News update
  • 22 leading figures in agriculture selected to be AIPs     |     
  • Seven killed in Israeli West Bank raid: Health ministry     |     
  • Israel approves plans for nearly 5,300 new homes in West Bank settlements     |     
  • UK election winner becomes PM only when King says so     |     
  • Bangladeshi youth killed in BSF firing at Thakurgaon border     |     

বাংলাদেশে রেল ট্রানজিট ও তিস্তা বিতর্ক নিয়ে ভারত যা ভাবছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2024-07-03, 3:03pm

sewtewtw-b7a381ec33b8db2e1ec3d6cfec813b951719997427.jpg




বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে ভারতকে ‘রেল ট্রানজিট ও করিডর’ দেওয়া এবং ‘তিস্তা পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পে ভারতের যুক্ত হওয়ার সমঝোতার ঘোষণা আসার পর দিনদশেক পেরিয়ে গেছে।

ইতোমধ্যে এই ইস্যুগুলোতে বাংলাদেশে তুমুল বিতর্ক দানা বেঁধেছে, বিরোধী দল বিএনপিও সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছে – তবে ভারত কিন্তু এখনও প্রবল আত্মবিশ্বাসী যে এই পদক্ষেপগুলো অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে এবং তা দুই দেশের মানুষের জন্যই উপকার বয়ে আনবে।

‘রেল ট্রানজিট’ প্রশ্নে ভারত সরাসরি জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে ‘বহুমাত্রিক’ সংযোগকে পরের ধাপে উন্নীত করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।

পাশাপাশি দিল্লির তরফে এই ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে – বাংলাদেশের ভূখণ্ড দিয়ে ভারতের রেলগাড়ি চললে কী হারে মাশুল, শুল্ক বা ট্রানজিট ফি আদায় করা হবে এবং ওই ট্রেনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, এই সব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসবে।

তিস্তার জল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ভারত বাংলাদেশে যে প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার অঙ্গীকার করেছে কিংবা গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে যে আলোচনা শুরু করার কথা জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস তাতে আপত্তি তুললেও সেগুলো থেকেও এতটুকু সরে আসার কোনও পরিকল্পনা ভারতের নেই বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এর মধ্যে কেন্দ্রকে চিঠি লিখে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাজ্যবাসীর ‘স্বার্থের সঙ্গে আপস করে’ বাংলাদেশের সঙ্গে জল নিয়ে কোনও চুক্তি তিনি মেনে নেবেন না। কিন্তু তার এই হুমকিকেও আমল দেওয়া হচ্ছে না, অন্তত এখনকার মতো তো বটেই!

তবে দিল্লিতে একাধিক পর্যবেক্ষক ও বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্কের গবেষকরা বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশে রেল ট্রানজিট বা তিস্তা প্রকল্পের মতো পদক্ষেপ বাস্তবায়িত করতে হলে ভারতকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও বড়সড় ‘ছাড়’ দিতে হবে বলে তাদের ধারণা।

সেগুলো কী হতে পারে, তা এখনই স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশকেও ভারতের ভেতর দিয়ে রেল ও সড়ক ট্রানজিট, তিস্তা প্রকল্পে ভারতের অর্থায়নের একটা বড় অংশ ঋণের বদলে অনুদানে (‘গ্রান্ট’) পরিবর্তন করা – এই সব সম্ভাব্য ছাড়ের কথা তারা উল্লেখ করছেন।

তবে ভারত সরকারের তরফে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বার্তা দেয়া হয়নি।

বাংলাদেশের ভেতরে বিরোধী দলীয় দলগুলোসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে যে এই সব উদ্যোগের বিরোধিতা করা হচ্ছে, সেটাকে দিল্লির সরকারি কর্মকর্তারা বা ভারতের কূটনৈতিক মহল বিশেষ একটা আমল দিচ্ছেন না।

তারা বলছেন, গত দশ-পনেরো বছরে বাংলাদেশে ভারতের বহু উদ্যোগই সে দেশে একটা অংশের মানুষের বাধার মুখে পড়েছে – কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু’দেশের সরকারের সদিচ্ছায় সেই সব প্রকল্পই সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে, দু’দেশের মানুষই তা থেকে লাভবান হচ্ছেন।

