২০২৪ সালে বাংলাদেশে যাতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কাছে চিঠি লিখেছেন দেশটির ছয়জন কংগ্রেস সদস্য, উইলিয়াম আর কিটিং, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, বারবারা লি, জিম কস্টা, ডিনা টাইটাস ও জেমি রাসকিন। তাঁরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য। কংগ্রেস সদস্য উইলিয়াম আর কিটিং মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় বিষয়টি জানিয়েছেন।
চিঠিতে লেখা হয়েছে,
’২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির চলমান অবনতি সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতেই আমাদের এই চিঠি’।
কংগ্রেস সদস্যরা স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থাগুলিকে ২০০৪ সালে গঠিত বাংলাদেশ পুলিশের একটি আধাসামরিক ইউনিট সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির দ্বারা সংঘটিত গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন৷
চিঠিতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় র্যাব এবং এর সাতজন বর্তমান এবং সাবেক উচ্চ-স্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর করা ভিসা বিধিনিষেধকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যবশত, এসব কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও বাংলাদেশে নিপীড়ন বন্ধ হয়নি। তাঁরা বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০২২-এ, বাংলাদেশী মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এর উদ্ধৃতি দিয়ে ৩১ টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ২১টি বলপূর্বক গুম, ৬৮টি জেলের ভিতরে মৃত্যু এবং সাংবাদিকদের উপর র্যাব গোয়েন্দা শাখাসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ১৮৩টি হামলার বিষয়টি নথিভুক্ত করেছেন। উপরন্তু জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা সহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত ও পদোন্নতি প্রদান করেছে এবং বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ সম্পর্কে অস্বীকৃতি জানানো অব্যাহত রেখেছেন এবং এ সব অভিযোগকে , “ দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার’ বলে অভিহিত করে বিষয়টির গুরুত্ব খাটো করছেন।
এছাড়া, ২০২১ সালের ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বাংলাদেশী সমাজের অনেককে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে প্রত্যক্ষ, নথিভুক্ত বা মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রত্যক্ষ করা এবং নথিভুক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশ সরকার সুশীল সমাজের সংগঠন, মানবাধিকার রক্ষাকারী, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার এবং তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার যারা হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে তাদের জোরপূর্বক সাদা কাগজে বা পূর্ব লিখিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে যাতে নিশ্চিত করা হয় যে, তাদের আত্মীয় নিখোঁজ হয়েছে, তাদের জোর করে তুলে নেওয়া হয়নি।
তাঁরা চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, আমরা বুঝতে পারি যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে সরকারের প্রশংসা করি। একই সময়ে, ২০২৩ সালের গণতন্ত্রের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না করার সিদ্ধান্তটি একটি স্পষ্ট সংকেত ছিল যে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে দেশটির গণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকার চ্যালেঞ্জগুলিকে স্বীকৃতি দেয়।
৬ কংগ্রেসম্যান পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন করে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলোর উত্তর আশা করেছেন। ছয় জন কংগ্রেসম্যান পররাষ্ট্র বিভাড়ের কাছে যে সব প্রশ্ন করেন , সেগুলো হলোঃ
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সসহ বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্টগুলি স্টেট ডিপার্টমেন্ট কীভাবে নিরীক্ষণ করে?
এই সংস্থাগুলির দ্বারা সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তি হ্রাস করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রগতি বা এর অভাব মূল্যায়ন করার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট কোন সূচকগুলি ব্যবহার করছে? নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কি এই একই সূচকগুলিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়?
২০২১ সালের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে রাষ্ট্রীয় দপ্তর নাগরিক সমাজের সংগঠন, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের সরকারি প্রতিশোধ থেকে রক্ষা করার জন্য কী ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে?
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে সমন্বয় করতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের উত্সাহিত করার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট কী কী প্রচেষ্টা অবলম্বন করছে?
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য জড়িত বলে বিশ্বাস করা যে কোনো বাংলাদেশী ব্যক্তির জন্য ভিসা সীমাবদ্ধ করার নতুন নীতির পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কি ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্ধারিত নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে?
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশসহ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্ত বিদ্যমান কিনা, তা মূল্যায়ন করতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট কোন সূচক ব্যবহার করছে? তথ্য সূত্র ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।