News update
  • AC Tabassum Urmi sacked over anti- govt Facebook posts     |     
  • Bangladeshi killed in BSF firing at Chuadanga border      |     
  • Rains Fuel Disasters in 83pc of Brazilian Cities: Report     |     
  • Hamas ready and serious to reach an accord if it ends war     |     
  • Paradise lost: Cox’s Bazar tourists shocked by wastes at sea     |     

পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে খরস্রোতা নদীকে যেভাবে বাগে আনা হয়েছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 2022-06-22, 7:55am

img_20220622_075509-a2e2e8e4f35c24f4f06786da28f794391655862935.png




সারা বিশ্বে খরস্রোতা যতো নদী আছে তার একটি বাংলাদেশের পদ্মা নদী। এই নদীতে প্রবাহিত পানির পরিমাণ, নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা এবং তলদেশে মাটির ধরন - এসব কিছুর কারণে এর উপর সেতু নির্মাণ করা ছিল অসম্ভব রকমের কঠিন এক কাজ।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই অসম্ভব কাজটিই সম্ভব হতে চলেছে এবং প্রায় আট বছরের নির্মাণ কাজ শেষে এই সেতু উদ্বোধন করা হচ্ছে ২৫শে জুন।

এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ধাপে ধাপে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং সেসব সামাল দিতে পরিবর্তন করতে হয়েছে সেতুর নকশাও। প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পদ্মা নদীর তলদেশে মাটির গভীরে পাইল বসানো ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। পৃথিবীর আর কোনো নদীর ওপর সেতু বানাতে গিয়ে এতো গভীরে পাইল বসাতে হয়নি।

পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলীরা বলছেন, যমুনা সেতু ও গঙ্গা নদীর ওপর তৈরি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণে অর্জিত জ্ঞান এই সেতুর নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

নদীর তলদেশে মাটির ধরন

পদ্মা নদী একটি অ্যালুভিয়াল নদী অর্থাৎ পলল-শিলার মধ্য দিয়ে এই নদী একে বেঁকে সাপের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। এটি খামখেয়ালি নদীও বটে কারণ এর চরিত্র বিচিত্র রকমের। এর পাড়ও ভাঙে খুব বেশি।

প্রকৌশলীরা বলছেন, এরকম বিশাল ও প্রমত্ত একটি নদীর ওপর এতো বড়ো সেতু নির্মানের কাজ প্রকৌশলগত দিক থেকে ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ।

পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে বিশেষজ্ঞ দলের একজন সদস্য ড. আইনুন নিশাত, যিনি নদী ব্যবস্থাপনার কাজ তদারকি করেছেন, তিনি বলছেন পদ্মার তলদেশে এবং দু'পাশে নরম মাটি ও বালি। একারণে কাজটা ছিল বেশ কঠিন ও জটিল।

"নরম হওয়ার কারণে নদীর তল অনেক গভীরে চলে যেতে পারে অথবা দুই পাশ ভাঙতে পারে। শীতের সময় পদ্মা নদীতে গভীরতা থাকে ১০০ ফুটের কাছাকাছি। বর্ষার সময় এই গভীরতা দ্বিগুণ হয়ে যায়। একারণে চ্যালেঞ্জ ছিল নদীর ওই গভীরতায় সেতুর যেসব পাইল বসানো হবে সেগুলোর ফাউন্ডেশন তৈরি করা," বলেন তিনি।

বাংলাদেশের নদীতে পাথর নেই। ফলে সেতুর পুরো ভার রাখতে হয় মাটিতে।

একারণে নদীতে অনেক ভারী পাথর, কংক্রিটের ব্যাগ এবং জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। যেসব পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তার এক একটির ওজন ৮০০ কেজি থেকে এক টন।

"এসব পাথর একসাথে মিক্স করা হয়েছে যাতে ইন্টারলকিং হয়। সেগুলোকে নদীর তলদেশে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। নদীর তলদেশে যতটুকু যাওয়া সম্ভব, অর্থাৎ ড্রেজিং-এর ক্ষমতা যতোটুকু ছিল ততোটা গভীরে," বলেন ড. আইনুন নিশাত।

এজন্য পৃথিবীর বড় বড় তিনটি ড্রেজার আনা হয়েছিল।

নদীর তলায় ৮০০ কেজির জিওব্যাগে তুলনামূলকভাবে মোটা বালি ভরে বটম লেয়ার বা স্তর তৈরি করা হয়েছে।

আইনুন নিশাত জানান, যখন পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় তখন মাটির গুণাবলীর যেসব খবর নেয়া হয়েছিল তাতে দেখা গিয়েছিল যে তলায় হমোজেনিয়াস সয়েল বা সব একই ধরনের মাটি।

কিন্তু সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে দেখা গেল বেশ কিছু পাইলের নিচে কাদামাটির স্তর। তখন কাদামাটির ওই স্তর ভেদ করে আরো গভীরে পাইলের ফাউন্ডেশন নির্মাণ করতে হয়েছে। তিনি বলছেন, এই কাজটা বেশ কঠিন ছিল।