ফলে রেল ট্রানজিট ও তিস্তা পুনরুদ্ধার প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তার কোনও ব্যতিক্রম হবে না বলেই দিল্লির বিশ্বাস।

সাউথ ব্লকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য

গত ২২শে জুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর মধ্যেকার বৈঠকের পরই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা যে ব্রিফিং করেছিলেন, তাতেই তিনি এই দুটো প্রকল্পের রূপরেখার বর্ণনা দেন।

‘রেল ট্রানজিট’ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য ছিল, “এটা হলো ভারতেরই একটা অংশ থেকে আর একটা অংশে যাওয়া, যেখানে ট্রেন যাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে।”

এটা বাংলাদেশ ও ভারত, উভয় দেশেরই মানুষ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি দাবি করেন।

জুলাইতেই গেদে-দর্শনা সীমান্ত থেকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত রুটে এই রেলপথে মালবাহী ট্রেন পরীক্ষামূলক চলাচল করবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন।

আর তিস্তা প্রকল্প প্রসঙ্গে মি কোয়াত্রা জানান, ওই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হল তিস্তার জলের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ (ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনজার্ভেশন), কিন্তু তিস্তার জল ভাগাভাগি নিয়ে প্রস্তাবিত চুক্তির সঙ্গে ওই পদক্ষেপের কোনও সম্পর্ক নেই।

এর দিনকয়েক পরে (২৮শে জুন) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়েও মুখপাত্রকে এই দুটো ইস্যুতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।

রেল ট্রানজিট প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়, এই পথে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশকে কী হারে শুল্ক দিতে হবে সেটা কিছু স্থির হয়েছে কি না? আর বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় ভারতের ট্রেনে নিরাপত্তার ব্যবস্থাই বা কীভাবে হবে?

জবাবে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই প্রকল্পের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে বলেন, “আমাদের দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটিকে আমরা ফিজিক্যাল, ডিজিটাল ও আরও নানা পদ্ধতিতে ক্রমশ শক্তিশালী করে তুলছি – এই রেল সংযোগ হল তারই একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও মানুষে-মানুষে সম্পর্ককে উন্নীত করবে।”

ট্রানজিট ফি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি বলেন, “এগুলো হলো প্রকল্পটার টেকনিক্যাল দিক। যখন আমাদের দুই দেশের সরকার এই প্রকল্পের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করবে, তখন সেই কমিটির বৈঠকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।”

তার কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, ট্রানজিট ফি বা মাশুলের হার, কিংবা ট্রেনে কোন দেশের নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হবে – এসব বিষয় নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় টেকনিক্যাল (কারিগরি) টিম পাঠানোর ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আপত্তি তুলেছেন, এই বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থান কী?

তিস্তা নিয়ে সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়ে মুখপাত্র এখানে গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে মমতা ব্যানার্জির আপত্তির প্রসঙ্গটিতে চলে আসেন।

রণধীর জয়সওয়াল দাবি করেন, গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রবেশ করার আগে ভারত আগে নিজেদের দেশের ভেতরে একটি ‘ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) কমিটি’ গঠন করেছে এবং সেখানে অন্য সব স্টেকহোল্ডারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও প্রতিনিধিও ছিলেন।

শুধু তাই নয়, তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গ কমিটির বৈঠকগুলোতে নিয়মিত যোগ দিয়েছে, এপ্রিল মাসেও রাজ্য সরকার তাদের লিখিত মতামত দিয়েছে এবং তার পরই কমিটি তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে।

অর্থাৎ, মুখপাত্রের বক্তব্য ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে পরামর্শ না-করে গঙ্গা চুক্তি নিয়ে এগোনো হচ্ছে, মমতা ব্যানার্জীর এই অভিযোগ ঠিক নয়।

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল ট্রানজিট বা তিস্তা প্রকল্পে সক্রিয় অংশগ্রহণ – কোনওটা থেকেই যে ভারত পেছোনোর কথা ভাবছে না, রণধীর জয়সওয়ালের কথায় তা ছিল স্পষ্ট।

‘বাংলাদেশেরও লাভ, এটা তারা ঠিকই বুঝবেন’

