অস্কারজয়ী প্রামাণ্যচিত্র “টোয়েন্টি ডেজ ইন মারিউপোল”- এর দলটির প্রতি সোমবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের শুরুর দিকের ভয়াবহতা নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি গত রবিবার অনুষ্ঠিত অস্কার আসরে পুরষ্কার জিতে নেয়।
এক্স-এ এক পোস্টে জেলেন্সকি বলেন,“শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের এই লোভনীয় পুরস্কারটি পাওয়া অবশ্যই “আমাদের সমগ্র দেশের জন্য” গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “মারিউপোলের ভয়াবহতা ভুলে যাবার নয়। রাশিয়ার অমানবিক আগ্রাসন আমাদের জনগণের জন্য কি দুর্দশা নিয়ে এসেছে তা পুরো বিশ্বের দেখা উচিত এবং সেটা মনে রাখা উচিত।”
তিনি মারিউপোলের ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, সেখানে পুরো পরিবারকে রাশিয়ান গোলার আঘাতে হত্যা করে তাদের নিজেদের উঠানে কবর দেয়া হয়েছে এমনও হয়েছে। কত মানুষ নিহত হয়েছে এই সংখ্যাটি এখনও নিশ্চিত নয়।
ইউক্রেনীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মস্তিস্লাভ চেরনভ এটি পরিচালনা করেন। প্রামাণ্যচিত্রে তিনি ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রথম দিনগুলোতে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মারিউপোলে, রাশিয়ার নৃশংস হামলা ও ক্রমাগত বোমাবর্ষণের কাহিনী তুলে ধরেছেন।
জেলেন্সকির মতে, এই চলচ্চিত্রে রুশ সন্ত্রাসবাদের সত্যতা তুলে ধরা হয়েছে।
এপির সাংবাদিক হিসেবে প্রায় এক দশক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা আন্তর্জাতিক সংঘাত নিয়ে কাজ করার পর চেরনভ তার প্রথম প্রামাণ্য চিত্রে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এক মর্মান্তিক উপাখ্যান তুলে ধরেছেন। এপি ও পিবিএসের “ফ্রন্টলাইনের” যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রে চেরনভ, ফটোগ্রাফার এভজেনি মালোলেৎকা ও প্রযোজক ভ্যাসিলিসা স্তেপানেনকো এই যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের ভেতরে যেয়ে ভিডিও ধারণ করেন।
রাশিয়া বোমাবর্ষণ শুরু করার মাত্র এক ঘণ্টা আগে দলটি সেখানে পৌঁছায়। পরবর্তী দুই সপ্তাহে, তারাই সেখানে সর্বশেষ সাংবাদিক দলে পরিণত হন, যারা কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য কাজ করছিলেন। বাইরের বিশ্বে তাদের মাধ্যমে তখন ইউক্রেনের বিভিন্ন বয়সী বেসামরিক হতাহত, গণকবর খনন, মাতৃসদন হাসপাতালে বোমা হামলা এবং ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপক ব্যাপ্তি দেখানো হয়। তথ্যচিত্রটি বর্ণনা করেছেন চেরনভ। তিনি ইউক্রেনে জন্মগ্রহণ করেছেন। জনসেবার জন্য তিনি এবং তার দল ২০২৩ সালের পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নেন।
অ্যাকাডেমি পুরষ্কার গ্রহণের সময় আবেগাপ্লুত চেরনভ বলেন, “ইউক্রেনের ইতিহাসে এটাই প্রথম অস্কার এবং আমি সম্মানিত বোধ করছি।”
তিনি রাশিয়ার উদ্দেশ্যে ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানান।
আজভ সাগরের তীরবর্তী, মারিউপোল শহরটি রাশিয়ার হামলায় প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কিয়েভ বলছে, সেখানে হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
পুরস্কারটি এমন সময় এলো যখন রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনীয় সেনা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ৬০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ আটকে আছে।
জেলেন্সকি, রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে সত্য বলছেন যারা, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে, ক্রেমলিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তারা ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করেছে। ভয়েস অফ আমেরিকা