News update
  • ‘With Science, We Can Feed the World of 9.7 Billion by 2050′     |     
  • WHO warns of severe disruptions to health services for funding cuts     |     
  • ICJ hears Sudan’s case accusing UAE of ‘complicity in genocide’     |     
  • Bombardment, deprivation and displacement continue in Gaza     |     
  • Aged and Alone: The hidden pains in old age homes     |     

পুনর্গঠনের জন্য গাজার 'দখল' নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

বিবিসি বাংলা কুটনীতি 2025-02-05, 2:57pm

5rt4545-0236e4dba151db9f912b2b69ae9820f41738745845.jpg




মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে পুনর্গঠনের জন্য গাজা উপত্যকার 'দখল' নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে গাজাবাসীকে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে।

মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে একটি ধ্বংসস্তূপ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করতে পারে। অর্থাৎ অবিস্ফোরিত বোমা অপসারণ, গাজা পুনর্গঠন এবং সেখানকার অর্থনীতিকে পুনরায় সচল করা।

তিনি বলেছেন, আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যাবে না। তাতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা "অনেক দশক ধরে মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতীক" হয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি এই অঞ্চলটিকে 'দুর্ভাগা' হিসাবেও অভিহিত করেছেন।

তিনি এটাও দাবি করেছেন, গাজার ১৮ লাখ মানুষ সেখানে থাকতে চায় না। বরং, অন্য দেশে চলে যেতে চায় তারা।

ট্রাম্প বলেছেন, গাজার মানুষ "একটি দুর্বিষহ জীবন" যাপন করেছে এবং তাদের চলে যাওয়া উচিত। তিনি আরও বলেছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য ওই অঞ্চলটির ধনী দেশগুলোর এখন আর্থিক সহায়তা করা উচিত যাতে তারা "সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারে।"

যদি তারা চলে যায়, "তাহলে তাদের ওপর আর গুলি চালানো হবে না" বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছেন যে ফিলিস্তিনিরা কেবল গাজায় ফিরতে চায়, কারণ "তাদের আর কোনো বিকল্প নেই।"

ফিলিস্তিনিরা কি ফের গাজায় ফিরতে পারবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে ভবিষ্যতে গাজা যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকবে কিনা।

এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, "আপনি কি একটি সার্বভৌম ভূখণ্ড দখলের কথা বলছেন?"

তিনি তখন হ্যাঁ-সূচক জবাব দিয়ে বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে "দীর্ঘমেয়াদি" দখলের বিষয়ে পরিকল্পনা করছেন।

"এই ভূমির মালিকানা নেওয়া, এটিকে উন্নত করা, হাজার হাজার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা—এটি সত্যিই চমৎকার হবে," তিনি বলেন।

"আমার এই পরিকল্পনাকে সবাই-ই পছন্দ করছেন," তিনি যোগ করেন।

এদিকে, ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে অন্য দেশে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা যে তার এই অবস্থান কি তাহলে একটি "দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের" বিরুদ্ধে?

অর্থাৎ, ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বিরোধী? তিনি সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, "এটি দ্বিরাষ্ট্র, একরাষ্ট্র বা অন্য কোনো রাষ্ট্র সম্পর্কে কিছুই বোঝায় না।"

সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগে আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আরও জিজ্ঞাসা করা হয় যে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি ১৮ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তারা সেখানে ফিরে আসার অনুমতি পাবে কিনা।

তার কাছে প্রশ্নটা ছিল, ভবিষ্যতে "আপনি কাদেরকে সেখানে বসবাস করতে দেখছেন?"

তার উত্তরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, "সেখানে মানুষ থাকবে। বিশ্বের মানুষ।"

সেই সাংবাদিক আরও জিজ্ঞাসা করেন, তাদের মাঝে কি ফিলিস্তিনিরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, "হ্যাঁ, তারা থাকবে।"

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, "আমি কোনো ভালোমানুষি কথা বলতে চাই না, আমি চালাক সাজারও চেষ্টা করছি না। তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যের 'রিভেরা' হতে পারে।"

নেতানিয়াহু যা বলেছেন

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে সন্তুষ্ট, সে ব্যাপারে তিনি কোনো লুকোছাপা করেননি। তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে খোলাখুলিভাবেই বলেন, "হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বন্ধু আপনি।"

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করে মি. নেতানিয়াহু বলেছেন যে যুদ্ধবিরতির চুক্তির মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি ও মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মিদের বাড়ি ফেরার পথ সুগম করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি উল্লেখ করেছেন, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যেসব অস্ত্র আটকে ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর সেগুলোর সরবরাহ পুনরায় চালু করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্দিষ্ট কিছু ইহুদি বসতির ওপর আরোপিত "অন্যায় নিষেধাজ্ঞা" প্রত্যাহার করেছেন। এছাড়া, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-কে ট্রাম্প প্রশাসন আর তহবিল না দেওয়ার ঘোষণা করার কারণেও তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

"সবকিছু মাত্র দুই সপ্তাহের মতো হয়েছে। আপনারা ভাবতে পারছেন যে চার বছরে আমরা কোথায় থাকবো? আমি পারছি।" বলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এছাড়া, মি. নেতানিয়াহু তার বক্তব্যে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধগুলোর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান—গাজা, লেবানন ও ইরানে সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

তিনি ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে বলছেন যে 'লায়ন অব জুডাহ' (ইহুদী ধর্মের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতীক) গর্জন করছে। তাই, ইসরায়েলকে গাজায় তাদের কাজ শেষ করতেই হবে বলে জানান তিনি।

এসময় তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'কাঠামোর বাইরে চিন্তা করার' দক্ষতার প্রশংসা করেছেন।

তিনি মি. ট্রাম্পকে বলেছেন, "আপনি সরাসরি মূল আলোচনায় আসেন। আপনি এমন কিছু দেখেন, যা অন্যরা দেখতে চায় না। এই ধরনের চিন্তাধারাই মধ্যপ্রাচ্যের রূপ বদলে দেবে।"

"ইসরায়েল যুদ্ধ জয় করেই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবে," ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন—এবং যোগ করেছেন যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি বিজয় হবে। তিনি বলেছেন যে ইসরায়েল শান্তি অর্জন করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে।

ফিলিস্তিনিরা কি মেনে নেবে?

গাজাবাসীকে পুনর্বাসনের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরিকল্পনা করছেন, সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর।

যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে বসবাসকারীদের 'একটি সুন্দর, নতুন, মনোরম ভূমিতে' পুনর্বাসনের যে ঘোষণা দিয়েছে, সে বিষয়ে রিয়াদ মানসুর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি মিশনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার)-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেন।

সেই ভিডিওতে তিনি বলেন, "যারা তাদেরকে (গাজাবাসী) একটি সুখী, চমৎকার জায়গায় পাঠাতে চায়, তাদের উচিত তাদেরকে (গাজাবাসী) ইসরায়েলের ভেতরে তাদের (গাজাবাসী) আদি বাড়িতে ফেরত পাঠানো।"

তিনি তার বক্তব্যে যোগ করেছেন যে ফিলিস্তিনিরা গাজায় তাদের বাড়িঘরে ফিরতে চায়।

"আমাদের মাতৃভূমি হলো আমাদের মাতৃভূমি...। তারা গাজাকে পুনর্নির্মাণ করতে চায়—স্কুল, হাসপাতাল, অবকাঠামো—কারণ এটাই তাদের স্থান এবং তারা এখানে বাস করতে ভালোবাসে। আমি মনে করি বিশ্ব নেতাদের উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা।" বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন, মিশর ও জর্ডান গাজাবাসীকে আশ্রয় দিক।