News update
  • Palestinian death toll in Gaza rises to 38,153: health authorities     |     
  • Power failure halts Metro Rail operations for over half an hour     |     
  • Floods and landslides kill 14 in Nepal: police     |     
  • Eight killed in gun battles in Indian Kashmir: police     |     
  • BNP forms convening committees for its Dhaka South, North, Ctg, Barisal city units     |     

এ বছর বাংলাদেশের বাজারে আমের দাম এত বেশি কেন?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খাদ্য 2024-07-04, 6:58pm

ewirewr8wu-841a0c249500d8a8e0475ff1455c9b311720097998.jpg




বাংলাদেশে চলতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ঢাকা-সহ সারা দেশের বাজারে নানা জাতের আম উঠলেও আমের দাম নিয়ে বেশ অসন্তোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ক্রেতাদের মাঝে।

অনেকেই বলছেন, এ বছর আমের দাম এত বেশি যে আম কিনতে হিমশিম খাওয়ার জোগাড় তাদের।

ঢাকার বিভিন্ন সুপারশপ থেকে শুরু করে বনশ্রী, ইস্কাটন, আফতাবনগর-সহ আরও অনেক এলাকার একাধিক খুচরা দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, এক কেজি আম কিনতে হলে একজন ক্রেতাকে অন্তত ১০০ থেকে ১২০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আমের জাত ও আকারভেদে এই দাম অনেক সময় আরও বেশি পড়ছে।

গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আমের মৌসুমে অনেকে অনলাইনেও আম বিক্রি করছেন। তেমনই একজন হলেন সাতক্ষীরার নুরুজ্জামান রিকো, যিনি গত সাত-আট বছর ধরে অনলাইনে আম বিক্রি করছেন।

মি. রিকোর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবছর তিনি গত বছরের চেয়ে অন্তত ৫০ টাকার বেশি দরে হিমসাগর আম বিক্রি করছেন।

“গত বছর ওই আমের কেজি ছিল ৮৫ টাকা, এবছর তা ১৩৫ টাকা,” জানান তিনি।

কিন্তু কেন গত বছরের তুলনায় এবার দাম এত বেশি? এর ব্যাখ্যা হিসাবে কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বাংলাদেশের সকল স্তরের আম ব্যবসায়ী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, এ বছর আমের উচ্চমূল্যের প্রধান কারণ হল আমের ‘খারাপ ফলন’। তবে আমের ফলন কম বা খারাপ হওয়ার পেছনেও আবার সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে।

চলতি বছর কেন আমের ফলন কম হলো?

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দুই লক্ষ হেক্টরের চেয়ে কিছুটা বেশি জমিতে শুধুমাত্র বাণিজ্যিকভাবেই মোট সাড়ে ২৭ লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল।

কিন্তু “এবার আমের ফলন কম হবে। তবে কত কম হবে, সেটা আরও পরে বোঝা যাবে” বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস।

তিনি জানান, এ বছর সারা দেশে সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ২৭ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে।

“গত বছর শুধু কমার্শিয়াল বাগানেই ওই আম হয়েছে। সামাজিক ও পারিবারিক বাগানেও অনেক আম হয়েছিল। এবার কমার্শিয়াল, সামাজিক, পারিবারিক, সব মিলিয়েই এই পরিমাণ আম হতে পারে।”

কৃষক থেকে শুরু করে কৃষি অধিদপ্তর, সবার বক্তব্য অনুযায়ী এবছর আমের ফলন কম হওয়ার পেছনে মূল কারণ এটি ‘অফ ইয়ার’।

মূলত, যে বছর আমের উৎপাদন ভালো হয় তার ঠিক পরের বছর আমের উৎপাদন তুলনামূলক খারাপ হয়। ভালো হলে সেটিকে ‘অন ইয়ার’ বলে।

মি. বিশ্বাস এ বিষয়ে বলেন, “এবছর অফ ইয়ার। আগেও আমরা দেখেছি যে বছর বেশি ফলন হয়, পরের বছর কম হয়। সেজন্য সামাজিক ও পারিবারিক বাগানগুলোতেও এসময় ম্যানেজমেন্ট কম করে।”

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার আম-চাষী আনিসুর রহমানও বলেন, “একটা গাছে পরপর দুইবার ভালো ফলন হয় না। গত বছর ফলন ভালো ছিল, এবছর খারাপ হয়েছে। পরের বছর আবার ভালো হবেই।”

মি. রহমানের মোট সাতটি আমবাগান রয়েছে। সে সব বাগানে এবছর আড়াই থেকে তিন হাজার ক্যারেট হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ ও আম্রপালি আম উৎপাদিত হয়েছে।

কিন্তু গতবছর তার বাগান থেকে মোট উৎপাদন ছিল চার হাজার ক্যারেট।

এছাড়া, আমের কম উৎপাদনের আরও দুই কারণ হল উচ্চ তাপমাত্রা ও কম বৃষ্টিপাত।

“অতিরিক্ত তাপমাত্রায় যদিও কমার্শিয়াল বাগানে সেচ দেওয়া হয়, বাগানে পানি দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও প্রাকৃতিক যে আবহাওয়া, তা কৃত্রিম কিছু দিয়ে পূরণ করা যায় না,” বলছিলেন মি. বিশ্বাস।

এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত রোদের কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়েছে, আম ফেটে গেছে।

তবে মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় 'রিমালে'র কারণেও আমের ফলনে অনেকটা ক্ষতি হয়েছে। উপকূলে আঘাত হানার পর থেকে প্রায় ৫০ ঘণ্টা পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করেছিল সাম্প্রতিক সময়ের দীর্ঘস্থায়ী ঝড় রিমাল।

