News update
  • UN Estimates $70 Billion Needed to Rebuild Gaza After War     |     
  • Mirpur garment factory, chemical godown fire kills 9     |     
  • Garbage pile turns Companiganj Bazar into an unhygienic town     |     
  • Put 'old feuds' aside for a new era of harmony in ME: Trump     |     
  • Rivers are Bangladesh's lifeblood, Rizwana at UN Water Convention      |     

বাংলাদেশে তিন গুণ পুষ্টিমানের 'ব্ল্যাক রাইস'-এর আবাদ শুরু হলো যেভাবে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক: খবর 2022-02-13, 7:15pm




বাংলাদেশের কুমিল্লা, নওগাঁ, চট্টগ্রাম ও ঠাকুরগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে আবাদ হচ্ছে কালো চালের ধান এবং প্রতিবছরেই আবাদ এলাকার পরিমাণ বাড়ছে।

কৃষকরা বলছেন অনেক বেশি দামের কারণে এটি উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছেন তারা। অন্যদিকে গবেষকরা বলছেন এ ধান থেকে পাওয়া চালে প্রচলিত অন্য চালের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি পুষ্টি থাকায় ধীরে ধীরে এটির চাহিদা বাড়ছে। সূত্রঃ বিবিসি।

ঢাকার গুলশানে একটি সুপারশপে জাপান থেকে আনা ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা। তবে দেশীয় কালো চাল কিছু সুপারশপে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা প্রতি কেজিতে।

ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর শরিফা আক্তার বলছেন, তিনি মিনাবাজার নামক একটি সুপারশপ থেকে মাঝেমধ্যে এই চাল কিনে থাকেন।

"প্রথমে দেখে শখ করে কিনেছিলাম। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই দরকারি। এরপর থেকে মাঝে মধ্যেই কিনি। এ চালের ভাতের স্বাদটা ঠিক রেগুলার যে ভাত খাই তার মতো না। একটু ভিন্ন," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, প্রাচীন চীনে এই কালো চালের পরিচিতি ছিলো 'নিষিদ্ধ' হিসেবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে যে এটি দীর্ঘায়ু ও কামোদ্দীপক হিসেবে ভূমিকা রাখে।

এ বিশেষ গুণের জন্য এটিকে সম্রাট ও তার পরিষদের লোকজন ছাড়া সর্বসাধারণের জন্য তা নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

সেখানে পাহাড় এলাকাগুলোতে শুধু রাজা বা রাজন্যবর্গের জন্য এ ধরণের চাষ গোপনে চাষ করা হতো।

আবার কেউ কেউ বলেন তখন শুধু রাজপরিবারের মেয়েদের গোপনে এ চালের ভাত খাওয়ানো হতো বলে এটি নিষিদ্ধ চাল হিসেবে ঐতিহাসিক গল্পগাঁথায় উঠে আসে।

কালো চাল আসলে কেমন?

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন প্রকল্প পরিচালক ও ধান গবেষক ডঃ মোঃ মেহেদি মাসুদ বলছেন এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত।

বীজ বপনের পর কোনটির পাতা সবুজ আবার কোনটির পাতা বেগুনি হলে চালের রং কালোই হয়।

এ কারণে কোথাও সবুজ আবার কোথাও বেগুনি রংয়ের ধানপাতা সমারোহে চমৎকার দর্শনীয় হয়ে ওঠে ধানক্ষেতগুলো।

এই চালের ভাত আঠালো ও সুগন্ধি। পায়েস, খিচুড়ি, ঘি-ভাত, পাস্তা, পাঁপড়, নুডলস করেও খাওয়া যায়।

বাংলাদেশে কালো ধানের চাষ শুরুর সুযোগ তৈরিতে মিস্টার মাসুদকেই মূল ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়। তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে ভালো জাতের বীজ এনে কৃষকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে।

মিস্টার মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন যে এই ধানটি সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে অতুলনীয়।

তবে এ ধানের চালের দাম অনেক বেশি। ঢাকার বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কালো চাল এখন ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন বাংলাদেশে এখন ৫ থেকে ৭ প্রজাতির কালো চালের ধান চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটও কয়েক বছর ধরে এ ধান চাষ করছে।

কুমিল্লার কৃষক মনজুর হোসেন বলছেন থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, জাপান, চীন ও ভিয়েতনাম- এ সাতটি দেশ থেকে সংগ্রহ করা কালো চালের বেগুনী ও সবুজ পাতার ধান এখন চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে শুরু হয়েছিলো যেভাবে?

