News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়া কেন হয়?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক স্বাস্থ্য 2024-01-22, 3:18pm

rgrry-4f41189ef844180ab128a9067e5685a31705915138.jpg




‘কালকে সারারাত-সারাদিন ওর জ্বর ছিল। সকাল থেকে চারবার বমি করছে। কিচ্ছু খেয়ে পেটে রাখতে পারতেছে না আমার মেয়েটা। তাই, ফজরের আজানের আগেই গাড়িতে কইরা নিয়া আসছি এখানে।’

গত ১৬ই জানুয়ারি বেলা ১২টার দিকে স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর, বি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে এভাবেই মেয়ের অসুখের কথা বর্ণনা করছিলেন ফাতেমা বেগম।

তিনি বলেন, দুইদিন ধরেই তীব্র জ্বরে ভুগছিলো তার দুই বছরের কন্যাশিশু কারিশমা। সেইসাথে, গতরাতে যোগ হয়েছে ক্রমাগত বমি এবং পেট খারাপ।

কিন্তু, অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যাওয়ায় এদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই কারিশমাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত এই হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা।

ঢাকায় আনার পর কারিশমা’র জায়গা হয়েছে হাসপাতালটিতে ভর্তি অন্যান্য ডায়রিয়া রোগীর সাথে। এই রোগীদের বেশিরভাগই শিশু, যাদের অধিকাংশের বয়সই পাঁচ বছরের কম। 

সাধারণত শীতকালে বাংলাদেশের অনেক শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ বছরটিও তার ব্যতিক্রম নয়। শীত শুরুর সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতালগুলোয় এখন ডায়রিয়া রোগীদের ভিড়।

আইসিডিডিআর, বি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনযায়ী, বর্তমানে যারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন, তাদের ৬০-৭০ শতাংশই হলো শিশু এবং মাত্র ৩০ শতাংশ হলো প্রাপ্তবয়স্ক।

বিদায়ী বছরের শেষ এক সপ্তাহে দৈনিক গড়ে প্রায় ৭০০ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছিলো এই হাসপাতালে। তারপর ধীরে ধীরে সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে।

কিন্তু, চলতি মাসের মতো ডিসেম্বরেও ডায়রিয়া আক্রান্তদের সিংহভাগই ছিল শিশু।

প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বিজ্ঞানী ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, “গত নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে অনেক বেশি রোগী ছিল। তখন শীতও এখনকার চেয়ে কম ছিল। অর্থাৎ, তীব্র শীত আসার আগে থেকেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছিলো। ঐ সময় প্রতিদিন গড়ে ৭৫০-৮০০ জন রোগী এসেছে।”

“তবে, অনেক বেশি শীত পড়ায় এখন ডায়রিয়া রোগীর পরিমাণ কমে গেছে; বিষয়টা কিন্তু মোটেও এমন না। তীব্র শীতের সময়ের আগে থেকেই এই প্রকোপ শুরু হতে পারে। মূলত, আবহাওয়া যখন মোটামুটি শুষ্ক হওয়া শুরু করে, শীতটা আসা শুরু করে, তখনই এই ডায়রিয়া আউটব্রেক বেশি হয়।”

বাংলাদেশে বছরের দুই সময়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। প্রথমটি হলো, বর্ষার আগে আগে। অর্থাৎ, যখন তাপমাত্রা অনেক উত্তপ্ত থাকে।

এরপর, শীতের আগে আগে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে দ্বিতীয় দফায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়া শুরু হয় এবং পুরো জানুয়ারি পর্যন্ত তা চলমান থাকে।

শীতকালীন এই ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হলো কিছু ভাইরাস, যার মাঝে রোটা ভাইরাস অন্যতম।

ডা. লুবাবা বলেন, “শীতকালে যে আউটব্রেক দেখি, তা ভাইরাসের জন্য। এর মাঝে রোটা ভাইরাস অন্যতম। এছাড়া, আরও অনেকগুলো ভাইরাস আছে। যেগুলোর লক্ষণ রোটা ভাইরাসের মতোই।”