"মাটির নিচে ২২৫ থেকে ২৩০ মিটার পর্যন্ত যেতে হবে। ১০ ফুট ডায়ামিটারের স্টিলের টিউবকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাটিতে বসাতে হবে। এজন্য প্রথমে ১০০০ টন তার পর ১৫০০ টন, ২০০০ টন, ২২০০ টন এবং তার পরে ২৫০০ টন- এভাবে হাতুড়ির ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। দেখা গেছে ২৫০০ টন ওজনের হাতুড়ি দিয়ে যখন বাড়ি দেয়া হয়েছে ওই হাতুড়ি ফেটে গেছে," বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সেতুর ভার বহন করার জন্য এর যতোটা গভীরে পাইল বসানোর দরকার ছিল সেটা ছিল অসম্ভব এক চ্যালেঞ্জ। এতো গভীরে যেতে হয়েছে কারণ উপরের ৬০ থেকে ৭০ মিটার শুধু পানি, যেখানে পাইলের কোন শক্তি নেই।

অনেক গবেষণা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত ওই গভীরতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তখন সেতুর নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে।

প্রমত্তা পদ্মায় পানির স্রোত

পদ্মা নদী অত্যন্ত শক্তিশালী ও বিশাল। বিশ্বে খরস্রোতা যতো নদী আছে তার একটি এই পদ্মা।

এর চাইতে বেশি পানির প্রবাহ আছে পৃথিবীর একটি মাত্র নদীতে, সেটি আমাজন এবং ওই নদীর ওপর কোনো সেতু নেই।

মনে রাখতে হবে পৃথিবীর ১০ থেকে ১৫টা বড় বড় নদীর মধ্যে দুটো হচ্ছে গঙ্গা ও ব্রম্মপুত্র। কিন্তু পদ্মা নদী হচ্ছে এই দুটো নদীর যোগফল।

আইনুন নিশাত বলেন, সিরাজগঞ্জের উজানে ব্রম্মপুত্র ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার চওড়া। রাজশাহীতে পদ্মা চার থেকে ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত। ফলে যে পরিমান পানি প্রায় ২০ কিলোমিটার জায়গা দিয়ে পার হচ্ছে সেই পানি মাওয়ায়, যেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত পদ্মা নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার চেষ্টা করে।

বর্ষাকালে পানির এই স্রোত থাকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় পাঁচ মিটার। অর্থাৎ এই নদী দিয়ে সেকেন্ডে ১৫ লাখ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। শীতকালে স্রোত কমে যায়, তখন স্রোত থাকে সেকেন্ডে দেড় মিটারের মতো।

ড. নিশাত বলেন, পদ্মা সেতুতে পানির স্রোত যখন দুই মিটারের কম ছিল তখনই সেতুর নির্মাণ কাজ চালানো হয়েছে।

"ঠিকাদারকে বলাই হয়েছে তুমি বর্ষাকালে কাজ করতে পারবে না। কারণ সেখানে কোনো বার্জ রাখা সম্ভব হবে না। স্টিলের তার দিয়ে বার্জ বেঁধে রাখার পরেও সেই তার ছিঁড়ে বার্জ ভেসে গেছে পানির স্রোতে," বলেন তিনি।

প্রকৌশলীরা বলছেন, বর্ষাকাণে নির্মাণ কাজের সময় পদ্মা নদীতে বার্জ, ড্রেজার ও ক্রেনকে থর থর করে কাঁপতে দেখা গেছে।

তারা বলছেন সেতুটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে এর শক্তিশালী পিলার নদীর প্রবল স্রোতের তোড়েও টিকে থাকতে পারে।

পরিবেশ

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে নদীর পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা নিশ্চিত করারও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য নদীর স্বাভাবিক গতিপথে কোনো বাধা দেয়া হয়নি। নদীকে কোথাও সঙ্কুচিতও করা হয়নি।

সেতুর কারণে পদ্মা নদী ও তার আশেপাশের পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। তাতে ইলিশ মাছের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।

আইনুন নিশাত বলেন, যেখানে নদীর গভীরতা ২০ ফুটের বেশি সেখানে ইলিশ মাছ চলাচল করার সময় ওই গভীরতায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে যাতে ইলিশ মাছ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে।

"পাইলিং করার সময় যে শব্দ হতো, পাইল থেকে ১০০ ফুট, এক কিলোমিটার পাঁচ কিলোমিটার দূরে প্রতিদিন দিনে দুবার তিনবার শব্দ মাপা হয়েছে যাতে ইলিশ মাছ পছন্দ করে না এধরনের শব্দ না হয়," বলেন তিনি।

এছাড়াও নদীর পশ্চিম পাশে চর জানাজাতের কাছে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার লম্বা এবং এক থেকে তিন কিলোমিটার চওড়া একটি চরে প্রচুর কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসে।

এই কচ্ছপগুলোর যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্যও তাদের জন্য আলাদা স্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়াও সেতুর দক্ষিণে বিশাল আকারের একটি চরকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাছসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী কোন জায়গা দিয়ে চলাচল করছে তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

সেখানে বিশাল এলাকা জুড়ে বনায়ন করা হয়েছে যাতে লাগানো হয়েছে দেশি প্রজাতির কয়েক লক্ষ গাছ। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।