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে অনেক আম পরিপক্ক হওয়ার আগেই ঝরে পড়েছিল।

শুধু তাই নয়, 'হপার পোকা’র আক্রমণের কারণেও এবার অধিকাংশ কোম্পানির ফলন খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর বানেশ্বরের আড়তদার মো. সাইফুল ইসলাম।

আমের উচ্চমূল্যের পেছনে যে সব কারণ দায়ী

যেহেতু আমের ফলনই কম হয়েছে, সেই কারণে এবার আমের দাম বাড়তির দিকেই থাকবে।

কারণ যখন বাজারে কোনও পণ্যের চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে বেশি থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ওই পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

“উৎপাদন কম হওয়ায় এবার কৃষক পর্যায় থেকেই বেশি দাম দিয়ে আম কিনতে হয়েছে। হিমসাগরের কেজি-প্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা করে দাম পড়েছে,” বলেন সাতক্ষীরার নুরুজ্জামান রিকো।

যারা আড়তদার, তারাও বলছেন যে কৃষকদের কাছ থেকে তারা বেশি দামে আম কিনেছেন।

আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহীর একাধিক আড়তদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবছর গোপালভোগ কিনতে তাদের মণপ্রতি খরচ হয়েছিলো ৩২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা। যদিও গোপালভোগ এখন বাজারে নেই। কারণ মৌসুমের শুরুর দিকের আম হল এই গোপালভোগ।

এমনিতে বর্তমানে মণপ্রতি হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দরে। ল্যাংড়ার ক্ষেত্রে দাম পড়ছে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

আম্রপালির দাম পড়ছে মণপ্রতি সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি। দুই হাজারের মাঝে যেসব আম পাওয়া যায়, তা হল ফজলি, লখনৌ কিংবা গুটি আম।

এখন, গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত আম এসে পৌঁছানোর জন্য আড়তদারদের পর কয়েক দফায় হাতবদল হয় এবং আমের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকে।

সে ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত কত দামে আম বিক্রি হচ্ছে, তা তখনই নির্ধারিত হয় যখন আম পাইকারি বিক্রেতাদের হাতে এসে পৌঁছায়।

খুচরা পর্যায়ে যেভাবে আমের দাম বাড়ে

রাজশাহীর বনগ্রামের আড়তদার মো. আয়েস উদ্দিন আকাশ দাবি করেন, আড়তদাররা তাদের কেনা দামেই পাইকারদের কাছে আম বিক্রি করে, শুধু সামান্য 'কমিশন' পান তারা।

“এখানে আমাদের ভূমিকা হল, কৃষকদের থেকে কিনে এনে পার্টির কাছে আমটা বিক্রি করে দেওয়া। যে দামে কিনি, ওই দামেই বিক্রি করি।”

“ক্যারেটপ্রতি ২৫ টাকা কমিশন পাই আমরা। আমাদের লাভ এটাই,” তিনি বলেন।

পাইকারি বিক্রেতা ও আড়তদারদের মাঝে এক ধরনের যোগাযোগ থাকে।

“সাধারণত পার্টি আমাদেরকে ফোন করে, অর্ডার দেয়। তখন আমরা ট্রাকে করে সেই আম পৌঁছায়ে দেই,” জানান মি. আকাশ।

আমের দাম মূলত এ সময়েই বেড়ে যায়। কারণ পরিবহন খরচ পাইকারদেরকে বহন করতে হয়।

মি. আকাশ জানান, তাদের একটি বড় ট্রাকে ৫৩০ ক্যারেট আম বহন করা যায়। সেক্ষেত্রে গত বছর ওই ট্রাকের ভাড়া ছিল ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু এবছর তাদেরকে ৩৬ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকার বিক্রমপুরের পাইকারি আম ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের সাথে।

তিনি বলেন, “এবছর আমি আম্রপালি কিনছি চার হাজার টাকা (মণ) করে। কেজিতে পড়ে ১০০ টাকা। আড়তদারদের কমিশন, সুতার খরচ, গাড়ি ভাড়া, লেবার-সহ কেজিতে ১০ টাকা ভাড়া পড়ে।”

তিনি জানান, গতবছর আম্রপালির মণপ্রতি দাম ছিল আড়াই হাজার টাকা এবং এক কেজি আম্রপালিতে খরচ পড়ত আট টাকা। তেল থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বাড়তি এখন।

এরপরের ধাপে গিয়ে পাইকারদের থেকে খুচরা বিক্রেতারা আম কিনেন।

“সেক্ষেত্রে খরচ বাদে কেজিপ্রতি ৯৫ টাকা করে যদি খুচরারা আমার থেকে আম নেয়, তাহলে তারা গিয়ে সেই আম খুচরা বাজারে মান ও আকার অনুযায়ী ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করে,” বলেন আলমগীর হোসেন।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস খুচরা পর্যায়ের এই দাম বিষয়ে বলেন, “এখন আর কম দামে এই জিনিসগুলো পাওয়া যাবে না। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা (বেড়েছে), সেটা শ্রমিক শ্রেণি থেকে শুরু করে উৎপাদক পর্যন্ত। মানুষের কাছে পয়সার একটা আধিক্য আছে।”

“গ্রামে শাকসবজি পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রামের মানুষও বাজার থেকে এখন শাক কিনে খায়। এই অবস্থার কারণে আম না কেবল, সব ফসলের দামেই একটা প্রভাব পড়বে,” বলছিলেন তিনি। বিবিসি বাংলা