News update
  • BSEC Chairman’s resignation urged to stabilise stock market     |     
  • Rain, thundershowers likely over 8 divisions: BMD     |     
  • First freight train leaves Mongla carrying molasses     |     
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     
  • One killed over loud music row at wedding party in Natore     |     

কমালা হ্যারিস কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমীকরণ বদলাবে?

বিবিসি নিউজ বাংলা কুটনীতি 2024-11-05, 8:43pm

errtertery-5fad85e0fc4634e22d3f87e9bd27c0581730817804.jpg




মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পুরো বিশ্ব। ভোটের ময়দান থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানো এবং তার পরিবর্তে কমালা হ্যারিসের মনোনয়ন থেকে শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর প্রচারসভায় হামলায়- একাধিক নাটকীয় মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন।

অন্যদিকে, ভোটের প্রচারে নেমে দুই প্রার্থীই বুঝিয়ে দিয়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে প্রতিপক্ষকে এক চুলও ছাড়তে রাজি নন তারা। বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভোটারদের মন জয় করতেও তারা বদ্ধপরিকর।

একদিকে ডেমোক্র্যাট কমালা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতি, বিদেশনীতি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, মানবাধিকার, গর্ভপাতের মতো ইস্যু-সহ নারীদের অধিকার এবং পরিবেশ রক্ষার তার অঙ্গীকারের বিষয়ে জোর দিয়েছেন।

অন্যদিকে, অভিবাসন ইস্যু, স্বাস্থ্য পরিষেবা, ‘মুদ্রাস্ফীতির ইতি টেনে যুক্তরাষ্ট্রকে অ্যাফোর্ডেবল বানানো’সহ একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মি. ট্রাম্প।

এই দুই প্রার্থীর মধ্যে কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন সেই নিয়ে আপাতত জল্পনা তুঙ্গে। একইসঙ্গে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই আসন্ন পরিবর্তনের প্রভাব ভারত-সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে কতখানি পড়তে চলেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম কমালা হ্যারিস

অগাস্ট মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট যিনিই নির্বাচিত হন না কেন, ভারত তার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হবে।

‘ইন্ডিয়াসপোরা ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “আমেরিকান সিস্টেম শীঘ্রই তার রায় জানাবে ...আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে যে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সাথে কাজ করতে সক্ষম হব, তিনি যেই হোন না কেন।”

প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে একবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সময় একাধিক বিষয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদ্বারিত্ব দেখা গিয়েছে। ব্যক্তিগত স্তরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘হাওডি মোদী’ বা ভারতে মি. ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর জন্য বর্ণাঢ্য ব্যবস্থা থেকে তা স্পষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি জনসমক্ষে একে অপরের প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদী।

অন্যদিকে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমালা হ্যারিসকে ইতোমধ্যে বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখা গিয়েছে। মিজ হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে ভোটের লড়াইয়ে শামিল হওয়া নিয়ে ভারতীয়দের অনেকেই, বিশেষত আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে।

তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সম্পর্ক ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো না হলেও জো বাইডেনের সঙ্গে তার (মি. মোদীর) সম্পর্ক ভালো। মি. বাইডেনের শাসনকালে একাধিকবার মার্কিন সফরে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষ থেকে তাকে স্টেট ডিনারেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

এখন প্রশ্ন হলো ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কমালা হ্যারিস- যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যিনিই হন না কেন, ভারতের সঙ্গে মার্কিন মুলুকের সমীকরণ কতটা বদলাতে পারে।

এই প্রশ্নের উত্তরে সাবেক কূটনীতিক এবং লেখক রাজীব ডোগরা বিবিসি বাংলাকে ব্যাখ্যা করেছেন, “কমালা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেই ভারত সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। ভারত-ও এই দুই প্রার্থীকে ভালোভাবে চেনে।”

“মি. ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ভারতে এসেছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তার শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও মার্কিন সফরে গিয়েছেন বেশ কয়েকবার। তার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ভালো।”

এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কে ক্ষমতায় এলে ভারতের পক্ষে লাভজনক হবে বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কেমন প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। জানিয়েছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট এলে দুই দেশের সম্পর্কে তেমন বড়সড় প্রভাব না পড়লেও ক্ষেত্র বিশেষে এর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব রয়েছে।

যে যে বিষয় নজরে

ভারতের দিক থেকে দেখতে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো, এবং সেই সমীকরণ যাতে বজায় থাকে, সেটা একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এলে সে দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে তার অবস্থান, জ্বালানি বিষয়ক নীতি, জলবায়ু সম্পর্কিত নীতি এবং চীনের প্রতি তার মনোভাবের মতো একাধিক বিষয় ভারতকে প্রভাবিত করতে পারে। একইসঙ্গে প্রভাবিত করতে পারে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকাকেও- তা সে পশ্চিম এশিয়ার সংকটের ক্ষেত্রে হোক বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

মিজ হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বাণিজ্য চুক্তির উপর জোর দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের বহুপাক্ষিক নীতিকেই অব্যাহত রাখবেন বলে অনুমান করেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

