News update
  • Dhaka updates noise pollution rules to curb rising sound levels     |     
  • Unpacking COP30’s Politically Charged Belém Package     |     
  • 2 tons of banned plastic bags seized in Faridpur     |     
  • A woman or girl killed every 10 minutes, UN report finds     |     
  • Cracks appear at newly built Secretariat building after quake     |     

ট্রাম্প-হ্যারিস: কার জয়ে বাংলাদেশের কী হবে?

বিবিসি নিউজ বাংলা খবর 2024-11-05, 8:40pm

rtytrytrytrru-3ec614f1528daeef0d2611c8ac2330931730817623.jpg




কমালা হ্যারিস না ডোনাল্ড ট্রাম্প - যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

বিশেষ করে রিপাবলিকার প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইটকে ঘিরে সেই আলোচনা আরো জোরালো হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অতীতে মার্কিন রাজনীতিকদের, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক দেখা গেছে।

ট্রাম্প-হ্যারিস, কার জয়ে বাংলাদেশের জন্য কী হবে? ভারতই বা এখানে কতটা ফ্যাক্টর হতে পারে? ড. ইউনূসের সাথে মার্কিন রাজনীতিদের সম্পর্ক কি কোন ভূমিকা রাখবে এই সম্পর্কে?

বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, মানবাধিকারের মত বিষয়গুলোতে জোর দেয় ডেমোক্র্যাট প্রশাসন। কমালা হ্যারিস বা ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে ব্যবসা-বাণিজ্য, সহযোগিতার জায়গাগুলো বাংলাদেশের জন্য সহজ থাকার সুযোগটা বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং লেখক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, কমালা হ্যারিস জয়ী হলে বর্তমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতা ও সামঞ্জস্য বজায় থাকবে, কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে দু'দেশের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে।

“আমার মনে হয় না ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান সম্পর্কের কাঠামোকে সমর্থন করবেন, যেখানে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে উন্নয়ন, সংস্কার ও অন্যান্য সহায়তা বা সমর্থন করছে। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রদানের উপর জোর দেয়ার মত সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী হবে না,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মিঃ কুগেলম্যান।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বজুড়েই আমেরিকার মানবিক সহযোগিতার জায়গা কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চয়তার জায়গা হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে দেখছেন তিনি, কারণ জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসে, তার একটা বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

আমেরিকার ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠিক প্রথাগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যায়নি। তিনি যেভাবে বৈদেশিক নীতির জায়গাগুলো বিবেচনা করেন, সেটি ঘিরে অনিশ্চয়তাও থাকে।

সাধারণত আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বদল হলেও বৈদেশিক নীতিতে খুব বড় পরিবর্তন হয় না। এর পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা বা কাঠামোগুলোর একটা শক্তিশালী ভূমিকা থাকে বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এঅ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন।

“কিন্তু ট্রাম্পকে আমরা দেখেছি কিছু প্রচারণায় ইনস্টিটিউশনকে বদলে দেয়ার কথা বলছেন। সেটা হলে একটা বড় পরিবর্তন হতে পারে,” বলেন মিজ মোমেন। যদিও বিষয়টি আদৌ কতদূর সম্ভব হবে বা পররাষ্ট্র নীতির জায়গায় প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলেই মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংখ্যালঘু নির্যাতন সংক্রান্ত একটি টুইট আলোচনা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে। তবে বিশ্লেষকেরা এটিকে ভবিষ্যৎ নীতির চেয়ে নির্বাচনে আমেরিকার হিন্দু ভোটার টানার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জায়গা থেকে তারা ধারণা করছেন, “কিছু লবি গ্রুপ হয়তো বা এটাকে ইনফ্লুয়েন্স করতে চেয়েছে এবং সেই আলোকেই তার এই স্টেটমেন্টটা এসেছে।”

লবি গ্রুপ বলতে আওয়ামী লীগ অথবা ভারতকে বোঝানো হয়েছে, এমন আলোচনাও রয়েছে।

বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনের গ্রহণযেগ্যতা নিয়ে আমেরিকা প্রথমে শক্ত অবস্থানে থাকলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনই একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

“এখানে ভারত আগেও ভূমিকা পালন করেছে, ট্রাম্পের যে টুইট সেখানেও যে তাদের একটা ভূমিকা আছে সেটা আমরা মোটামুটি আন্দাজ করতে পারি,” বলছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির।

অগাস্ট মাসে নরেন্দ্র মোদী ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রকে সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে উদ্বেগের কথা জানালেও সেটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। কমালা হ্যারিস নিজে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট শিবিরের অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক বেশ ভালো। এবছর সেপ্টেম্বর মাসেও মোদীকে একজন ‘চমৎকার মানুষ’ হিসেবে উল্লেখ করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্প জয়ী হলে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভারত ভূমিকা পালন করতে চাইবে বলে মনে করছেন মিঃ কবির। সেক্ষেত্রে “ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে সেখানে ভারতের দিক থেকে এক ধরণের নেতিবাচক উপাদান থাকার একটা শঙ্কা থাকবে” বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখার প্রবণতার কথা উল্লেখ করেন অনেকে। ট্রাম্প যেভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সম্পর্কে বিশ্বাসী, তাতে করে ভ্লাদিমির পুতিনের মত নরেন্দ্র মোদীকেও তিনি সমর্থন করবেন বলে মনে করছেন মেহনাজ মোমেন। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ভারতের প্রভাব বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।