ভারতের সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদদের মধ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ঢাকাতে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন দীর্ঘদিন, পরে অবসর নেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে যে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল, অবসরের পর মি শ্রিংলাকে তার প্রধান কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব দিয়েছিল মোদী সরকার। বাংলাদেশ জোটের সদস্য না হলেও সেই সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত ছিলেন শেখ হাসিনাও।

ভারতের বর্তমান সরকারের বাংলাদেশ নীতি বা ‘আউটরিচ’টা যারা তৈরি করেছেন, হর্ষবর্ধন শ্রিংলা তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য।

তার কথায়, “এই ট্রানজিট শব্দটা তো এক সময় বাংলাদেশে প্রায় ‘ট্যাবু’ বা নিষিদ্ধ বলে ধরা হতো। এখন আমরা বলি কানেক্টিভিটি, সংযোগ ইত্যাদি – তবে বাংলাদেশ কিন্তু মেনে নিয়েছে এটা দুই দেশের স্বাভাবিক সম্পর্কের অংশ।”

“কোভিড লকডাউনের মধ্যেও যে ভারত সরাসরি ওয়াগনে চাপিয়ে মহারাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ পাঠিয়েছিল, সেটাও সম্ভব হয়েছিল সীমান্তে রেল কানেক্টিভিটি ছিল বলেই”, জানাচ্ছেন মি শ্রিংলা।

বাংলাদেশের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম – এই তিনদিকেই যেহেতু ভারতীয় ভূখণ্ড, আর তার মাঝে থাকা দেশটি নিজেদের এই ‘স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনে’র ফায়দা নিয়ে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক বা কৌশলগত সুবিধাও আদায় করতে পারে বলে মনে করেন এই পোড়খাওয়া কূটনীতিবিদ।

তবে বিরোধী দল বিএনপি এই সব পদক্ষেপকে যে ভারতের সঙ্গে ‘গোলামির চুক্তি’ বলে বর্ণনা করেছে কিংবা বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমেও অনেকে এর তীব্র সমালোচনা করছেন – সেগুলোকে মি শ্রিংলা বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নন।

“সে দেশের রাজনীতিতে অনেকের অনেক রকম কায়েমি স্বার্থ থাকতে পারে, কেউ কেউ আবার নানান ইস্যু খুঁচিয়ে তুলে হয়তো ‘ব্রাউনি পয়েন্ট’ও স্কোর করতে চাইবেন।”

“কিন্তু তাতে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে কখনও কোনও বিরূপ প্রভাব পড়েনি।”

“রামপাল প্রকল্পটাই দেখুন, যখন চুক্তি হয়েছিল তখন বাংলাদেশে অনেকেই এর সমালোচনা করেছিলেন। আর এখন সেটা এশিয়ার সবচেয়ে আধুনিক, দূষণমুক্ত তাপবিদ্যুৎে কেন্দ্রগুলোর একটা, যা বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বিরাট অবদান রাখছে”, দাবি করে মি. শ্রিংলা।

তিস্তার ক্ষেত্রেও বর্ষার সময় ওই নদীতে বয়ে আসা বিপুল পরিমাণ জলের যে অপচয় হয়, তার যথাযথ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভারতের কারিগরি দল শুষ্ক মরশুমে সেচের প্রয়োজন মেটাতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

“ভারতের সেই কারিগরি দক্ষতা ও সামর্থ্য আছে, বাংলাদেশ অবশ্যই যার সুফল পেতে পারে”, বিবিসি বাংলাকে বলেন মি শ্রিংলা।

বিনিময়ে নেপাল-ভুটানে ট্রানজিট?

দিল্লির প্রথম সারির গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরআইএসে যে সেন্টার ফর মেরিটাইম ইকোনমি ও কানেক্টিভিটি (সিএমইসি) রয়েছে, সেখানে অধ্যাপনা করেন অর্থনীতিবিদ ড: প্রবীর দে।

আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি, বাণিজ্য-পরিবহন ও বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে তিনি গবেষণা ও কাজকর্ম করছেন বহু বছর ধরে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পুরনো রেল সংযোগগুলো একে একে চালু করা সম্ভব হলেও ভারতকে ‘রেল ট্রানজিট’ দেওয়ার বিষয়টি যে অনেক বেশি স্পর্শকাতর এবং বাংলাদেশে এর একটা ভিন্নতর মাত্রা আছে, এ কথা কিন্তু তিনি স্বীকার করেন।

প্রবীর দে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “আমার ধারণা বাংলাদেশের কাছ থেকে এই সুবিধা পেতে হলে ভারতকেও খুব বড় আকারের কোনও পাল্টা ছাড় (‘কনসেশন’) দিতে হবে। নইলে বাংলাদেশে এই প্রশ্নটা উঠতে বাধ্য যে আমরা বিনিময়ে কী পেলাম?”

