অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাসে নানা সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও নিত্যপণ্যের বাজারে মিলছে না স্বস্তি। আগের মতোই দামের উত্তাপ প্রতিদিন ছুঁয়ে যাচ্ছে ভোক্তাদের। উল্লেখযোগ্যহারে বেড়ে গেছে অতি প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দাম। সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, পতিত সরকারের একটি পক্ষ এখনো মূল্য বাড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ভোক্তার আক্ষেপ নতুন নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগে আশা বুনেছিল সাধারণ মানুষ। তবে তিন মাসেও কমেনি নিত্যপণ্যের দাম। অনেকে বলছেন, মানুষকে স্বস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ কম সরকারের। আবার কেউ কেউ বলছেন, বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারকে আরও সময় দেয়া দরকার।
হাকিম হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকারের হানিমুন পিরিয়ড শেষ। এখন তো সংস্কার দৃশ্যমান হওয়া দরকার। বাজারে নিত্যপণ্যের অসহনীয় দাম কমানোর দিকে এখন নজর দেয়া জরুরি।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত তিন মাস ধরে চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগি ও আলুর দাম বাড়ছে। অক্টোবরের শুরুর দিকে সবজির বাজারেও লাগে বাড়তি দামের হাওয়া। তবে নভেম্বরে এসে কাঁচামরিচসহ কিছু পণ্যের দাম কমছে।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ডিম, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব না পড়ায় ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি বাড়িয়ে দেয় সরকারি সংস্থাগুলো। এদিকে, কার্ড ছাড়াও মিলছে টিসিবির পণ্য। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে কৃষিপণ্যের খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রমের পরিসর বাড়ানোর কথা জানিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর।
সরকারি এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রেজা আহমেদ খান বলেন, বাজারে ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও খুলনাতে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী এর পরিসর আরও বাড়ানো হবে।
বাজারে এখনও সিন্ডিকেটের প্রভাব আছে উল্লেখ করে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, পতিত সরকারের কেউ কেউ বাজার অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কারসাজি ঠেকাতে এটি খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া উদ্যোগে নতুনত্ব দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কতিপয় বড় ব্যবসায়ীর প্রভাব রয়েছে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায়। এটি ভাঙতে হবে। বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড়ের বিষয়টি বাজারে তেমন প্রভাব ফেলবে না। বাজারে স্বস্তি দিতে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির পরিসর না বাড়িয়ে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো দরকার।
এক্ষেত্রে বেসরকারিভাবে আগ্রহ না থাকায় সরকারকেই পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে বলে অভিমত তার।