News update
  • ‘With Science, We Can Feed the World of 9.7 Billion by 2050′     |     
  • WHO warns of severe disruptions to health services for funding cuts     |     
  • ICJ hears Sudan’s case accusing UAE of ‘complicity in genocide’     |     
  • Bombardment, deprivation and displacement continue in Gaza     |     
  • Aged and Alone: The hidden pains in old age homes     |     

ভারতের জনগণের উদ্দেশে ১৪৫ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-12-06, 9:17pm

ertretetert-8638af5b91334c30aebeaed40e189e621733498239.jpg




ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দেশটির জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ১৪৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা এমন এক সংকটপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছি, যখন ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শোচনীয় অবস্থায় এবং কিছু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমাগত উসকানি এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাইছে। ভারতের জনগণ ও ভারত সরকারকে আমরা কখনোই এক করে দেখি না।

আমরা জানি, ভারতের জনগণও হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করে তার পতন ঘটিয়েছি। জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সময় আপনারা আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনাদের আর আপনাদের আন্দোলনে আমাদের সংহতি প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনেক দিনের।

সাম্প্রদায়িকতাকে ভারতীয় উপমহাদেশের বড় সমস্যা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে বিভাজন ঘটায়, ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি করে বিভেদ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং জনজীবনের আরও অনেক জলজ্যান্ত সমস্যা আড়াল করার জন্য উপমহাদেশের প্রত্যেক শাসকগোষ্ঠীই সাম্প্রদায়িকতার হাতিয়ার কাজে লাগিয়েছে। তারা এই কৌশল খাটিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু উভয় জনগোষ্ঠীর ভোট পাওয়াটা নিশ্চিত করতে চায়। বিশেষত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলার ঘটনা বারবার ঘটতে দেখা যায়।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশব্যাপী হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, জমি দখল, মন্দির ভাঙচুর আর হতাহতের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর সারা দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর মন্দিরে মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এবার গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় অনেক রাজনৈতিক দল হিন্দু ঘরবাড়ি ও মন্দির পাহারায় এগিয়ে আসে এবং সম্প্রীতির নতুন নজির স্থাপন করে। এ ছাড়া ভারতের জাতীয় পতাকা মাড়ানোর ঘটনায়ও এ দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিবৃতিদাতারা বলেন, আমরা দেখতে পেলাম, ভারতের অনেক সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে আসল তথ্য প্রচার করেনি, এখনও করছে না। যেমন: ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটের একটি বাণিজ্যিক পরিবহনের এক বাস গত ৩০ নভেম্বর দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাসটি সড়কের পাশে একটি ভ্যানে ধাক্কা দেয়। ভারতের একটি সংবাদমাধ্যম এই দুর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা বলে প্রচার করে। সেই প্রচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আক্রমণ হয়, বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়।

এ ঘটনায় ভারত সরকার দুঃখ প্রকাশ করে । কিন্তু এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণা বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ তারা নেননি। আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনা যথাযথ দেখানো হোক। এ ধরনের প্রচারণা থেকে যে কোনো দেশেই লাভবান হয় সাম্প্রদায়িক শক্তি, লাভবান হয় শাসকগোষ্ঠী। এরা সাম্প্রদায়িক মনোভাব কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় বসতে চায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার হওয়ার পর ভারত সরকার যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তা আমাদের অবাক করেছে। তিনি ভারতের নাগরিক নন। তার বিরুদ্ধে ইসকনের অভ্যন্তরেই অভিযোগ ছিল এবং সেই প্রাতিষ্ঠানিক তদন্ত প্রক্রিয়াকে চিন্ময় বাধাগ্রস্ত করে উল্টো ইসকনের বিরুদ্ধেই মামলা করেছিলেন। সে কারণে ইসকন তাকে বহিষ্কার করে। চিন্ময় কৃষ্ণের বিচার পাওয়ার অধিকারকে আমরা সমর্থন করি, সেটা সবারই আছে। কিন্তু ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে তড়িঘড়ি করে তার পক্ষে বিবৃতি দিলো, তা বিস্ময়কর।

তাকে আদালতে উপস্থিত করার দিন ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়। এ দেশের জনমানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় এই ঘটনার অজুহাতে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা বলতে চাই, হিন্দুদের কিছু ধর্মীয় সংগঠন সমগ্র হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। হিন্দু সম্প্রদায় থেকে অনেকেই এ ধরনের সাম্প্রদায়িক প্রচারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। সর্বশেষ ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আক্রমণের বিরুদ্ধেও হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে আলাদা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এসব বিক্ষোভে এ দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীও বিপুল সংখ্যায় অংশ নিয়েছেন।

বিবৃতিদাতারা বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠী বরাবরই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং সকল ধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভূমিকা উজ্জ্বল। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানেও হিন্দু জনসাধারণের অনেকেই লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন, প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। অনেক ভারতীয় প্রচারমাধ্যম এই গণ-অভ্যুত্থানকে ইসলামি মৌলবাদের বিজয় বলে অভিহিত করেছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। লড়াইয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা বাঁধনটা এ দেশে এখনও অটুট আছে। এ দেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নেই এমন নয়, কিন্তু তাবত জনগোষ্ঠীর ঐক্যই তা রোধ করার একমাত্র উপায়।

আমাদের দুই দেশের জনগণের সমস্যার গোড়ায় একই জিনিস। এই সমস্যার সমাধান সাম্প্রদায়িক সংঘাতে বা সংঘর্ষে পাওয়া যাবে না এবং হিন্দু-মুসলমান উত্তেজনায়ও এর সমাধান নিহিত নেই। সাধারণ জনগণের জীবন-সংকট বিচার করলে দুই দেশের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই।

ভারতের নাগরিকদের উদ্দেশে বিবৃতিদাতারা বলেন, আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা আর শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব। আপনারাও আপনাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। আপনাদের দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, গণ-অভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আকাঙ্ক্ষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে আপনারা এই চক্রান্ত প্রতিহত করবেন। এ লড়াই ভারতের বৃহৎ পুঁজির শোষণ-লুণ্ঠন আর নিপীড়ন-নির্যাতন-আধিপত্যের বিরুদ্ধে উভয় দেশের জনগণের নিরন্তর লড়াই। বিভেদ, বিদ্বেষ আর ধর্মকেন্দ্রিক স্বার্থান্বেষী চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এই লড়াই এগিয়ে যাবে, এই প্রত্যাশা আমরা করি। এই লড়াইয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত জয়ী হব।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন: আনু মুহাম্মদ, সলিমুল্লাহ খান, সাঈদ ফেরদৌস, হারুন-অর-রশীদ, স্বাধীন সেন, গীতি আরা নাসরীন, ফাহমিদুল হক, কামরুল হাসান মামুন, তুহিন ওয়াদুদ, সামিনা লুৎফা, মোশরেফা মিশু, সীমা দত্ত, আলতাফ পারভেজ, কল্লোল মোস্তফা, আশরাফ কায়সার, মাহা মীর্জা, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানজুর আল-মতিন, সায়ান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী প্রমুখ। সময় সংবাদ