News update
  • Govt to cut savings certificate profit rates from January     |     
  • Gold prices hit fresh record in Bangladesh within 24 hours     |     
  • Election to be held on time, Prof Yunus tells US Special Envoy     |     
  • Moscow wants Dhaka to reduce tensions domestically, also with Delhi     |     
  • Saarc experts meet to reduce livestock-origin greenhouse gases     |     

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কী পূর্বাভাস করছে বিশ্ব ব্যাংক?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2023-10-04, 11:09am

5f9deeb0-61fd-11ee-9e95-0fbf91436e5c-2924528ee5d9368257bbe48a7aa2a42f1696396196.jpg




বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস করেছে, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি আগের অবস্থায় ফেরার আগে ২০২৪ অর্থ বছরে কমে ৫.৬ শতাংশে দাঁড়াবে এবং স্বল্প মেয়াদে মুদ্রাস্ফীতি উর্ধ্বমুখী থাকবে।

তবে মধ্য মেয়াদে আমদানি মূল্য স্থিতিশীল হলে এটি ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে বলেও তারা জানাচ্ছে।

বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের তৈরি করা রিপোর্ট “বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট, নিউ ফ্রন্টিয়ার্স ইন পভার্টি রিডাকশন”-এ এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন উৎস থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোর ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব ব্যাংক, যেখানে তাদের কিছু মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজেট ঘাটতি সরকারের টার্গেট অনুযায়ী জিডিপির ৫.৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে এবং রাজস্ব আয় কিছুটা বাড়তে পারে।

২০২৪ অর্থবছরেও বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মুখে থাকবে এবং মধ্য মেয়াদে এটি ধীরে ধীরে উন্নত হবে। ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্ব ব্যাংক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেগুলো আসলে বৈঠক কেন্দ্রিক।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মরক্কোতে আগামী সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সাথে বাংলাদেশের পোর্টফলিও এবং সহায়তা কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে।

এমন অবস্থায় বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা বিভাগকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানানো এবং আগামী স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে নীতি নির্ধারণের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানানোই এই প্রতিবেদনের একটা উদ্দেশ্য।

আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের সরকার, সাধারণ জনগণ, থিংক-ট্যাংক এবং মিডিয়াকে বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানানো। বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পর্যায়ে আছে, কোন দিকে যাচ্ছে এবং কী করতে হবে সে বিষয়গুলো জনসমক্ষে তুলে ধরার প্রয়াস এটি।

তিনি বলেন, "এই প্রতিবেদন আসলে দেশে ব্যবহারযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে অর্থনীতির একটা চিত্র তুলে ধরে।"

যা আছে প্রতিবেদনে

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ বেড়ে চলেছে।

ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা লেনদেনের ভারসাম্য ঘাটতি বলতে বোঝায়, আমদানি পণ্যের দাম পরিশোধ, ঋণ পরিশোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ বেরিয়ে যায় এবং এর বিপরীতে রপ্তানি আয়, অনুদান, ঋণ ও রেমিটেন্স হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ দেশে প্রবেশ করে - তার পার্থক্য।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রানীতিতে কঠোরতা এই ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি বাড়াচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে কমিয়ে দিচ্ছে।

২০২২ অর্থবছরের মাঝামাঝি থেকেই রিজার্ভে পতন শুরু হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নীতি যেমন মুদ্রার একাধিক বিনিময় হার এবং ঋণের সুদ হার বেঁধে দেয়ার মতো পদক্ষেপ চাপকে আরো বেশি বাড়িয়েছে।

এর কারণে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৩ অর্থবছরে ৬ শতাংশে নামছে। গত অর্থবছরে এই হার ছিল ৭.১ শতাংশ।

জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মুদ্রাস্ফীতি আরো বেড়েছে।

মুদ্রাস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। তবে সুদের হার নির্ধারিত করে দেয়ার কারণে সেটি খুব একটা কাজ করেনি।

তারল্য সংকটের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে, বাণিজ্যে অর্থায়নের চাহিদা কমেছে এবং অনিশ্চয়তা বেড়েছে। ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের উচ্চ হারে ঋণ নেয়ার কারণে সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি এবং আমানত কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট প্রকট হয়েছে। সুদের হার কম থাকা এবং ভোক্তাদের আস্থাহীনতার কারণে আমানত কমেছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা আরো গভীর হয়েছে।