শীতকালীন ডায়রিয়ার পেছনে যে কেবল রোটা ভাইরাসই দায়ী, এ কথা বলার কোনও সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা কখনোই এটা খুঁজে বের করিনি যে এই ডায়রিয়াটা রোটা দিয়ে হচ্ছে, নাকি অন্যকিছু দিয়ে হচ্ছে। কারণ, এর একটা কমন প্যাটার্ন আছে। তা হলো, যেকোনও ভাইরাস দিয়েই আক্রান্ত হোক না কেন, এটা সেলফ-লিমিটিং; অর্থাৎ, নিজে নিজে ভালো হয়ে যাওয়া।”

সামগ্রিকভাবে শীতকালের এমন ডায়রিয়াকে ‘ভাইরাল ডায়রিয়া’ বলা যেতে পারে বলে জানান মিজ শাহরিন।

“শীতকালে হলে সেটাকে ভাইরাল ডায়রিয়া বলা যায়। এই ডায়রিয়ার পেছনের কারণগুলোর মাঝে রোটা ভাইরাস অন্যতম প্রধান ভাইরাস। তবে ডায়রিয়াটা এডিনো বা অ্যাস্ট্রো ভাইরাসের কারণেও হতে পারে।”

ভাইরাল ডায়রিয়া’র লক্ষণ

শীতকালে অনেকের ঠান্ডা জ্বর হলেও ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় গায়ে জ্বর খুব বেশি থাকে না।

কিন্তু কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ আছে, যা দেখলে বোঝা যাবে যে ব্যক্তির ভাইরাল ইনফেকশন হয়েছে। যেমন-

হালকা কাশি

নাক দিয়ে পানি পড়া

সামান্য জ্বর (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো)

থেমে থেমে বমি

মলে জলীয় অংশের আধিক্য

সবশেষ লক্ষণ দু’টো যখন দেখা যাবে, তখন বুঝতে হবে যে সে ভাইরাল ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে।

এক্ষেত্রে, সাধারণত হাতে ময়লা থাকলে বা হাত না ধুয়ে বাচ্চাকে খাবার খাওয়ালে ভাইরাল ডায়রিয়া হয়।

তবে রোগীকে যদি পরিপূর্ণ যত্ন এবং চিকিৎসা প্রদান করা হয়, তাহলে এই ভাইরাল ডায়রিয়া সাত দিনের মাথায় ভালো হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ডায়রিয়ার মাঝে কিছু পার্থক্য আছে বলে জানান মিজ শাহরিন।

“শীতকালে বাচ্চা মৃদু অসুস্থতা নিয়ে আসে। এইসময় বাচ্চার পানিশূন্যতা কম থাকে। এর অর্থ, বাচ্চাকে বাসায় রেখে যদি স্যালাইন ঠিকমতো খাওয়াই, তখন হাসপাতালে আনার মতো অবস্থা হবে না।”

“কিন্তু গরমকালে ডায়রিয়া হলে অনেক বাচ্চার মারাত্মক পানিশূন্যতা থাকতে পারে। কারণ, এসময় বাচ্চা অনেক বেশি ঘেমে যায়। তাই, গরমকালে ডায়রিয়া হলে সেটা অনেক বেশি দুশ্চিন্তার।”

কখন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে

ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, “ভাইরাল ইনফেকশন শিশুদের মাঝে খুব সাধারণ এক রোগ। দুই বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা দুই চার বার এরকম ভাইরাল ইনফেকশনে ভোগে। এতে করে তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই। এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নাই।”

তাই, উপরের ঐ লক্ষণগুলো দেখা গেলে রোগীকে ঘরে রেখেও চিকিৎসা প্রদান করা যায়। কিন্তু কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলোকে ‘ডেঞ্জার সাইন’ বা বিপদ সংকেত বলা হয়।

সেগুলো থাকলে রোগীকে, বিশেষ করে শিশুদেরকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

বাচ্চা এক ঘণ্টার মাঝে তিন বারের বেশি বমি করলে তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। অর্থাৎ, যদি বাচ্চাকে কিছুই খাওয়ানো না যায়। এমনকি, যসি সে মুখে স্যালাইনও না রাখতে পারে।

বাচ্চা একদম নেতিয়ে পড়ে আছে। তার খাওয়ার কোনও শক্তি নেই।

বাচ্চার খিঁচুনি হচ্ছে এবং হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।

করণীয় কী?