আবার ডোলান্ড ট্রাম্প ভারী শুল্ক এবং সংরক্ষণবাদের দিকে মনোনিবেশ-সহ বাণিজ্য কৌশলগুলি পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন বলেও অনুমান করা হচ্ছে। তার এই নীতি বিশ্ব বাণিজ্যের গতিকে ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

জো বাইডেনের শাসনকালে যেখানে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। কমালা হ্যারিস ক্ষমতায় এলে সেই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারতের সঙ্গে সে দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছিল প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং আঞ্চলিক উদ্যোগ।

তবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মি. ট্রাম্পের নীতি ভারতের পক্ষে নাও যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন অনেকে। সাম্প্রতিক এক প্রচার সভায় তিনি ভারত ‘আমদানি শুল্কের’ অপব্যবহার করে বলে অভিযোগ তুলেছেন এবং ‘রেসিপ্রোকাল ট্রেড’ চালু করার কথাও বলেছেন।

যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘চমৎকার মানুষ’ বলে প্রশংসা করতে শোনা গিয়েছে তাকে।

আবার রাশিয়া এবং চীনের বিষয়ে ভারতের অবস্থানকে মাথায় রাখলে মিজ হ্যারিসের তুলনায় মি. ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে তা ভারতের পক্ষে যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন তাহলে তা ভারতের জন্য কিছুক্ষেত্রে তা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন বাজারে চীনা আমদানি ঠেকাতে ভারতের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।

যে বিষয়গুলোতে প্রভাব পড়তে পারে তার মধ্যে অভিবাসন নীতিও রয়েছে। কমালা হ্যারিস ‘এইচ-ওয়ান বি’ ভিসার (যার উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের কর্মীদের নিয়োগ করে) অনুমোদনের পক্ষে। ভারতের একাধিক সেক্টর বিশেষত তথ্য প্রযুক্তি জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গিয়েছে ‘এইচ- ওয়ান বি’ ভিসার অনুমোদনের ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটরা অনেকটাই উদার রিপাবলিকানদের তুলনায়।

আবার রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ‘নৈকট্য’কে ভালোভাবে দেখেনি বাইডেন প্রশাসন। যদি মিজ হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন, তাহলে রাশিয়ার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই অবস্থান তেমন পরিবর্তন হবে না বলেই মনে করা হয়। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে এই পরিস্থিতির বদল হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

রাজীব ডোগরার মতে, “মি. ট্রাম্পের আগের মেয়াদে দেখা গিয়েছে আমেরিকাকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন। অনুমান করা যায়, তিনি যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে সেই নীতির কোনও পরিবর্তন হবে না। অন্যদিকে, তিনি যে কোনওরকম সংঘাত এড়িয়ে চলবেন বলেই অনুমান করা যায়। অর্থাৎ এখনই তিনি এমন কোনও পদক্ষেপ নেবেন না যাতে রাশিয়া বা চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধে।”

“আবার কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বর্তমান যে পরিস্থিতি সেটা নিয়েও কোনও কড়া অবস্থান তিনি নেবেন না বলেও আশা করা যায়। বরং তিনি চাইবেন বিষয়টা যাতে নিষ্পত্তি হয়ে যায়।”

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, কমালা হ্যারিস যদি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই বাইডেন প্রশাসনের নীতিমালার প্রতিফলন দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মি. ডোগরা বলেন, “ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কমালা হ্যারিস কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পলিসির উপর নজর রাখতেন। হয়ত তার পররাষ্ট্রমন্ত্রক, প্রতিরক্ষামন্ত্রকের মতো স্থানে কিছু বদল হতে পারে। হয়ত সেখানে নতুন মুখ দেখাও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল পলিসিতে (বিশ্বনীতিতে) কিছু পরিবর্তন হবে। ভারতনীতির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে, তবে সেটা তেমন বড়সড় বদল হবে না বলেই ধারণা করা যায়। কারণ কমালা হ্যারিসের কার্যকালে তার অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।”

“ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কমালা হ্যারিসের মধ্যে যিনিই প্রেসিডেন্ট হন, ভারতের সঙ্গে সমীকরণে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে আমি মনে করি। পরিবর্তন যেটা আসতে পারে সেটা হলো ডাইরেকশনে বা দিশায়। অর্থাৎ, কমালা হ্যারিস এলে অনুমান করা যায় জো বাইডেনের শাসনকালে যে দিশাতে চলত, কমবেশি সে পথেই চলবে। অন্যদিকে, যদি ট্রাম্প আসেন, তাহলে একটা দিশা পরিবর্তন দেখা যাবে। এই টুকুই।”

এখন রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু বা গাজায় চলমান যুদ্ধের ক্ষেত্রে নয়া প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় আসা কী পরিবর্তন আনতে পারে সেদিকেও বিশ্বের অন্যান্য দেশ তাকিয়ে রয়েছে।

