News update
  • DMP Commissioner Khandker Golam Faruq set to retire     |     
  • CEC replies to EU letter seeking cooperation in organising polls     |     
  • Members of media may face visa restrictions, US Envoy Haas     |     
  • Saudi companies interested to invest in Bangladesh: Envoy     |     

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশৃঙ্খলায় পরিস্থিতি এড়ানো যায়নি কেন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক error 2022-06-28, 8:24am

img_20220628_082153-e4a84e4b17003d693dc514a79449d9a41656383046.png




বাংলাদেশে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরুর প্রথম দিনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবার পর সোমবার থেকে সেখানে সেনাবাহিনীর টহলসহ আরোপ করা হয়েছে অতিরিক্ত কড়াকড়ি।

সেতু উন্মুক্ত করার পর প্রথম দিনেই সেখানে নেমেছিল মানুষের ঢল, তার পাশাপাশি সেতুর নাটবল্টু খোলা থেকে শুরু করে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যুসহ নানান ঘটনা জন্ম দেয় ব্যাপক আলোচনার।

এরকম একটা পরিস্থিতি যে তৈরি হতে পারে, সেটা আঁচ করে কেন আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ - এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর প্রথম দিনেই আলোচিত হয় সেতুতে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দু'জনের নিহত হওয়ার ঘটনা। সেই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

আরেকজনের টিকটক ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে ঐ ব্যক্তি সেতুর রেলিংয়ের নাটবল্টু হাত নিয়ে বলেছেন, এসব হাত দিয়ে খোলা যায়।

এছাড়া রোববার সারাদিন ধরে সেতু জুড়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড়, গাড়ি থামানো ও সেলফি তোলার ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছিল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

এ প্রেক্ষাপটে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কার্যকর করা হয়েছে অন্যান্য বিধিনিষেধ ।

দ্বিতীয় দিনে বদলে যায় পদ্মা সেতুর চিত্র

বিশৃঙ্খলার পরদিন সোমবার বিধিনিষেধ কার্যকর করায় পদ্মাসেতুর চিত্র ছিল পুরোপুরি ভিন্ন রকম।

সেতুতে কোন মোটরসাইকেল প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। মানুষকে হেঁটে সেতুতে উঠতে দেননি নিরাপত্তাকর্মীরা ।সোমবার ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী বাসে করে পদ্মা সেতু পার হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় নিজের গ্রামের বাড়ি যান গৃহিণী অজিফা বেগম।

সেতু পার হওয়ার সময় তাদের বাসের যাত্রীদের নামতে দেয়া হয়নি। সেনাবাহিনীর টহল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সেতুতে যানবাহন চলাচলে সুশৃঙ্খল পরিবেশ দেখেছেন অজিফা বেগম।

পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রোববার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এরপরও সোমবার সকালে সেতুর দুই পাশেই অনেক মানুষ মোটরসাইকেলে করে সেতু পার হওয়ার জন্য ভিড় করেন। তবে তারা সেতুতে উঠতে পারেননি।

এছাড়া অনেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে যাওয়ার সময় সেতুতে কোথাও গাড়ি থামিয়ে সেতুতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন, তখন সেনাবাহিনীর টহল দল এসে তাদের সরিয়ে দিয়েছে।

পদ্মা সেতুতে দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা হাসানুর রহমান বলেছেন, নির্দেশনা অনুযায়ী তারা বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর করেন।

তিনি জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার পরও মোটরসাইকেল নিয়ে যারা এসেছিলেন, সেতুতে উঠতে না দিয়ে ফেরি এনে তাদের নদী পার করানো হয়েছে।

উচ্ছ্বাস কেন বিশৃঙ্খলায় রূপ নিয়েছিল?

যদিও সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেয়ার কয়েকদিন আগেই বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। সেতুতে গাড়ি থেকে নামা, পায়ে হাঁটা এবং ছবি বা সেলফি তোলা-এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

কিন্তু চলাচল শুরুর প্রথমদিনে বিধিনিষেধ কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষের তেমন কোন তৎপরতা দৃশ্যমান ছিল না এবং মানুষের উচ্ছ্বাস একপর্যায়ে বিশৃঙ্খলায় রূপ নিয়েছিল।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম একজন সংগঠক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, প্রথমদিনে সেতুতে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলাই ছিল না।

প্রথম দিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মি: কাঞ্চন বলেন, "দেখেন কেউ প্রস্রাব করছে। কেউ আবার নামাজ পড়ছে। কেউ আবার নাটবল্টু খুলছে। এটা কেমন ধরনের কথা।"

তার প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের বিষয়গুলো কেন কর্তৃপক্ষ নজরে আনেনি এবং আগাম নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেয়নি?

ইলিয়াস কাঞ্চন মনে করেন, কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার অভাব এবং গাফিলতি ছিল।

যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু যখন দুই যুগ আগে ১৯৯৮ সালে চালু করা হয়েছিল, তখনও প্রথমদিকে সেই সেতু দেখার জন্য মানুষের ভিড় এবং নানাভাবে তাদের উচ্ছাস প্রকাশ ঘটেছিল।

সেই অতীত অভিজ্ঞতা থাকার পরও পদ্মা সেতুতে কর্তৃপক্ষ কেন প্রথমদিনেই নিয়মকানুন কার্যকর করেনি - এই প্রশ্ন এখন উঠেছে।

কী বলছে সেতু কর্তৃপক্ষ?

বিশ্লেষকদের অনেকে আবার মনে করেন, পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেই দেশজুড়ে আবেগ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশের একটা পরিবেশ তৈরি করা হয়। সেজন্য প্রথমদিনে সেতুতে উচ্ছাস প্রকাশে সরকারের সায় ছিল এবং কর্তৃপক্ষও ছাড় দিয়েছে।

তবে অনেকে আবার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।

সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব ড: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেছেন, শুরুতে মানুষের আবেগ বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ কিছুটা নমনীয় ছিল।

"সেতুতে চলাচলের বিধিনিষেধের ব্যাপারে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে এবং মানুষকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু মানুষের আবেগ কী ছিল - তাতো আপনি জানেন" - বলেন মি: মনিরুজ্জামান।

তিনি আরও বলেন, "আপনাদের মিডিয়ার লোকেরা নিয়ম ভায়োলেট (লঙ্ঘন) করেছে। পুলিশের লোক ভায়োলেট করেছে। ওখানে সরকারি অনেক লোক ভায়োলেট করেছে। সবাই সেখানে নেমে ছবি তুলেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করেছে।"

অতিরিক্ত সচিব মি: মনিরুজ্জামান সেতু নিয়ে মানুষের আবেগের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, "এমন একজন মানুষ সেখানে পাওয়া গিয়েছিল যে তিনি বলেছিলেন, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি খালি পায়ে সেতু পার হবেন। তো এই আবেগ আপনি কীভাবে বন্ধ করবেন।"

তিনি উল্লেখ করেন, "প্রথমদিন মানুষকে আইন মানার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন থেকে আইনানুগ প্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছি।"

তবে কর্তৃপক্ষ মনে করছে, পদ্মাসেতুতে চলাচলে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর করা হলেও সাধারণ মানুষ কিছুদিন বা একটা সময় পর্যন্ত তাদের আবেগ এবং উচ্ছ্বাস প্রকাশের চেষ্টা করবে। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।