অবশ্য কমালা হ্যারিস জিতলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সুসম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মতভেদ বাড়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন মাইকেল কুগেলম্যান।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন যে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, দুই পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভালো সম্পর্ক থাকায় এবং দুই শিবিরেই তার বন্ধু থাকায় এই নির্বাচনের ফলাফলে দুই দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না।

সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশ-আমেরিকার সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলা হলেও, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করেন মিঃ কুগেলম্যান।

“ইউনূস অতীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন ২০১৬ সালে যখন ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তাদের রাজনৈতিক আদর্শ বা মতাদর্শের জায়গা ভিন্ন,” বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।

ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে বক্তব্য রাখার সময় ড. ইউনূস ট্র্যাম্পের জয়কে ‘সূর্যগ্রহণ’ বা অন্ধকার সময় হিসেবে বর্ণনা করেছেন বলে হেকের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া সেসময় আরেকটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে তিনি কী বলতে চাইবেন জিজ্ঞেস করা হলে, তখন ‘দেয়াল’ তৈরি না করে ‘সেতু’ নির্মাণ করে দৃষ্টিভঙ্গি উদার করার কথা এনবিসি নিউজকে বলেছিলেন ড. ইউনূস।

মিঃ কুগেলম্যানের মতে, কমালা হ্যারিস জিতলে ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্কের জন্য একটা সম্পদ হবেন, কারণ বাইডেন প্রশাসনের মত হ্যারিসের ক্ষেত্রেও একটা স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা থাকবে। তবে ট্রাম্প জয়ী হলে সে সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।

হ্যারিস বা ট্রাম্প, যেই প্রেসিডেন্ট হোক না কেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটা নির্ভরযোগ্যতার জায়গা প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে উল্লেখ করেন মিজ মোমেন।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সামনের নির্বাচন দেরিতে হলেও কবে হবে, কীভাবে হবে, ধাপগুলো কী হবে, অর্থাৎ একটা রোডম্যাপ তুলে ধরতে হবে বলেন তিনি। এটা বর্তমান সরকারের বৈধতার ইমেজ এবং সমর্থনের জায়গা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

অবশ্য বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার জন্য বাংলাদেশ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর সুযোগ হবে বলে মনে করছেন না হুমায়ুন কবির ও মেহনাজ মোমেন।

কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ, এই বড় বিষয়গুলি নিয়েই আমেরিকার অনেক বেশি মনোযোগ থাকবে। এই দুই যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বই একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চীন অথবা ইরানের ইস্যুও রয়েছে। সেসবের সামনে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবার সুযোগ হবে বলে মনে করেন না তারা।

বরং আমেরিকা সব দিকেই নিজেদের স্বার্থ বা প্রয়োজনের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেবে বলে ধারণা অনেক বিশ্লেষকের।

বাংলাদেশে আমেরিকার স্বার্থের জায়গা কী?

ব্যবসা বাণিজ্য, কৌশলগত, ভূরাজনৈতিক, এমন নানা দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের একটা সম্পর্কে আগ্রহের জায়গা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে এই অঞ্চলে মনোযোগটা বাড়াচ্ছে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু একটা বড় জনগোষ্ঠীর দেশ যারা বেশ সক্রিয়,” বলছিলেন মিঃ কবির।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে এশিয়ার সংযোগস্থল এবং বঙ্গোপসাগরের সাথে থাকায় সেখানে ভূরাজনৈতিক একটা আগ্রহ থাকে।

“সম্প্রতি সামরিক দিক থেকেও কিন্তু ডাইভার্সিফিকেশনের চিন্তা আমরা করছি। সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র-শস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহী হবে” ফলে সেটাও একটা আগ্রহের জায়গা বলে উল্লেখ করেন মি. কবির।

বাংলাদেশকে ‘উঠতি বাজার’ বিবেচনায় ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের জায়গা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম, বোয়িং বিমান, গ্যাস বা এলএনজির কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়া বাংলাদেশের বহু মানুষ আমেরিকায় বসবাস করেন, পড়াশোনা করতে যান। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বের জায়গা রয়েছে, প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও ক্রেডিট কার্ড বা কম্পিউটার ব্যবহার করতে গেলেও তাতে কোনও না কোনওভাবে যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়।

বৈদেশিক নীতিতে সাধারণত বিশ্বের অন্যান্য দেশ বা প্রতিবেশী দেশের সাথে স্বার্থের সমীকরণ গুরুত্ব রাখে। তবে আমেরিকার জন্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এবার নতুন সমীকরণের জায়গা অধ্যাপক ইউনূসের সাথে সম্পর্ক। এসব নানাবিধ ফ্যাক্টর মিলেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কটা নির্ধারণ হবে।