News update
  • Bangladesh earthquake death toll rises to 10; scores injured     |     
  • CA for Armed Forces' efficient role to ensure smooth, festive polls     |     
  • Tarique Rahman calls for urgent disaster preparedness after quake     |     
  • UN Unveils UN80 Action Plan to Drive System-Wide Reforms     |     
  • Guterres Urges G20 to Show Leadership and Vision in SA     |     

'অপারেশন ডেভিল হান্ট' কীভাবে চলছে, গ্রেপ্তার হচ্ছেন কারা?

বিবিসি বাংলা খবর 2025-02-14, 11:23am

img_20250214_112114-4004e466949a8322b12fdf228a8d29451739510639.png




বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের দাবির মুখে শুরু করা 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' নামের বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে আলোচিত এ অভিযানের উদ্দেশ্য কী এবং সারাদেশে কারা আটক হচ্ছেন সেটি নিয়ে চলছে আলোচনা, দেখা যাচ্ছে কৌতূহল।

দেশব্যাপী এ বিশেষ অভিযান শুরুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয় গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা এবং ভাঙচুর এবং সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উপর প্রাণঘাতী আক্রমণ ঘটনায়। ওই হামলায় গুরুতর আহত একজন বুধবার মারা গেছেন।

চলমান বিশেষ অভিযানে দেশের একক জেলা হিসেবে গাজীপুরেই সবচেয়ে বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। অভিযানের পাঁচ দিনে এ সংখ্যা তিনশ বত্রিশ জন। মঙ্গলবার গাজীপুর আদালত চত্বরে গিয়ে দেখা যায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা ভিড় করেছেন। উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এদের স্বজনদের অনেককে সাদা পোশাক পরিহিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গভীর রাতে আটক করে নিয়ে এসেছে।

গাজীপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোমিনউদ্দিন ভান্ডারি। সত্তরোর্ধ্ব ওই নেতাকে অভিযানের শুরুতেই আটক করা হয়। স্বজনদের দাবি তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত এবং দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন।

অভিযানে আটক করে আদালতে হাজির করা হলে তাকে দুই দিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছে। তার পরিবার বলছে আইনি লড়াই চালানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা কারণ হামলার ভয়ে আইনজীবীরা পক্ষে দাঁড়াতে শঙ্কিত।

"সে পাঁচ বছর ধরে অসুস্থ। বিছনায় পড়া। তার নামটা দিয়া রাখছে। ৭৫-৮০ বছর বয়স সে রাজনীতি, মারামারি কী বুঝবে? তার জান নিয়েইতো টানাটানি। সে কী মারামারি করবে, শুধু আওয়ামী লীগ করার কারণে ধরছে। আমরা চাই যারা অপরাধ করছে তাদের শাস্তি হোক। কিন্তু যারা নিরপরাধ তাদের কেন ধরা হবে, যারা অন্যায় করে নাই তাদের কেন শাস্তি হবে?" প্রশ্ন মি. ভান্ডারির স্বজনদের।

গাজীপুরে পরিচয় গোপন রেখে একজন তরুণী জানান তার মাকেও মধ্যরাতে আটক করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন কোনও ধরনের রাজনীতির সঙ্গে তার পরিবার যুক্ত নয়। তবে তাদের বাড়ি সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়ি যে এলাকায় সেখানে।

তরুণী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "যারা রাতের বেলায় বাড়ি ভাঙচুর করতে গিয়েছিল তাদের কাউকেতো আটক করা হয় নাই। তাদের কোনো দোষ নাই?"

গাজীপুরে অভিযান প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বিবিসি বাংলাকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের অভিযান চলছে।

"যেভাবে ইন্সট্রাকশনটা আসছে আমরা সেভাবেই আমাদের কার্যক্রমটা পরিচালনা করছি। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে এরকম যে কেউ হোক সেটা আমাদের গোয়েন্দা তথ্যে আমরা যা পাই আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো," বলছিলেন মি. সাদেক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' শুরুর পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে তিন হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার এবং বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি অপারেশন ডেভিল হান্টে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরাই প্রধান টার্গেট হয়েছে।

এ অভিযান প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বিবিসি বাংলাকে বলেন, "যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে আমরা বিগত দিনেও স্বৈরাচার সরকারের আমলে যেমন দেখেছি বয়স বিবেচনা করা হয়নি, তারপর শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনা করা হয়নি। ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এরকম অভিযোগও কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। এটি কোনোভাবে কাম্য না।"

মি. খান বলছেন, "এই অপারেশনের মধ্য দিয়ে মব জাস্টিস বন্ধ হবে বা চুরি ডাকাতি ছিনতাই যেটা দেখছি সেটা কমে আসবে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। বরং এই অভিযানের লক্ষ্য হয়তো ভিন্নমতের উপর চড়াও হওয়া এরকমই একটি বিষয় কিন্তু মানুষের মধ্যে আলোচনা চলছে।"

৫ই ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য কেন্দ্র করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার পর থেকে সারাদেশে নতুন করে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর লুটপাট শুরু হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালানো হয়। মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র হামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের বেশকজ গুরুতর আহত হন। পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতারা গাজীপুরে দিনভর বিক্ষোভ করেন এবং গাজীপুরসহ সারাদেশে অভিযানের দাবি তোলেন। ছাত্র সমন্বয়কদের দাবির পর সরকার 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' শুরু করে।

এ অভিযানের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উপদেষ্টা যে ব্যাখ্য দিয়েছে তাতে বোঝা যায় ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী তারা এ অভিযান পরিচালনা করছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন দেশের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে যারা তারাই মূল টার্গেট।

"ডেভিল মানে কী? শয়তানরাইতো টার্গেট এইখানটায়। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। এই ক্ষেত্রে যারা আইন অমান্য করে। দুস্কৃতিকারী এবং সন্ত্রাসী তারাই এর টার্গেট," বলেন মি. চৌধুরী।

সারাদেশে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা বেড়েছে। মব জাস্টিসের নামে দেশে বিশৃঙ্খলাও চলছে। বত্রিশ নম্বর গুঁড়িয়ে দেয়ার পর একটা পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা দেখা যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ অভিযান কেমন হওয়া প্রয়োজন সেটি নিয়ে মি. খান বলেন, "সমাজে যারা অপরাধ করছেন, যারা মব জাস্টিসের নামে মানুষের ঘরবাড়ি আক্রান্ত করছেন, মানুষকে হত্যা করছেন বা চাঁদাবাজি করছেন তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযানটা পরিচালিত হওয়া উচিৎ। সাম্প্রতিককালে এই সাতদিনের পরিসংখ্যানটা যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে দেখবো যে আসলে বিগত সরকারের মানুষই অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এটার মধ্য দিয়ে আসলে এটার নিরপেক্ষ যে চরিত্র থাকা দরকার সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে মানুষ।"

'অপারেশন ডেভিল হান্ট-'এ পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও সহযোগিতার ভূমিকায় রয়েছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বিবিসিকে জানিয়েছে সরকার যেভাবে সহায়তা চাইছে সেভাবেই তারা কাজ করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' নামে এই অভিযান ঠিক কতদিন ধরে চলবে সেটি সুনির্দিষ্ট করেনি সরকার।