News update
  • Pro-Palestinian US campus protests grow as police crack down     |     
  • Mass-awareness needed to prevent heat-related illness     |     
  • New Delhi to closely watch China-BD joint military training     |     
  • US-China talks start: Caution about Misunderstandings, miscalculations     |     
  • Syria crisis intensifies in shadow of Gaza war     |     

‘হাতজোড় কইরা কমু, এই টাকা দিয়া দেশে ব্যবসা করেন’

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ইন্টারভিউ 2022-06-22, 7:46am

62210686_507-a5688e378a6ca7c2daa0b15e3d9e7c241655862410.jpg




সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ায় অবস্থিত পুরনারা শরণার্থী ক্যাম্পে বর্তমানে দুইশর অধিক বাংলাদেশি রয়েছেন৷ লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে, দালালদের কাছে প্রতারিত হয়ে এই দেশটিতে এসে এখন ঠাঁই মিলল শরণার্থী ক্যাম্পে৷

বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার ফিরোজ মৃধা এক মাস ধরে সাইপ্রাসের নিকোসিয়ায় অবস্থিত পুরনারা শরণার্থী ক্যাম্পে আছেন৷ বাংলাদেশ থেকে আরব আমিরাত হয়ে সাইপ্রাসে এসেছেন তিনি৷ তাকে এখানে নিয়ে এসেছেন দালালরা৷ আর এই পর্যন্ত আসতে তার খরচ হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা৷


তার দাবি, কয়েক লাখ টাকা খরচ করে যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি দেশ ছেড়েছেন, সাইপ্রাসে এসে দেখেন এর সবই মিথ্যা৷ তাকে বলা হয়েছিল, ওয়ার্কশপে কাজ দেওয়া হবে আর আয় হবে এক হাজার ইউরোর অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ টাকা৷ সেই সাথে প্রতি মাসে তিনশ ইউরো অর্থাৎ প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন তিনি৷ আর সব মিলিয়ে তার মাসিক আয় হবে এক লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো৷


কিন্তু এই টাকা আয় তো দূরের কথা, এখন তার ঠিক মতো মাথা গোঁজার ঠাঁই-ই মিলছে না৷ 


‘‘দালালেরা বলেছে, এক হাজার ইউরো বেতন দিব৷ তিনশ ইউরো ভাতা দিব৷ এই কথা বইলা আমারে আইনা নর্থ সাইপ্রাসে ফালাইয়া দিছে৷ পরে যখন বর্ডার ক্রস করছি, দেখি আমার কোনো ভিসাই নাই।"


লাইভ টিভি


বিষয়

সমাজ সংস্কৃতি

বিজ্ঞাপন


সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ায় অবস্থিত পুরনারা শরণার্থী ক্যাম্পে বর্তমানে দুইশর অধিক বাংলাদেশি রয়েছেন৷ লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে, দালালদের কাছে প্রতারিত হয়ে এই দেশটিতে এসে এখন ঠাঁই মিলল শরণার্থী ক্যাম্পে৷

বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার ফিরোজ মৃধা এক মাস ধরে সাইপ্রাসের নিকোসিয়ায় অবস্থিত পুরনারা শরণার্থী ক্যাম্পে আছেন৷ বাংলাদেশ থেকে আরব আমিরাত হয়ে সাইপ্রাসে এসেছেন তিনি৷ তাকে এখানে নিয়ে এসেছেন দালালরা৷ আর এই পর্যন্ত আসতে তার খরচ হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা৷

তার দাবি, কয়েক লাখ টাকা খরচ করে যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি দেশ ছেড়েছেন, সাইপ্রাসে এসে দেখেন এর সবই মিথ্যা৷ তাকে বলা হয়েছিল, ওয়ার্কশপে কাজ দেওয়া হবে আর আয় হবে এক হাজার ইউরোর অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ টাকা৷ সেই সাথে প্রতি মাসে তিনশ ইউরো অর্থাৎ প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন তিনি৷ আর সব মিলিয়ে তার মাসিক আয় হবে এক লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো৷

কিন্তু এই টাকা আয় তো দূরের কথা, এখন তার ঠিক মতো মাথা গোঁজার ঠাঁই-ই মিলছে না৷ 

‘‘দালালেরা বলেছে, এক হাজার ইউরো বেতন দিব৷ তিনশ ইউরো ভাতা দিব৷ এই কথা বইলা আমারে আইনা নর্থ সাইপ্রাসে ফালাইয়া দিছে৷ পরে যখন বর্ডার ক্রস করছি, দেখি আমার কোনো ভিসাই নাই৷’’

দালালেরা যা বলেছেন তার সাথে এখানকার পরিস্থিতির কোনো মিল নেই এমন প্রশ্ন দালারদেরকে করেছেন কি না জানতে চাইলে মৃধা বলেন, ‘‘এরা যে খারাপ ব্যবহারগুলো করে, খারাপ ব্যবহার কইরা এরা কুল পায় না ওরারে জিগামু ক্যামনে, কোন সময় আবার, যে আমগুরে কেমনে আনলেন৷ আইনাই লাথ্থি মাইরা রুমে ঢুকায়, ট্যাকা দে৷ মাইর, গুতা শুরু কইরা দেয়৷ ট্যাকা দে৷ ট্যাকা না দিলে এইখানেই আটকাইয়া রাখে৷ আর ট্যাকা দিলে রাতে বর্ডার ক্রস করাইয়া দেয়৷ ওদেরকে জিগামো ক্যামনে৷ এরা এমন একটা মুড লইয়া থাকে, হিংস্র বাঘের মতো৷’’