“এখন একটা সময় ছিল, যখন সার্কের স্বর্ণযুগে ঢাকা থেকে লাহোর রুটে ভারতের মধ্যে দিয়ে ট্রানজিট সম্ভব কি না, সেগুলো নিয়েও কথাবার্তা হত। কিন্তু আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এতটাই বদলে গেছে যে সে সব জিনিস আমরা প্রায় ভুলতেই বসেছি।”

“এখনকার বাস্তবতায় নেপাল বা ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশকে সরাসরি বাণিজ্য করতে দিতে যদি ভারতের মধ্যে দিয়ে রেল বা রোড ট্রানজিট দেওয়া হয়, সেটা একটা গ্রহণযোগ্য অপশন হতে পারে বলে আমার ধারণা”, বলছিলেন প্রবীর দে।

বাংলাদেশকে এই ‘রেল ট্রানজিট’ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনকার ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যাল চুক্তি’র মতো বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালের রেল নেটওয়ার্ককেও সংযুক্ত করতে একটি সমঝোতার কথা ভাবা যেতে পারে বলে তার অভিমত।

কোন কোন রেলপথে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে, সেগুলোকেও চিহ্নিত করেছেন তিনি।

ভুটানে এই মুহূর্তে কোনও ট্রেন না চললেও সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের গেলেফু থেকে আসামের কোকরাঝাড় পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কাজ চলছে।

এই রেলপথকে অনায়াসেই চিলাহাটি-হলদিবাড়ি হয়ে অথবা অধুনা পরিত্যক্ত মোগলহাট-গীতালদহ রুটে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব।

নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল বাণিজ্য বা ট্রেন যাতায়াতের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে হিলি-চাঁচল বা বিরল-রাধিকাপুর সীমান্তের রেল সংযোগকে।

এই রুট দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য বা যাত্রীরা নেপাল সীমান্তের রকসৌল পর্যন্ত যেতে পারবেন, যে রেলপথটি কাঠমান্ডু পর্যন্ত সম্প্রসারিত করারও ভাবনাচিন্তা চলছে।

সড়কপথে বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক ‘ট্রানজিট’ দেওয়ার বিষয়টি অবশ্য তুলনামূলকভাবে সহজ। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ট্রাককে ভারতের মধ্যে দিয়ে সরাসরি নেপাল বা ভুটানে গিয়ে মাল খালাস করার অনুমতি দিতে হবে।

বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে ভারতের যোগদানকে ‘মসৃণ’ করার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট একটি পরামর্শ রয়েছে প্রবীর দে-র।

তিনি বলছেন, “তিস্তা নিয়ে যে কোনও আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও যদি কোনওভাবে যুক্ত করা যায় এবং দিল্লি-ঢাকার এই আলোচনাকে কিছুটা ‘ত্রিপাক্ষিক’ চেহারা দেওয়া যায়, তাহলে সেটা ফলপ্রসূ হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।”

আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সম্মতি ছাড়া বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী তিস্তার জল ছাড়া যে অসম্ভব, এটা গত ১৬ বছরে প্রমাণিত।

ফলে তাকে আলোচনার টেবিলে নিয়েই তিস্তা সংকটের সমাধান খোঁজা দরকার বলে মনে করছেন ভারতের অনেক বিশেষজ্ঞই।

‘তিস্তায় সহায়তার বড় অংশ অনুদান হতে হবে’

