News update
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     

রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘খুন’ হচ্ছে প্রকৃতি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক error 2024-12-03, 9:18pm

729a6076cee8fda22720b2354c76dd5a94f8cd9656f86294-223651ee8c41e924183ef001739721141733239132.jpg




পরিশোধন ছাড়াই বর্জ্য মিশছে প্রকৃতিতে। সুন্দরবন সংলগ্নসহ বিভিন্ন এলাকায় নেই পাখির বাসা। ৭০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে থাকা মৎস্য আহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সুন্দরবনের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যে আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল বিশেষজ্ঞদের, বাস্তবে তার থেকেও বেশি ক্ষতি করছে প্রকল্পটি।

পরিবেশের বিপর্যয়, প্রাকৃতিক সম্পদ কমে যাওয়া, জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব, স্থানীয়দের জীবিকা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রকল্পটিকে দিন দিন আরও বেশি বিপজ্জনক করে তুলছে। নির্মাণের উদ্যোগকালীন থেকেই রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক চলে আসছিল। 

পরিবেশবাদী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচে নির্মিত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট চালু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। আর ২য় ইউনিট উৎপাদনে যায় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। যান্ত্রিক ত্রুটি ও কয়লা সংকটে এখন পর্যন্ত অন্তত পনেরো বার বন্ধ হয়েছে কেন্দ্রটি।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন কয়েকটি নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় নদীতে মাছ ধরে প্রায় সবার জীবিকা নির্বাহ হলেও নদীতে মাছ কমে গেছে। বর্তমানে তিন বেলা ভাত যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে মাছ থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য পানিতে পড়ায় মাছ কমতে শুরু করে নদীতে। সারাদিন মাছ ধরেও খাওয়ার খরচ ওঠে না তাদের।

আমজাদ হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘কেন্দ্র হওয়ার আগে ওই জমিতে আমরা ধান চাষ ও মাছ ধরে খেতাম। ধান রোপণ, কাটা ও মাছের ঘের প্রস্তুতের জন্য অনেক শ্রমিক লাগত। সেগুলো এখন আর লাগে না। ফলে আমাদের জীবিকার বড় একটি ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে দূর-দুরান্তে কাজে যেতে হয়।’

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ওই এলাকায় ১ হাজার ৮৩৪ একর বিলান জমি অধিগ্রহণ করা হয় বলে জানা যায়।

সম্প্রতি সরকার (পানি সম্পদ মন্ত্রণায়ল) পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এর গবেষণা রিপোর্টে উঠে এসেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর পর থেকেই কয়লা পরিবহনে দূষিত হচ্ছে সুন্দরবন এলাকার নদী ও বন। জেটি থেকে শর্ত ভঙ্গ করে উন্মুক্তভাবে খালাস করা কয়লা সরাসরি পড়ছে নদীতে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার ছাই এবং কেন্দ্র থেকে নির্গত পানি শর্ত ভঙ্গ করে পরিশোধন ছাড়াই মিশছে প্রকৃতিতে। ফলে এ এলাকায় বাড়ছে নাইট্রেট, ফসফেট, পারদসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা। যার বিরুপ প্রভাব দৃশ্যমান জলজ ও বনজ জীব বৈচিত্রের ওপর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্নসহ প্রকল্প এলাকাগুলো করমজল, হারবাড়িয়া, আকরাম পয়েন্ট ও হিরণ পয়েন্টে কোনো পাখির বাসা দেখা যায়নি। চারণভূমি বিলুপ্ত হয়েছে, গৃহপালিত প্রাণীর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। প্রকল্প এলাকার ৭০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে থাকা মৎস্য মানুষের আহারের জন্য বিপজ্জনক বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

পরিবেশবাদী ও নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন সময় কয়লাবাহী জাহাজডুবিতে শত শত টন কয়লা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর পানিতে মিশেছে। এর ক্ষতি সরাসরি দৃশ্যমান না হলেও বন ও নদীর প্রাণ-প্রকৃতি এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. নাসিফ আহসান সময় সংবাদকে বলেন, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থানীয় পরবেশ এবং অর্থনীতি দুই খাতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একদিকে প্রায় কয়লার অভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকে, তখনও বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ রাষ্ট্রকেই ব্যয় করতে হয়। আবার যখন কয়লা আসে সেটি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে আনা হয়। যেটাকে বলে ফাইন ডাস্ট। এটি পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর। বিভিন্ন সময় এসময় কয়লা বোঝাই জাহাজ বা কার্গো নদীতে ডুবে যায়। সঙ্গত কারণেই তখন নদীর পানি দূষণসহ ওই অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

পরিবেশের বিপর্যয় হবে জেনেও ভারতকে খুশি করার জন্য রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছিল বলে জানান সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, বলা হয়েছিল আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু বাস্তবে সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। নিম্নমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করায় রামপাল-মোংলার মাটি, বাতাস, পানি দূষণের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মানুষের কর্মসংস্থান কমে আসছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণ। ক্রমাগত এ দূষণ এখনই ঠেকানো না গেলে সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যে দেখা দেবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যোগ করেন তিনি।

শুধু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, রামপাল-মোংলায় অবস্থিত আরও শতাধিক ভারী শিল্পের দূষণে নদীতে জলজ প্রাণীর সংখ্যা যেমন কমে আসছে। তেমনি বায়ু দূষণের ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) খুলনার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘সারা বিশ্বই যখন কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনতে সোচ্চার, তখন এ ধরনের প্রকল্প সুন্দরবন, নদী ও প্রকৃতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা দেখেছি, যে একশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার ওপরের পানি পশুর নদীতে পড়ছে। অনবরত ছাই সুন্দরবন ও নদীতে পড়ছে। জীববৈচিত্র্যর যে ইকো সিস্টেম সেটি শেষ হয়ে যাচ্ছে।’ এভাবে চলতে থাকলে হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সম্পদ আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, যোগ করেন তিনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নদীর পানিতে মিশে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মারা যাচ্ছে কিছু জলজ প্রাণী। কিছু প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। জলজ খাদ্য শৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নদীর দূষিত পানি জোয়ারের সময় বনের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে উদ্ভিদের ক্ষতি হয়। এছাড়া গবেষণা থেকে দেখা যায়, নদীতে প্রতি লিটার পানিতে যে পরিমাণে মাছের রেনু পাওয়া যেত, ডিম পাওয়া যেত সেটি এখন অর্ধেকের কাছে নেমে এসেছে। ফাইটোপ্লাংকট, জু-প্লাংকটনসহ বিভিন্ন খাদ্য কনা অতি মাত্রায় কমে গেছে। প্রকল্পের নিকটবর্তী সুন্দরবন এবং পশুর নদীতে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়দের যে অভিযোগ নদীতে মাছ মিলছে না তার বড় কারণও এটি। পশুর নদীতে একটা নির্দিষ্ট সময় দাঁড়িয়ে থাকলো আগে যে পরিমাণ ইরাবতী ডলফিন দেখা যেত এখন আর দেখা না যাওয়ার কারন হিসেবেও দূষণকে দায়ী করেন এ বিশেষজ্ঞ।