News update
  • No Media Faced Arson Attacks in 53 Years: Mahfuz Anam     |     
  • Janaza of six Bangladeshi peacekeepers held at Dhaka Cantonment     |     
  • Bangladesh stock market loses Tk 10,500cr in a week     |     
  • Dhaka’s air turns ‘very unhealthy’ on Sunday morning     |     
  • Project to transform N’ganj into a climate-resilient green city     |     

ব্যাংক কীভাবে বড় ব্যবসায়ীদের সুদ মওকুফ করে দেয়

অর্থনীতি 2024-07-04, 6:55pm

fgeryerye-a66c2a8582e6654ed91737cb38b9abaa1720097728.jpg




বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে গত কয়েক বছরে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি ব্যাংক চারটি ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের খবরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের ব্যাংক খাত।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে কয়েকজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছেন যে নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করেই এসব প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে ওই দুটি ব্যাংক।

তারা এটিকে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলার পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সাবেক ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই ব্যাংকগুলো কিছু প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করলেও শেষ পর্যন্ত এর চাপ পড়বে ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহক কিংবা আমানতকারীদের ওপরেই।

তবে যে দুটি ব্যাংক প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে তারা এ নিয়ে নতুন করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এর মধ্যে একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে আর একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের সব পাওনা শোধ করেছে।

সুদ মওকুফ নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

জানা গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক তিনটি ব্যবসায়ী গ্রুপকে ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে।

আর বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক শুধু এস আলম গ্রুপেরই ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে এবং এটি করা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী দশ বছরে।

এ দুটি ব্যাংকই একসময় ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। বরং বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি সাম্প্রতিককালে নানা অনিয়মের কারণে আলোচনায় এসেছে এবং ব্যাংকটি পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

দুটি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ত্রিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে কয়েকজন সংসদ সদস্য বলেছেন, যেসব কারণে ঋণের সুদ মওকুফ করা যায় তার কোনোটিই এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

গত দশই জুন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফের চারটি উপকরণ রয়েছে এবং এর মধ্যে একটিও নেই এমন প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করে দেয়া হয়েছে।

এরপর গত মঙ্গলবার বিষয়টি আবার আলোচনায় আনেন জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ দেবনাথ এবং হামিদুল হক খন্দকার।

মি. আহম্মেদ সুদ মওকুফের সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছে না। ১০/১২টি ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রম এবং তাদের আর্থিক অবস্থা নাজুক।

পংকজ দেবনাথ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, দুর্বিপাকের কারণে সুদ মওকুফ হয়। কিন্তু এখানে তার কিছুই হয়নি। দুর্যোগও হয়নি। বরং ল্যাংড়া–খোঁড়া অজুহাত দিয়ে সুদ মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

কীভাবে সুদ মওকুফ হয়ে যায়

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ঋণগ্রহীতার মৃত্যু কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কিছু কারণে ঋণের সুদ মওকুফ করা যেতে পারে। ২০২২ সালে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে বলা হয়েছিলো ব্যাংকগুলো বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে ঋণের সুদ মওকুফ করতে পারে যেমন, ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, নদীভাঙন, দুর্দশাজনিত কারণ বা বন্ধ প্রকল্পের ব্যাংক ঋণের সুদের সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ মওকুফ করে দিতে পারে।

সার্কুলারটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে আরও বলেছিলো, "তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এসব বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন গ্রাহকের সুদ প্রায়ই মওকুফ করে দিচ্ছে। এতে সুদ মওকুফ সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্রাহকদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে, যা ব্যাংক খাতে সার্বিক ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী।"

তবে দেখা যাচ্ছে যে যেসব ব্যবসায়িক গ্রুপের সুদ মওকুফ করা হয়েছে তাদের সাথে সার্কুলারে থাকা কারণ বা শর্তের কোনো মিল নেই।

আবার ঋণ মওকুফের ক্ষেত্রে উভয় ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্যাংক দুটির দুজন কর্মকর্তা। তারা তাদের নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ করেছেন।

সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, যেসব ব্যাংক সুদ মওকুফ করেছে তারা সেটি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের মধ্যে থেকেই।

“একটি ব্যাংক সেই পরিমাণ সুদ মওকুফ করতে পারেন যা ওই ব্যাংকের মোট কস্ট অফ ফান্ডের চেয়ে কম। এটাই এখনকার নীতিমালা। কাজেই সবই চলছে নীতিমালার মধ্যে। একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর ব্যতিক্রম করতে পারে আইন অনুযায়ী। জনস্বার্থে তারা নীতিমালার পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতে পারে,” বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলেশন অনুযায়ীই হয় সবকিছু এবং তারা ঋণের নীতিমালা, ঋণ রিশিডিউলের নীতিমালা এবং সুদ মওকুফের নীতিমালা ঠিক করেন।

গ্রাহকদের ওপর এর প্রভাব কেমন

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা শেখ বলেন, বড় লোন ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক সময় ব্যাংক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়।

“তবে তাতে কতটা লাভ হয় তা জানা যায় না। বরং যারা খেলাপি হয় তাদের নতুন করে সুযোগ দেয়ার তো কিছু নেই,” যোগ করেন তিনি।

নুরুল আমিন বলছেন, এতে গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হয়। তারা নিজেদের বঞ্চিত অনুভব করেন। এভাবে সুদ মওকুফ করে দেয়ায় নৈতিকতার খেলাপ হয় এবং এটি সুশাসনের পরিপন্থী।

“আবার অনেক সময় এতে করে ব্যাংকের সার্বিক লাভ বা মুনাফা কম হয়। তাতে শেয়ার হোল্ডাররা বঞ্চিত হন। এমনকি ব্যাংক থেকে নানা প্রয়োজনে যারা অল্প ঋণ নেন তাদের সুদের হার বেড়েও যেতে পারে বড় মাপের সুদ মওকুফের কারণে,” বলছিলেন মি. আমিন।

সাধারণত ব্যাংকগুলো চিন্তা করে যে অর্থ ঋণ দেয়া হয়েছে সেটি কিছু ছাড় দিয়ে হলেও আদায় করা ভালো। পরে টাকা অন্য খাতে বিনিয়োগ করে লাভ আসবে। এ কারণেই মাঝে মধ্যে সুদ মওকুফের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তারা।

“খেলাপিকে কোনো ছাড় না দিয়ে কিছু না পাওয়ার চেয়ে অল্প কিছু ছাড় দিয়ে কিছু পাওয়াটা অনেক সময় ব্যাংকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়,” বলছিলেন মি. আমিন।

ড. হাসিনা শেখ বলছেন এগুলো ডিপোজিটরদের হতাশ করে এবং ব্যাংক নিয়ে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি করে গ্রাহকের মধ্যে।

“বড়দের বিশেষ সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে এগুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত ব্যাংকগুলোর,” বলছিলেন তিনি। বিবিসি বাংলা