নামকরা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ না থাকায় দুর্ঘটনার সময় শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য সরকার গৃহীত সাড়ে তিনশ কোটি টাকার ইউনিক আইডি প্রকল্পেও রক্তের গ্রুপ অনাবশ্যক হিসেবে রাখায় হতাশ অভিভাবকরা।
তবে গ্রুপ নির্ণয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাণিজ্য করছে জানিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষার্থীদের বড় অংশ স্বেচ্ছায় তথ্য দেয়ায় বেশিরভাগ পরিচয়পত্রে রাখা হয়েছে রক্তের গ্রুপ। আর প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে তা ইউনিক আইডি কার্ডে উল্লেখ করার দাবি অভিভাবকদের।
সোমবার (২০ জুলাই) রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ হতাহতের ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেয়ার পর প্রয়োজন হয় রক্তের। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকা পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ উল্লেখ না থাকায় চিকিৎসকদের পড়তে হয় জটিলতায়।
নামকরা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপের উল্লেখ না থাকায় হতাশ অভিভাবকরা। এমনকি প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য সরকারের নেয়া অ্যাস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগেটেড অ্যাডুকেশন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস) বা ইউনিক আইডি প্রকল্পেও রক্তের গ্রুপের বিষয়টি রাখা হয়েছে অনাবশ্যক হিসেবে।
অনেক অভিভাবক জানান, রক্তের গ্রুপের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আইডিতে না থাকলে জরুরি প্রয়োজনে বিপদে পড়তে হয় বা হচ্ছে।
এক অভিভাবক ফোনে বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে না আছে বাবা-মায়ের ফোন নম্বর বা রক্তের গ্রুপের তথ্য। এটা অনেক বড় হতাশার একটা কথা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, রক্তের গ্রুপের তথ্য অনাবশ্যক করলেও অনেকেই নিজ উদ্যোগে তথ্য দেয়ার ফলে অধিকাংশ কার্ডে রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করা হয়েছে।
আইইআইএমএসের প্রকল্পের উপ-পরিচালক ড. নাসির উদ্দীন গনি বলেন, যেসব জায়গাতে শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ পাওয়া যাবে না, সে সেটা দিবে না। আর যখন পাওয়া যাবে, সে ডাটাবেজে প্রবেশ করে ডায়নামিক ক্যাটাগরি যেহেতু, সেটা সে ডাটাবেজে তথ্যটা দিয়ে দিতে পারবে। আমাদের ইউনিক আইডি কার্ডে সেই রক্তের গ্রুপের অপশনটা আছে।
তবে কী কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে শিথিলতা দেখানো হয়েছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্পের উপ-পরিচালক বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় অনাবশ্যক করা হয়েছে।
আইইআইএমএসের প্রকল্পের উপ-পরিচালক ড. নাসির উদ্দীন গনি আরও বলেন,
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এই রক্তের গ্রুপ করা নিয়ে একটা জটিলতা আছে। গ্রামপর্যায়ে রক্তের গ্রুপটা বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায় না। এখন পর্যন্ত সেই সেবাটা ওখানে পৌঁছায়নি। যে কারণে সেটা অপশনাল (অনাবশ্যক) করা হয়েছে।
তবে স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল অথবা প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে তা ইউনিক আইডি কার্ডে উল্লেখ করার দাবি অভিভাবকদের।
৩৫৩ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার টাকার এ প্রকল্পের আওতায় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ১ কোটি ২৫ লাখ শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি কার্ড প্রস্তুত হয়ে বিতরণের অপেক্ষায় আছে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি কার্ড নিয়ে কাজ করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।