দেবেন চিফ অফ জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ।
সের্গেই সুরোভিকিনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন জেনারেল গেরাসিমভ, যিনি ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে সাম্প্রতিক হামলার তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় একের পর এক সামরিক পরাজয়ের পর পূর্ব ইউক্রেনে অগ্রগতি ঘটছে বলে রাশিয়া দাবি করে, তার পরপরই এই রদবদল ঘটে।
রাশিয়া ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে তাদের আগ্রাসন শুরু করে।
জেনারেল গেরাসিমভ, ২০১২ সাল থেকে রাশিয়ান চিফ অফ জেনারেল স্টাফ পদে রয়েছেন। বলা হয়, তিনি সোভিয়েত-পরবর্তী যুগের রাশিয়ান চিফ অফ জেনারেল স্টাফদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেনারেল সুরোভিকিন - এখন তার ডেপুটি - সিরিয়ায় রাশিয়ার অভিযান এবং বিশেষ করে আলেপ্পো শহরে ভারী বোমাবর্ষণসহ পূর্ববর্তী যুদ্ধগুলোয় তার নৃশংস কৌশলের জন্য তাকে "জেনারেল আর্মাগেডন" নামেও অভিহিত করা হয়েছে।
অক্টোবরে অভিযানের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই, রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য প্রচারণা শুরু করে।
এতে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিককে কনকনে শীতের মধ্যে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন এবং কলের পানি ছাড়া ছিল।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন থেকে রুশ বাহিনীর প্রত্যাহার ছিল ইউক্রেনীয়দের জন্য একটি বড় সাফল্য।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে, জেনারেল সুরোভিকিনকে প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল "সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখার মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা এবং রুশ বাহিনীকে ব্যবস্থাপনার মান ও কার্যকারিতা উন্নত করা"।
কিন্তু এই পদক্ষেপের ফলে তিনি হয়তো আরও বেশি ক্ষমতা অর্জন করেছেন বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন।
সামরিক বিশ্লেষক রব লি টুইটারে লিখেছেন, "ইউক্রেনের ইউনিফাইড কমান্ডার হিসেবে, সুরোভিকিন খুব শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন, এবং পুতিনের সাথে কথা বলার সময় সম্ভবত শোইগু [রাশিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই] এবং গেরাসিমভকে উপেক্ষা করছিলেন,"
রাশিয়ার কিছু সামরিক ব্লগার, যারা যুদ্ধকে সমর্থন করে, তারাও এই যুদ্ধ যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার ব্যাপক সমালোচনা করে।
তারা বিশেষ অভিযানের নতুন প্রধান জেনারেল গেরাসিমভসহ রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বেরও সমালোচনা করেছে।
সোলেডারে লড়াই অব্যাহত থাকার মধ্যেই বুধবার এই নেতৃত্ব পরিবর্তনের ঘোষণা আসে।
সোলেডারের পতন রুশ সৈন্যদের তাদের কৌশলগত শহর বাখমুতে আক্রমণে সাহায্য করতে পারে। শহরটির অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) দূরে।
শহরটির এই সীমারেখার মধ্যে রুশ বাহিনী একটি সুরক্ষিত আর্টিলারি অবস্থান নিতে পারে।
সোলেডারের গভীর লবণের খনিও রয়েছে, যা ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রুশ সৈন্যদের সুরক্ষা দিতে পারে আবার যুদ্ধসরঞ্জাম সংরক্ষণের জন্য খনিটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ এমন আলোড়ন তৈরির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিতে চাইছে।
মঙ্গলবার রাতে, গ্রুপের নেতা, ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছেন যে তার বাহিনী সোলেদারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
তবে বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। যা প্রিগোজিনের দাবির সাথে সাংঘর্ষিক – তবে মন্ত্রণালয় বলছে ওই লড়াইয়ে শুধুমাত্র ওয়াগনার গ্রুপের সৈন্যরা জড়িত ছিল।
পরে মিঃ প্রিগোজিন বুধবার সন্ধ্যায় তার দাবির পুনরাবৃত্তি করেন। টেলিগ্রামে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে, তিনি গর্বের সঙ্গে বলেছেন যে তার ভাড়াটে সৈন্যরা প্রায় ৫০০ ইউক্রেনপন্থী সৈন্যকে হত্যা করেছে।
তিনি লিখেছেন, "পুরো শহর ইউক্রেনীয় সৈন্যদের লাশে ছেয়ে গেছে।"
ইউক্রেন সম্প্রতি রাশিয়ান লাশের স্তূপ সম্পর্কেও একই ধরনের মন্তব্য করেছে।
তবে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ম্যাক্সার টেকনোলজিস কোম্পানি আগস্টে এবং জানুয়ারির শুরুর দিকে সোলেডারের দুটি ছবি প্রকাশ করে, যার মাধ্যমে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ধ্বংসের মাত্রা দেখা যায়।
সোলেডারের আশেপাশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে ঘিরে রাশিয়ার সরকারী ব্যাখ্যাগুলো দেশটির সামরিক নেতৃত্বের বিভাজনের দিকটিকে ইঙ্গিত করে, বিশেষ করে ওয়াগনার গ্রুপ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে সেটাই ফুটে ওঠে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোলেডারের পতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
"সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং এর প্রচারকারীরা সোলেডারে সাফল্য অর্জনের ভান করছে", মি. জেলেনস্কি বুধবার তার রাতের ভাষণে বলেন, "তবে সোলেডারে লড়াই অব্যাহত রয়েছে"। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।