রোগীকে বাড়ি বা হাসপাতাল, যেখানেই রাখা হোক না কেন; কিছু চিকিৎসা অত্যাবশ্যকীয়।

যদি জ্বর থাকে, জ্বরের ঔষধ দিতে হবে

সর্দিতে যদি নাক বন্ধ থাকে, তবে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে; যাতে বাচ্চা শ্বাস নিতে পারে

ডায়রিয়া চলাকালীন পরিমাণ মতো ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে

ডা. লুবাবা’র মতে, “এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাল ইনফেকশনের সময় বাচ্চার ডায়রিয়া হলে বাচ্চাকে সঠিক পরিমাণের সালাইন দিতে হবে। বাচ্চার ওজন যত, প্রতিবার ডায়রিয়ার পর ঠিক তত চা চামচ পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে। অর্থাৎ, একটা বাচ্চার ওজন যদি আট কেজি হয়, তাহলে সে প্রত্যেকবার পায়খানার পর আট চা চামচ স্যালাইন খাবে।”

তবে নির্দেশনা মেনে ওরস্যালাইন খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন এই বিজ্ঞানী।

তিনি বলেন, “ওরস্যালাইন একটা ওষুধ। এটা পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে। এটা বানাতেও হবে একেবারে এক্স্যাক্ট নির্দেশ অনুযায়ী। এক্ষেত্রে, ওরস্যালাইন পানির বোতলে গুলিয়ে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিতে পারবো। এর মাঝে বাচ্চাকে যতটুকু খাওয়ানোর কথা, তা খাইয়ে সময় পার হলে বাকিটা ফেলে দিবো।”

ডায়রিয়া নিয়ে ভুল ধারণা

অনেক সময় বাচ্চার ডায়রিয়া হলে পরিবারের পক্ষ থেকে বাচ্চার মাকেও ওরস্যালাইন খেতে বলা হয়।

এই বিষয়টিকে ‘ভুল ধারণা’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, “বাচ্চার মাকে ওরস্যালাইন দিলে বাচ্চার জন্য এটা কোনো প্রভাব ফেলছে না। কারণ দুধের মাধ্যমে ওরস্যালাইনটা ট্রান্সমিট হয় না। তাই, যার ডায়রিয়া হয়েছে, ওরস্যালাইন শুধু সে-ই খাবে।”

তিনি আরও বলেন, ভাইরাল ডায়রিয়া হলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার আশায় অনেকে অ্যান্টিবায়োটিক খান।

“ডায়রিয়া হলে অনেকেই এক দুই দিন দেখার পর হাসপাতালে আসে বা ফার্মেসিতে যায়। কিন্তু ভাইরাল ডায়রিয়ার ইনফেকশন ইমিডিয়েটলি ভালো করার মতো কোনও ঔষধ নেই।”

“বারবার ফার্মেসিতে গেলে ফার্মেসির লোকজন তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিবে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক কখনওই ভাইরাস মারার জন্য ব্যবহার করা যায় না। অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার জন্য।”

এছাড়া, অনেক বাবা-মা আছেন, যারা মনে করেন যে বাচ্চাকে বেশি বেশি খাবার স্যালাইন খাওয়ালে বাচ্চা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

এ বিষয়ে ডা. লুবাবা’র অভিমত, “না জেনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্যালাইন দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এছাড়া, ঘন করে বানানো স্যালাইন খাওয়ালে বাচ্চাদের মারাত্মক সমস্যা হয়।”

“অতিরিক্ত স্যালাইন খেলে লবণ বেড়ে যায় শরীরে। এই তীব্র লবণের কারণে হাইপারনেট্রেমিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীরে লবণ বেড়ে গেলে বাচ্চার খিঁচুনি হয় এবং জটিল আকার ধারণ করে।”

“এই ধরনের রোগী শীতকালে বেশি পাওয়া যায়। কারণ যারা এই নিয়ম জানে না, ‘ভালো হচ্ছে না কেন, আরও বেশি খাওয়াই’ মনোভাব থেকে তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়াতেই থাকে। তখন বাসার মাঝেই বাচ্চার খিঁচুনি শুরু হয়ে যায়। এই বাচ্চাগুলোকে আইসিইউ-তে রেখে ধীরে ধীরে তাদের শরীরের লবণের মাত্রা স্বাভাবিক করতে হয়। এর জন্য অনেক বেগ পেতে হয়।” বিবিসি নিউজ