মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তের দুপাড়ে সক্রিয় সংঘবদ্ধ দালালচক্র। যাদের তৎপরতায় রাতের আঁধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘটছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। আর আশ্রয় নিচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, দুদেশের দালালচক্রকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে নৌকায় করে অনুপ্রবেশ করছেন তারা। নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকার থেকে যে ধরণের নির্দেশনা আসবে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।
মিয়ানমারের মংডুর নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হানিফ (৫০)। মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে গত ৮ আগস্ট পালিয়ে এসে এখন পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফের ২৫ নম্বর ক্যাম্পে। তিনি বলছিলেন, কী কারণে পালিয়ে এসেছেন আর কীভাবে এসেছেন।
মোহাম্মদ হানিফ বলেন, 'বোম মারে, গুলি মারে, এগুলো সহ্য করতে না পেরে আমরা এখানে এসে কষ্ট করে আছি। ১৩ জন এসেছিলাম, তার মধ্যে ৮ জন নৌকায় উঠতে পেরেছি, বাকি ৫ জনের কোন খোঁজ নেই।'
শুধু মোহাম্মদ হানিফ নন; কক্সবাজারের টেকনাফের ২৫ নম্বর ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে কেউ এসেছেন ৫ দিন বা ১০ দিন আগে। আবার কেউ কেউ এসেছেন ১ মাস আগে। সবাই আশ্রয় নিয়েছেন ক্যাম্পে থাকা তাদের স্বজনদের বসতিতে।
আবুল কাশেম (৫৫) বলেন, ‘মংডুতে রোহিঙ্গারা যেখানে থাকে, সেখানেই তারা বোম মারে, গুলি মারছে। তাই বাধ্য হয়ে পালিয়ে আসতে হচ্ছে।
আরেক রোহিঙ্গা মরিয়ম (২৭) বলেন, ‘আর তো পারি না। আর কত কষ্ট পাবো? ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। সীমান্তের নানা পয়েন্টে সতর্কতার পরও অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের দাবি, দুপাড়ে সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের হাত ধরে অর্থের বিনিময়ে রাতের আঁধারে অনুপ্রবেশ করছেন তারা।'
গত ২৮ আগস্ট অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইদ্রিস (৩৭) বলেন, ‘বার্মাতে একদল দালাল আছে, বাংলাদেশেও একদল দালাল আছে। বার্মায় নৌকায় তুলে দিতে দালালদের দিতে হয় ১০ হাজার টাকা আর বাংলাদেশে ঢুকলে এখানকার দালালদের দিতে হয় ২০ হাজার টাকা।’
আরেক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, ‘৩০ হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া করে বাংলাদেশে ঢুকতে হচ্ছে। আর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন জানিয়েছে, নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকার থেকে যে নির্দেশনা আসবে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের জন্য তারা তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো নতুন রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি তাদের কাছে। ফলে নতুন রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই।’
তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে নতুন করে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মীয় স্বজনের কাছে রয়েছে। যারা যুদ্ধে আহত হয়েছে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপর থেকে নির্দেশনা আসলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি বাংলাদেশের কিছু দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবিসহ সবাইকে জানানো হয়েছে আরও কঠোর হওয়ার জন্য।’ তথ্য সূত্র সময় সংবাদ।