মি. ডোগরার কথায়, “এই সংঘাতগুলোর মোকাবিলার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে সেটাও ভাবার বিষয়। কারণ কতদিন ধরে এই পরিস্থিতি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং তা কতটা বাস্তবসম্মত সেটা বিবেচনার বিষয়।”

“যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন তাহলে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থানের পরিবর্তন আসবে। সেটা রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু হোক বা গাজা। কিন্তু কমালা হ্যারিসের ক্ষেত্রে অবস্থান এই মুহূর্তেই যে বদলে যাবে তেমনটা নয়। এই ইস্যুগুলোতে মার্কিন ইনভল্ভমেন্ট কতটা হবে সেটা হয়তো নির্ধারণ করবেন তিনি আগামীদিনে।”

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এবং চীন

মানব রচনা ইন্সটিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ-এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক উপমন্যু বসুর মতে, “ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত যে বুনিয়াদী বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে, তা হলো পারস্পরিক আদানপ্রদান। এর মধ্যে রয়েছে একে অন্যের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল হওয়া, মানবাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া এবং পারস্পরিক কৌশলগত স্বার্থকে সম্মান করা। ওভাল অফিসে যিনিই আসুন, মোটের উপর এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নিরিখে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন আসবে না।”

এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। অধ্যাপক বসুর মতে, “ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের গুরুত্ব, ভারতের কৌশলগত অবস্থান, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং সামরিক সক্ষমতার কারণে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার বলে মনে করা হয়। এর আরও একটা কারণ হলো চীন।”

ওই অঞ্চলে চীনের প্রভাবকে প্রশমিত করতে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ।

মি. ডোগরা বলেছেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে ক্ষমতার নিরিখেও পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। চীন এক নম্বরে যেতে চায়, খোলাখুলি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী দেশ হয়ে ওঠার জন্য চ্যালেঞ্জ জানায়। এই বিষয়টা যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মাথায় রাখতে হবে, তেমনই তাদের সামনের দিকে এগোতেও হবে কারণ চীন কিন্তু এগোচ্ছে।”

“স্ট্র্যাটেজিক ইস্যুগুলোতে কিন্তু চীন ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তাই কমালা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনিই ক্ষমতায় আসুন না কেন, তাকে চীনের বিষয়টা মাথায় রাখতেই হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে সে কথা মাথায় রেখে নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে- বাণিজ্যিক হতে পারে, বা স্ট্র্যাটিজিক। কারণ এগুলো পাওয়ার ইন্ডিকেটর হিসাবে ধরা হয়।”

জিন্দল স্কুল অফ গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক পলিসির অর্থনীতির অধ্যাপক ড. দেবজিৎ ঝা মনে করেন চীনের বিষয়ে কড়া মনোভাব নিতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা ভারতের পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক ঝা বলেছেন, “চীনের প্রতি কড়া নীতি নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র যা ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক হতে পারে। ভারতের বাণিজ্যিক দিক থেকে যেমন লাভ হবে তেমনই চীনের মোকাবিলা করতে সেক্ষেত্রে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত এবং প্রতিরক্ষাগত অংশীদারিত্ব বাড়বে। এটা কিন্তু পরোক্ষভাবে ভারতের বাণিজ্যের পক্ষে হবে।”

অধ্যাপক ঝা ব্যাখ্যা করেছেন, “যদি কমালা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে তার বহুপাক্ষিক নীতি, জলবায়ু বিষয়ক উদ্যোগ, এবং বাণিজ্যিক নীতি প্রায় আগের মতোই থাকবে যা ভারতের পক্ষে। এইচ ওয়ান-বি ভিসার ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে না।”

“যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হন তাহলে এইচ ওয়ান-বি ভিসার অনুমোদন একটা বড় বিষয় হবে। কারণ তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ আগে দেখবেন। তার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও স্ক্রুটিনি বাড়বে। ফার্মাসিউটিক্যাল, টেক্সটাইল, তথ্য প্রযুক্তিতে এর প্রভাব পড়বে।”

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘নৈকট্যের’ বিষয়েও উল্লেখ করেছেন তিনি।

তার মতে, “প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা মাথায় রাখলে দেখা যাবে এগুলো কোনও সমস্যাই নয়।”

এই ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক কিন্তু কমালা হ্যারিসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর নেই বলেই বিশেষজ্ঞদের মতামত।

এই প্রসঙ্গে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটা দিক তুলে ধরেছেন অধ্যাপক বসু। তার মতে, “অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতকে তার সম্পর্ক ভালো রাখতেই হবে। ডিজিটাইজেশন নিয়ে ভারতের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং যে দিশাতে দেশ এগোচ্ছে সেই পথে হাঁটতে হলেও এই সম্পর্ককে ভালো রাখতে হবে।”

“আবার যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে দেখতে গেলে ভারতকে অস্বীকার করতে পারবে না তার কারণ ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং তথ্য প্রযুক্তিতে বলীয়ান কর্মক্ষমতা। আর এই কারণগুলোর জন্যই দুই দেশই চাইবে সম্পর্ক ভালো রাখতে।”