বাংলাদেশে যার হাত দিয়ে কালো চালের ধান মাঠে এসেছে তিনি হলেন কুমিল্লা সদর উপজেলার মনাগ্রামের মনজুর হোসেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে গ্রামে ফিরে পারিবারিক কারণে সেখানেই থিতু হতে হয়েছিলো তাকে।

এরপর থেকে পারিবারিক কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হন।

"২০১৭ সালে একটি কাজে ঢাকার গুলশানে গিয়েছিলাম। একটি সুপারশপে দেখলাম জাপান থেকে আনা কালো চালের কেজি প্রতি দাম এক হাজার টাকা। তখনই মাথায় এলো। কিছু চাল কিনে আনলাম"।

এরপর কুমিল্লায় গিয়ে তিনি বের করার চেষ্টা করেন সুপারশপ থেকে কিনে আনা চালের কোন দানার মধ্যে জীবিত কোন উপাদান আছে কিনা অর্থাৎ এ চাল থেকে ধান বীজ তৈরি করা সম্ভব হবে কিনা।

"অনেক চেষ্টা করলাম। এবং শেষ পর্যন্ত ২৩টি ধান গাছ হলো। সেই শুরু। এরপর ড. মেহেদী মাসুদ ইন্দোনেশিয়া থেকে বীজ এনে দিলেন সে বছরই"।

মেহেদী মাসুদের প্রকল্পের অধীনে আগে থেকেই কৃষক হিসেবে কাজ করতেন মি. হোসেন।

মি. মাসুদ ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে বারোমাসি জাতের কালো চালের ধানের বীজ আনার পর অফিসে যখন সেগুলো খোলেন তার সামনেই ছিলেন তখন মিস্টার হোসেন।

"উনি তখনই চাইলেন কিছু ধান। আমিও ভাবলাম তিনি সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা যেহেতু করছেন তাকেই দেই। এরপর তাকে কিছু দিলাম আর আমাদের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটকে দিলাম," বলছিলেন মি. মাসুদ।

পরে ত্রিপুরার একটি ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকেও নিজ উদ্যোগে কালো চালের ধান সংগ্রহ করেন তিনি।

এভাবেই শুরু হয়ে এ বছর প্রায় এক হাজার একর জমিতে কালো চালের ধানের চাষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মি. হোসেন।

কুমিল্লা ছাড়াও নওগাঁ, চট্টগ্রাম, ঠাকুরগাঁওসহ কয়েকটি এলাকার কৃষকরা মনজুর হোসেনের কাছ থেকে এ ধান বীজ নিয়েছেন।

"প্রতিদিনই নানা জায়গার কৃষকদের অনুরোধে এ ধান বীজ পাঠাচ্ছি। কারণ সবাই দামও ভালো পাচ্ছে"।

মি. হোসেন জানান, তিনি ঢাকার কয়েকটি সুপারশপে এ চাল সরবরাহ করছেন কেজি দুশো টাকা দরে যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা ধরে।

কালো চালের যত গুণ

ড. মেহেদী মাসুদ বলছেন কালো চালে অ্যান্থসায়ানিন বেশি থাকে যা একটি ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

"এতে ফাইবার অনেক বেশি থাকে। ফলে এ চালের ভাত শরীরে গ্লুকোজ তৈরি করে খুব ধীর গতিতে। ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ কারণে এ চালকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব কার্যকর বলা হয়"।

এছাড়া আমিষ, ভিটামিন, জিংক, খনিজ পদার্থসহ অন্য উপাদানগুলো সাধারণ চালের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি থাকে বলে দাবি করেন এ গবেষক।

যদিও মনজুর হোসেন বলছেন যে, নিয়মিত চাল ক্রেতাদের মধ্যে প্রচার না থাকায় এটি সম্পর্কে খুব কমই মানুষই জানে এবং এ কারণে তিনি মনে করেন যে সরকারের উদ্যোগে ব্যাপক প্রচার হওয়া দরকার এ চালটি নিয়ে।

ঢাকায় সুপারশপে নিয়মিত বাজার করেন নাসিমা আক্তার। তিনি বলছেন যে চালটি তার নজরে পড়েছে কিন্তু এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না বলে কেনেননি কখনো।

কালো চাল তিনি কিনবেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "চাল বলতে তো বুঝি সাদা হবে। কালো চাল তো চিন্তাই করিনি। তেমন কিছু জানিওনা। জানলে হয়তো কিনে দেখতাম"।