মধ্য মেয়াদে মুদ্রাস্ফীতিও ধীরে ধীরে কমে আসবে। তবে স্বল্প মেয়াদে জ্বালানির অতিরিক্ত দাম এবং অন্যান্য খাতে এর প্রভাব, টাকার একটানা অবমূল্যায়ন, আমদানির উপর চলমান কঠোরতা,ব্যাংকগুলোতে মার্কিন ডলারের ঘাটতিসহ নানা কারণে ২০২৪ অর্থবছরেও মুদ্রাস্ফীতি বাড়তিই থাকবে।

২০২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার সরকারি পদক্ষেপ এ খাতে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে। বিশেষ করে তারল্য সংকট এবং বেসরকারি খাতে ঋণের হার কমে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসবে।

মুদ্রার একক বিনিময় হার আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বিদেশি মুদ্রার প্রবাহকে বাড়াতে সহায়তা করবে এবং এটি ব্যালেন্স অব পেমেন্ট এবং রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

যে সব ঝুঁকি রয়েছে

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সামনে অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিষয়ে বলা হয়েছে, বাহ্যিক খাতের স্থিতিশীলতা ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা রোধ করার উপর।

মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিরতা কাটাতে হলে বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয়া যাবে না। এর ফলে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে মুদ্রার বিনিময় হারের মধ্যে পার্থক্য কমে আসবে এবং আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়বে।

এই পদক্ষেপ নিতে দেরি হলে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাহ কমবে এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমার সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা না হলে মুদ্রাস্ফীতি আশার তুলনায় বেশি সময় ধরে চলবে।

খেলাপি ঋণ বাড়লে আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরো বাড়বে এবং তা ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।

নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়লে তা বিনিয়োগের পরিবেশকে ব্যাহত করবে। ফলশ্রুতিতে রপ্তানি কমে যাবে এবং এটি সার্বিকভাবে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।

যা বলছে সরকার

বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রক্ষেপিত বাজেট ঘাটতির তুলনায় বিশ্ব ব্যাংক বাজেট ঘাটতি কমই উল্লেখ করেছে।

বাংলাদেশ সরকার পাঁচ বা সাড়ে পাঁচ শতাংশের মতো ঘাটতি রেখেই বাজেট নির্ধারণ করে বলে জানান তিনি।

“বিশেষ প্রেক্ষাপটে দেশের যে মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে, কাজেই বাজেট ঘাটতি ছয় শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও এটা খুব কাঙ্ক্ষিত বলে আমি মনে করি।”

জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার এর আগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবি সাড়ে ছয় শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংক একটু রক্ষণশীল হওয়ার কারণে তারা বরাবরই কিছুটা কম প্রক্ষেপণ করে।

সরকার মনে করছে যে, অর্থবছরের শেষ নাগাদ প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।

তিনি জানান, “আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ আছে, উৎপাদন ব্যবস্থা ভাল আছে, আমন ফসল যথেষ্ট ভাল হবে আশা করছি, আমাদের অনলাইনে উৎপাদন খাত যেগুলো, এমনকি শিল্পখাত, ম্যানুফ্যাকচারিং সবগুলোই কিন্তু ইতিবাচকভাবে রয়েছে। সেই অর্থে প্রবৃদ্ধির হার অবশ্যই সাত শতাংশ বা এর কাছাকাছি যাবে।”

ব্যাংক খাতের দুর্বলতার বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মি. আলম বলেন, সরকার এরইমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। বিনিময় হার যথেষ্ট পরিবর্তন করা হয়েছে। ডলারের দাম যেখানে ৮৫ টাকা করে ছিল সেটা এখন ১১০ টাকা করা হয়েছে।

ব্যাংক খাতের যে স্বাভাবিক ঋণ প্রবাহ তা যাতে ব্যাহত না হয়, সরকারি ঋণ যাতে ব্যাপক না হয় তা সরকার চাইছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে হবে।

“আশা করছি এই অক্টোবর মাস থেকে মূল্যস্ফীতি কমা শুরু করবে। মূল্যস্ফীতি কমানো গেলে এটা আমাদের জন্য একটা ভাল সাফল্য হবে আমরা মনে করি। এটা আমরা চাচ্ছি এই মুহূর্তে।”

লেনদেনের ভারসাম্যের ঘাটতি কমে আসছে বলে জানান তিনি। রপ্তানি যেহেতু কম করে হলেও বাড়ছে এবং রেমিটেন্স থেকেও আয় হচ্ছে তাই এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন তিনি। বিবিসি নিউজ বাংলা