তিনি জানান, সাইপ্রাস আসতে গিয়ে পথের মধ্যে বেশ কয়েকজন দালালকে টাকা দিতে হয়েছে তার৷

নিজে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে বাংলাদেশ থেকে যেন আর কেউ এভাবে না আসেন সেই পরামর্শ দেন তিনি৷ 

‘‘হাতজোড় কইরা কমু, ৬-৭ লাখ টাকা দিয়া দ্যাশে অটোরিকশা চালান৷ আমগুর মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইসেন না৷ বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা ভালো, আমরা ভাল নাই৷’’

নিকোসিয়ার এই ক্যাম্পে যে বাংলাদেশিরা আছেন তাদের সবার গল্পই এরকম৷ নিকোসিয়া পর্যন্ত আসতে কারো খরচ হয়েছে ছয় লাখ কারো সাত লাখ৷ বাংলাদেশ থেকে ম্যধপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ হয়ে তাদেরকে প্রথমে নিয়ে আসা হয় তুরস্ক অধ্যুষিত উত্তর সাইপ্রাসে৷ সেখান থেকে রাজধানীর বর্ডার পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ সাইপ্রাসে৷

বলা হয়, সেখানে চাকরি আছে, ভালো বেতন আছে৷  এমনকি বর্ডার পাড়ি দেওয়ার সময় তাদের পাসপোর্টটিও রেখে দেয় দালালেরা৷ এরপর সহায়সম্বলহীন হয়ে শুধুমাত্র পাসপোর্টের একটি ফটোকপি নিয়ে তারা এসে হাজির হন নিকোসিয়ায় আর আশ্রয় চান এই ক্যাম্পেটিকে৷

আর আশ্রয় পেলেই যে সব হয়ে গেল তা কিন্তু নয়৷ এখানে আশ্রয় দেওয়ার পর চলতে থাকে তাদের আশ্রয়-আবেদন যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া৷ প্রক্রিয়া শেষে হয় এখানে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে কিংবা আশ্রয়-আবেদন বাতিল করে দেশে ফেরত পাঠানো হবে৷ বেশিরভাগ বাংলাদেশিদের বেলায়ই হয় দ্বিতীয়টি৷ অর্থাৎ আশ্রয়-আবেদন বাতিল৷ আর তখন ফিরতে হয় দেশে৷

গাজীপুর জেলার টঙ্গি থেকে তিন মাস আগে এসেছেন জীবন আলম৷ অন্য সবার মতো তার গল্পটিও একই রকম৷ মধ্যপ্রাচ্য হয়ে তিনি সাইপ্রাসে এসে আপাতত এই ক্যাম্পটিতে আছেন৷ এখন পর্যন্ত খরচ করেছেন সাত লাখ টাকা৷ মাসখানেক আগে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন তিনি৷

আবেদন গ্রহণ হবে কি না জানেন না৷ তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, বাংলাদেশিদের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়৷

তিনি জানান, আবেদন বাতিল করে দেওয়ার পর সাধারণত আইনজীবীর সহায়তায় এখানে থাকার মেয়াদ কয়েকমাস বাড়ানো যায়৷ এভাবে বেশির ভাগ আশ্রয়প্রার্থী আইনজীবীর সহায়তায় থাকার চেষ্টা করেন৷ নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, ‘‘এখন আর দেশেও ফিরতে পারতেছি না৷ আবেদন বাতিল হয়ে গেলে এখানেই কোনো একটা ব্যবস্থা করতে হবে৷’’ 

এদিকে ক্যাম্পেও তারা নানা ধরনের কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছেন৷ নিকোসিয়ার এই ক্যাম্পটিতে থাকার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আশ্রয়প্রার্থীরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন৷ সুযোগ-সুবিধার দাবিতে কিছুদিন আগে বিক্ষোভ করেছেন তারা৷

বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীরা জানান, এখানকার খাবারদাবার তারা খেতে পারেন না৷ নেই টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা৷ টয়লেটের দরজা নেই, তাই রাতের আঁধারে খোলা মাঠে প্রাকৃতিক কাজ সারেন তারা৷

প্রায় দেড় মাস আগে এই ক্যাম্পটিতে আসা বাংলেদেশি আশ্রয়প্রার্থীরা জানান, এখানকার খাবারদাবার তারা খেতে পারেন না৷ নেই টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা৷ টয়লেটের দরজা নেই, তাই রাতের আঁধারে খোলা মাঠে প্রাকৃতিক কাজ সারেন তারা৷

প্রায় দেড় মাস আগে এই ক্যাম্পটিতে আসা বাংলেদেশি আশ্রয়প্রার্থী এনামউদ্দীন জানান, অন্য সবার মতো তার পাসপোর্টও দালালেরা রেখে দিয়েছে৷

তার দাবি, এখানে ক্যাম্পে কোনো ভাতা দেওয়া হয় না৷ আর তাই নিজের খরচেই চলতে হয় তাকে৷ ‘‘এইখানে চলতে মাসে দুইশ ইউরো লাগি যায়, কি করমু কষ্ট কইরা চলতেছি৷’’

এই টাকা কোথা থেকে পান জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি দেশ থেকে টাকা আনান এবং কাজ না পাওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবেই চলতে হবে তাকে৷ তথ্য সূত্র ডয়চে ভেলে বাংলা।