ভারতের প্রথম সারির স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক মনোহর পারিক্কর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের সিনিয়র ফেলো স্ম্রুতি পট্টনায়ক আবার এই ‘সমস্যা’টিকে দেখতে চান একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণে।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “প্রথম কথা হল, বিরোধী দল বিএনপি যে এই পদক্ষেপগুলোর বিরোধিতা করছে, সেটাই প্রত্যাশিত ছিল।”

“তারা যদি কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিত, তাহলেই বরং আমি অবাক হতাম।”

মাসকয়েক আগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না-করে তারা যেভাবে শেখ হাসিনার হাতে আবার ‘নিরঙ্কুশ ক্ষমতার রাশ’ তুলে দিয়েছে, সেই ভুল শোধরানোর মরিয়া চেষ্টাতেই বিএনপি এই ভারত-বিরোধিতার তাস খেলতে চাইছে বলে ড: পট্টনায়কের বিশ্বাস।

“কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার যে তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করবেন এবং প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অবশ্যই এগোবেন, এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই”, জানাচ্ছেন তিনি।

তবে তার পরেও এই প্রকল্পগুলো যাতে সহজে ও মসৃণভাবে রূপায়িত হতে পারে, তার জন্য ভারতের দিক থেকেও বাড়তি কিছু পদক্ষেপ বা অতিরিক্ত উদ্যোগ নিতে হতে পারে বলে ড: পট্টনায়কের ধারণা। ইংরেজিতে এটাকেই বলে ‘ওয়াকিং দ্য এক্সট্রা মাইল!’

স্ম্রুতি পট্টনায়ক বলছিলেন, “যেমন মনে রাখতে তিস্তা প্রকল্প বা তিস্তা মহাপরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাবটা এসেছিল চীনের কাছ থেকে। ঢাকায় তাদের রাষ্ট্রদূত সে দেশে নির্বাচনের আগে তিস্তা ব্যারাজে সরেজমিনে সফর পর্যন্ত করেছিলেন, প্রকাশ্যে আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন।”

“এখন সহজবোধ্য কারণেই ভারত চায় না সীমান্তের এত কাছে স্পর্শকাতর এলাকায় একটি প্রকল্পে চীন যুক্ত থাকুক। এই যে ভারত নিজে থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে, এর পেছনে চীন ফ্যাক্টরের একটা বড় ভূমিকা আছে।”

“এখন চীনকে কিস্তিমাত করে ভারত যদি এই প্রকল্প নিজেরাই করতে চায়, তাহলে ঢাকার কাছে দিল্লির অফারটাও কিন্তু বেইজিংয়ের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হতে হবে”, মন্তব্য করছেন তিনি।

এখন কীভাবে দিল্লি তুলনায় ‘বেশি আকর্ষণীয়’ প্রস্তাব পেশ করবে, তারও সম্ভাব্য নানা রাস্তা আছে।

“যেমন ধরুন চীন হয়তো ‘সফট লোন’ বা সহজ শর্তের ঋণে এই প্রকল্পে অর্থ লগ্নি করতে চাইবে। তবে অতীতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই দেখা গেছে, চীনের এই তথাকথিত সহজ ঋণ নেওয়ার পরিণাম বহু দেশের জন্যই সুখের হয়নি।”

“সেই জায়গায় ভারত যদি প্রকল্পে তাদের অর্থায়নের একটা বড় অংশ – ধরা যাক ১০ থেকে ২০ শতাংশ – গ্রান্ট বা অনুদানে কনভার্ট করে দিতে পারে, সেটা অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা বাংলাদেশের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।”

“কারণ তাদের সেই পরিমাণটা কখনওই পরিশোধ করতে হবে না”, বিবিসিকে বলছিলেন স্ম্রুতি পট্টনায়ক।

ফলে ভারতে বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশই বিশ্বাস করেন, ভারতকে রেল ট্রানজিট পেতে হলে কিংবা চুক্তি-না-করেও তিস্তা প্রকল্পে অংশীদার হতে হলে বড়সড় বেশ কিছু ছাড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

আর দিল্লিতে সরকারি কর্মকর্তা ও নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, ঢাকার ক্ষমতায় থাকা বন্ধুপ্রতিম শেখ হাসিনা সরকার অবশ্যই তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবেন এবং সমঝোতা স্মারকগুলো বাস্তবায়ন করে দেখাবেন। বিবিসি বাংলা